আশঙ্কাই সত্যি হল। ‘কোটা বাতিল’র পেছনে যে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে তা ধারণা করেছিল অনেকেই। আর সে আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উস্কে দেয়া হলো আরেকবার। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বৈষম্যমূলক ৩০% কোটার দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করে রেখেছে গোটা কয়েক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আজ এই অবরোধের দ্বিতীয় দিন। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৪০-৫০ জন নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এই অবস্থান কর্মসূচিতে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মানুষ একটু কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
শাহবাগের চার রাস্তার মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে আন্দোলনকারীরা বসে আছেন। শাহবাগ থেকে কাঁটাবন ও মৎস্য ভবনগামী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শাহবাগ দিয়ে কোনো গাড়ি যেতে পারছে না, গাড়িগুলো হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে যাচ্ছে।
৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল না করা পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত থাকবে বলে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন ঘোষণা দেন। কোটা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত জামায়াত-শিবিরের কাছে পরাজিত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে মো. আল মামুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা কোটা বাতিল মানতে পারছি না। এই সিদ্ধান্ত জামায়াত-শিবিরের কাছে পরাজিত হওয়ার সিদ্ধান্ত। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা থাকতে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান হতে দেব না।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোটা বাতিলকে কেন্দ্র করে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেছেন।
দাবিগুলো হলো :
১. ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিসিএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
৪. মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
৫. স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার ও তাদের বংশধরদের চিহ্নিত করে সরকারি সব চাকরি থেকে বহিষ্কার, নাগরিকত্ব বাতিল ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরত নিতে হবে।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে
এদিকে তাদের এই দাবির পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এ সময় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “কতটুকু কোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, এটা বোঝাতে পারলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের দাবি মেনে নেবেন। আপনারা আমাদের আদর্শিক সহযোদ্ধা। আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারা আন্দোলন করুন, তবে সড়ক অবরোধ করে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলবেন না। আপনারা যৌক্তিক অনুপাত তুলে ধরুন।”
প্রসঙ্গত, বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা বহাল রাখতে হলে আন্দোলন করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে রাস্তায় নামেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। এই আন্দোলনকে সরলভাবে দেখতে নারাজ দেশের মানুষ। ‘কোটা বহাল’ পক্ষের আন্দোলনকারীরা, সরকারের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়াকে ‘জামাত-শিবিরের কাছে পরাজয়’ ট্যাগ লাগিয়ে পুনরায় সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে।
‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও নতুন এই আন্দোলন এবং সরকারের ‘কোটা বহালের ইঙ্গিতকে অন্যচোখেই দেখছেন। ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র আহ্বায়ক নুরুল হক নুর তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ছাত্রসমাজের সাথে কোন ধরণের প্রহসন/ নাটক করা হলে সাধারণ ছাত্ররা ১ বার নয় প্রয়োজনে ১০০০ বার রাজপথে নামবে। এখন দেখার বিষয়, কোটা’র জল কতদূর গড়ায়?