এক ঘরে হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ

এক ঘরে হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংঙ্কট আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরেই দিনি দিন তাতিয়ে উঠছে। প্রায় সব দলই বিভিন্ন রকম জোট করে নির্বাচনে নিজেদের ভূমিকা কি হবে তা জানিয়ে দিয়েছেন।

জাতীয় ঐক্য থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিত্র সংগঠনও এই  একদলীয় শাসনের অবসান চান। সর্বশেষ গতকাল চরমোনাই পীরের মহাসমাবেশ থেকেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য কঠিন বার্তা দেয়া হয়েছে সরকারকে।

গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদকিদের জানিয়েছেন তার দল বামদের সাথে ঐক্য চান। তিনি বেশ কয়েক বার সিপিবির নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। জনমনে একটা অশঙ্কা তৈরি হয়েছিল এই ভেবে যে, শেষ পর্যন্ত হয়তো লীগ পন্থি বামদলগুলো সরকারের একতরফা নির্বাচনের প্রচেষ্টাকে কৌশলে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিবেন। কিন্তু গতকালের সমাবেশে সিবিপির প্রধান মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জনগনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনের অপতৎপরতা রুখে দাঁড়ান, দুঃশাসনের অবসান ও বিকল্প গড়ার সংগ্রামকে অগ্রসর করুন।  দুঃশাসনের অবসান ঘটানোর জন্য দেশবাসীকে আহবান জানান তিনি।

সমাবেশে আরও বলেন দুঃশাসন হঠাও, গণতন্ত্র বাঁচাও, দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার ডাক দেন। মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দুঃশসনের অবসান ঘটানো জরুরি। তিনি দুঃশাসনের অবসান ও বিকল্প গড়ার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবান জানান।

তিনি একথাও বলেন বর্তমান আওয়ামী সরকার প্রায় ১০ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় আছে। তারা ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু তাদের সরকারের আমলে ভাত ও ভোটের অধিকার খর্বিত হয়েছে ন্যাক্কারজনকভাবে।

১০ টাকা কেজি’ চাল দেয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হয়নি। উন্নয়নের নামে শাসকদলের সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত দেশ। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ রুদ্ধ। গুম, খুন, জেল, জুলুম, দমন-পীড়নের কর্তৃত্ববাদী স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে পিষ্ট দেশ। খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন বীভৎস পর্যায়ে পৌঁছেছে। সড়কে মুত্যুর মিছিল চলছে। বেকারত্বে যন্ত্রণায় নিষ্পেষিত হচ্ছে কোটি কোটি যুবক। মালিকদের খুশি করার জন্য গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবি উপেক্ষিত। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। মানুষের সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার সরকারের ইচ্ছাধীন করা হয়েছে। প্রশাসন ও দলীয় ক্যাডারবাহিনীর মাধ্যমে জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে। এক অসহনীয় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে দেশের মানুষ।

তিনি বলেন, এ সরকার মানুষের মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। এ আইনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের লুটপাট, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠকে গলা টিপে দাবিয়ে দেয়া হবে। জেল-জরিমানার ভয় দেখিয়ে সংবাদপত্রকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হবে। এ আইন বিরোধী পক্ষকে দমন করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুমোদন না করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহবান জানান।

তিনি বলেন, স্বৈরশাসকরা নির্বাচন বিষয়টাকে প্রহসনে পরিণত করেছিল। নব্বই পরবর্তী সরকারগুলোও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি। বর্তমান সরকার আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে নির্বাচনকে ‘ঐন্দ্রজালিক প্রহসনে’ পরিণত করেছে।আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একতরফা নির্বাচনে পরিণত করার জন্য যে অপচেষ্টা সরকার শুরু করেছে তাকে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।

তিনি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ, রাজনৈতিক দল ও সমাজের অপরাপর অংশের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া, জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুসহ টাকার খেলা ও পেশিশক্তিনির্ভর বিদ্যমান গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের দাবি জানান।

এদিকে ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ জানিয়ে দিয়েছে এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে না। অনেকেরই আশঙ্কা ছিল হয়তো সিপিবি শেষ বেলায় আওয়ামী লীগের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু সিপিবি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে তারা এই সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে। এদিকে সরকারের সাথে যে সব দল আছেন তারাও যে কোন সময়ে ভোল পাল্টাতে পারেন। জাতীয় পার্টী আর সরকারের পোষ্য বিরোধী দল হয়ে থাকতে চায় না। এরশাদ অনেক আগেই এমন ঘোষণা দিয়েছেন। অবশ্য শেষ বেলায় কি ঘটবে তা আগাম বলা যায় না।

অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে এই সরারের সাথে যারা আছেন, জনমনে তাদের প্রতি আস্থার সংঙ্কট আছে। অন্যদিকে যে সব দল সরকারের বাইরে আছেন সবাই সরকার বিরোধী অবস্থানে আছেন বিভিন্ন রকম জোটের ব্যানারে মিলিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সাধঅরণ সম্পাদক জানিয়েছিল, লীগকে বাদ দিয়ে কোন জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। তিনি কোন জোটই এখন আওয়ামী লীগের সাথে নাই। সরাসরি বিরোধী অবস্থানে চলে গেছেন। এমনকি লীগের সাংষ্কৃতিক শক্তি মনে করা হয় যে সিপিবিকে তারাও এই সরকারের অধীনে নির্বাচন চান না। কিছু মিডিয়া ও প্রশাসন ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবন্ধ অবস্থান আছে। অন্য দিকে প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে থাকায় তৈরি হয়েছে নতুন সংঙ্কট। তাকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আবার তাকে জেল থেকে ছাড়া হলে বিএনপির জনজোয়ার ঠেকানো যাবে না। এটা লীগের জন্য উভয় সংঙ্কট তৈরি করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয় এই এক ঘরে আওয়ামী লীগ কি ভাবে এই সংকট সমাধান করেন।