প্রতিবন্ধীদের কাঁধে ভর দিয়ে ‘কোটা বহাল’ চাইছে না তো আন্দোলনকারীরা?

প্রতিবন্ধীদের কাঁধে ভর দিয়ে ‘কোটা বহাল’ চাইছে না তো আন্দোলনকারীরা?

তৃতীয় দিনের মতো ঢিলেঢালাভাবেই চলছে ‘কোটা পুনর্বাহাল’র দাবি। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সংগঠনের গোটা কয়েক নেতাকর্মী গত ৩ অক্টোবর থেকে ‘কোটা বাতিল’র রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন।  গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি নয় ঘণ্টার জন্য শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছিলো আন্দোনকারীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রেখে পুনরায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা।

আজ সকাল থেকে ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে প্রতিবন্ধী কোটা পুনর্বহাল এবং পূর্বতন ১% থেকে বাড়িয়ে কোটার হার ৫% করার দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৫টায় শাহবাগ মোড়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে হবে বলেও ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ-এর যুগ্ম-আহ্বায়ক : আরিফ হোসাইন আরিফ বলেন, সারা বাংলাদেশে ১০% প্রতিবন্ধী আছে, এখানে তাদের জন্য ১% কোনোভাবেই যৌক্তিক না। প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫% কোটার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর প্রতিবন্ধী কোটা বহাল রাখার ক্ষেত্রে কোনও শর্তারোপ করা যাবে না।

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ-এর আহ্বায়ক আলী হোসেন বলেন, ‘আমাদের জন্য এক শতাংশ কোটা রাখার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আমাদের কোটা রাখার কথা বলেছিলেন। এক শতাংশ কোটা রেখে বাকি সব কোটা বাদ দেওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু গতকাল যে প্রজ্ঞাপন এসেছে, সেখানে আমাদের কোটার ব্যাপারে কোনও সুস্পষ্ট বক্তব্য আসেনি৷ এই প্রজ্ঞাপন আমরা মানি না৷ আমাদের কোটা বহাল রাখতে হবে৷ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো।’

বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’র ‍মুখপাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত আপনাদের (প্রতিবন্ধীদের) দাবি আদায় করা হবে না, ততোদিন পর্যন্ত আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা মন্ত্রীসভার এমন ‘অমানবিক’ প্রজ্ঞাপন মানি না।”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিবন্ধীদের সাথে একত্মতা প্রকাশ করে ‘কোটা বহাল’র করার একটা চাল চালছে কিনা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংগঠনগুলো। কেননা, ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনের সময়ও প্রতিবন্ধীদের কোটা বহাল রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকার নিজের মনগড়া দাবি তৈরি করে ‘কোটা সংস্কার’ না করে বাতিল করেন এই নতুন সমস্যার সৃষ্টি করে। তবে প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার করে কিংবা তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নিজেদের ফায়দা লুটার সিদ্ধান্ত হবে ভুল। মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০ শতাংশ ছিল বৈষম্যমূলক। প্রতিবন্ধী কিংবা নারী কিংবা আদিবাসীদের কোটাতে কোন বৈষম্য ছিলনা। পূর্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। কিন্তু সরকারই কোটা বাতিল করে সেটাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করে।