মাত্র তিন দিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, মিনিমাম পয়েন্টে তিনি বামদের সাথে ঐক্য করতে চান। তখন থেকে নির্বাচন নিয়ে একটি ধোঁয়াশার তৈরি হয়েছিল। যাদেরকে ওবায়দুল কাদের নির্বাচনে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা আসলে কারা? তার ছিল, সিপিবি নেতৃত্বাধীন আটদলীয় বাম জোট। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তারকারী বাম ঐক্য ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ নয়। তারা বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধিনে নির্বাচনে যাবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন তারা হতে দেবে না। এই জোট জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রহসনের ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারির মত আরেকটি নির্বাচন হতে দেবে না। বাম গণতান্ত্রিক জোট জনগনকে সাথে নিয়ে মানুষের ভোটারিদার ফিরিয়ে আনবে।
তিনি আরও বলেন, “দেশের এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি, যা নির্বাচনে যাওয়ার মত কোন পরিস্থিতি তৈরি হয় নি। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার এক মাস বাকি কিন্তু সরকার এখনো যেভাবে দমন-নিপীড়ন, হয়রানি ও হয়রানিমূলক মামলা গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে তাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কোন একটি সাধারণ গণতান্ত্রিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
এরকম রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়া অসম্ভব বলে তিনি বলেন, “নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা জোট থেকে স্পষ্ট করে অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরেছি।”
বিষয়গুলো হলো :
প্রথমত, বর্তমান সরকারকে শিডিউল ঘোষণা করার আগে সরকারকে পদত্যাগ করে এবং ম্যান্ডেটবিহীন বর্তমান সংসদকে বিলুপ্ত করে একটা নিরপেক্ষ ফলপ্রসূ সরকার গঠন করা। এই জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকারে রূপরেখা, কাঠামো কি হতে পারে সে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা।
দ্বিতীয়ত, একই সাথে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করা দরকার। যে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার গঠনে ব্যর্থ সেই নির্বাচন কমিশন দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করা যাবে এটা কোন মানুষ বিশ্বাস করে না।
তৃতীয়ত, নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। এসকল সামগ্রিক বিষয়ে একটা আমূল পরিবর্তন দরকার।
এই সমস্ত বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট কোন উদ্যোগ ছাড়া একটি যৌক্তিক, অবাধ নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোন পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না।
সরকারকে এসকল বিষয়ে জানাতে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে এই রাজনীতিবিদ বলেন, গত ২০ মে আমরা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় অভিমুখি ঘেরাও কর্মসূচী করেছি। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। আগামী ৭ অক্টোবর দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং ১৪ অক্টোবর সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভ আছে মানুষকে জাগিয়ে তুলার জন্য এবং সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার জন্য আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন করবো।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি :
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাইফুল হক বলেন, বাংলাদেশে আরেকটা একতরফা নির্বাচন করার কোন সুযোগ নাই। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মত একটা ভোটারবিহীন নির্বাচনের নাটক আরেকবার দেশের মানুষ বরদাস্ত করবে না। আমরা বাম জোট একদিকে এই দাবিগুলো নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে আছি।
জোট থেকে নির্বাচন প্রস্তুতি, প্রার্থী বাছাই, গণসংযোগ ইত্যাদি বিষয়গুলো অক্টোবরের মাঝামাঝি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসবে বলে ধারণা করছেন তিনি। নভেম্বর-ডিসেম্বরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনে যাবে কি না?
বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নুর মুখেও শোনা যায় একই কথা। তিনি বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এই সব দাবিগুলো সরকার কতটুকু মানবে কি মানবে না সে সময়ের পরিস্থিতির উপর আমরা বিবেচনা করব আমরা নির্বাচন করব না বর্জন করিব আমরা জোট থেকে সিদ্ধান্ত নিব।
সুতরাং এটা পরিস্কার যে, ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ আওয়ামী লীগের অধিনে নির্বাচনে যাচ্ছে না।