সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র মানববন্ধন, তিন দফা দাবি

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র মানববন্ধন, তিন দফা দাবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রি শহিদুল ইসলামসহ কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও দায়েরকৃত সকল মিথ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ বিকেল সাড়ে চারটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

মানববন্ধনে আগামীকাল জাতীয় সংসদে মন্ত্রীপরিষদ সভায় সুপারিশকৃত কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে পাঁচদফার আলোকে কোটা সংস্কার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের গ্রেফতারকৃত শিক্ষক মাইদুল ইসলাম ও আলোকচিত্রী শহিদুল ইসলামে মুক্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুরুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুশাদ ফরিদি বলেন, ছাত্ররা কোটা বাতিল চায়নি; চেয়েছে যৌক্তিক সংস্কার। এখন কোটা বাতিল করে দেয়ার বলে ছাত্রদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়া আসছে। সরকার ভীতির মধ্যে আছে জানিয়ে রুশাদ ফরিদি বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও আলোকচিত্রী শহিদুল ইসলামের গ্রেফতার প্রমাণ করে সরকারের মহলে ভীতির সঞ্চার ঘটেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে যৌক্তিক মেনে নিয়েছেন। মাইদুল সাহেবও তো এর বাইরে যাননি। তবে তিনি কেন আজ জেলে?” প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে গত ২৩ জুলাই মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার উদ্দিন। এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলে গত সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন মাইদুল ইসলাম। তবে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালত। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী (দক্ষতা ও শৃঙ্খলা) সংবিধির ১৫ (এ) ধারা অনুযায়ী তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সদ্য প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘কৃষ্ণগহ্বর’-র আইন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইনের শব্দগুলো সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। এই আইনে বলা হয়েছে ‘অপরাধ হইতেছে সন্দেহে গ্রেফতার করা যাইবে’, তবে আমাকে বলুন, কাকে গ্রেফতার করা যাবে না?

উল্লেখ্য, এই আইনের ৪৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুলিশ অফিসারের বিশ্বাস করেন যে কোনো স্থানে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে তবে তিনি অনুরূপ বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ করে উক্ত স্থানে উপস্থাপিত যে কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি কিংবা উক্ত স্থানে উপস্থিত কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করেছেন বা করছেন বলে সন্দেহ হলে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। এছাড়া এই আইনে এতে পুলিশকে যেকোনো জায়গায় প্রবেশ, যেকোনো কম্পিউটার ব্যবস্থায় তল্লাশি চালানো, যেকোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও সার্ভার জব্দ করা, যেকোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি এবং শুধু সন্দেহবশত যে কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক খান বলেন, গ্রেফতারকৃত সকল ছাত্রদের মুক্তি দিতে হবে এবং যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের পাশে দাঁড়ানো সকল শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদেরও মুক্তি দিতে হবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিল সম্বন্ধে তিনি বলেন, আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে কোটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করিনি; আমরা কোটার একটা যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছি।
পরে তিনি মানববন্ধন থেকে তিনদফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো :
১. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেফতারকৃত সকল ছাত্র-শিক্ষকদের অবিলম্বে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে এবং সকল মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
২. আমাদের ওপর হামলাকারী হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।
৩. পাঁচদফার আলোকে কোটার যৌক্তিক একটি সংস্কার করতে হবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মশিউর রহমান, রাতুল সরকার, মুহাম্মদ ফাহিমসহ প্রমুখ