স্যালুট মুশফিক!

স্যালুট মুশফিক!

সামর্থ্য বিবেচনায় তিনি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। মাঝে হাথুরু তার ক্ষুরধার মস্তিষ্ক প্রমাণের প্রয়াশ হিসাবে মুশফিকের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর পারিপাশ্বিক চাপে কিছুটা পথ হারিয়েছিলেন। কিন্তু হাথুরুর বিদায়ের পর থেকেই যেন নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন যেন।

চলতি এশিয়া কাপে মুশফিকের কীর্তি অক্ষয় হয়ে থাকবে এটা নিশ্চিন্ত মনেই বলা যায়। শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে আশ্চর্য নাজাকাতের সাথে খেলা দুটো ইনিংসের জন্যই শুধু না, পুরো সময় জুড়ে ক্রিকেটিয় সামর্থের সাথে মানসিক, শারীরিক সামর্থ্যের যে অনুপম নৈপুণ্য দেখিয়েছেন সেটি কোনো আলফাজেই বয়ান যোগ্য না।

লঙ্কার বিপক্ষে ইনিংসটি খেলেছিলেন একাধিক ব্যাথানাশক’র সাহায্য নিয়ে। ব্যাথানাশক নিয়ে টপ অর্ডারের কৃতিত্বে! ইনিংসের শুরুতেই মাঠে নেমে ক্রিজে ছিলেন ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। ব্যথা সয়ে তার ব্যাটকে পরিণত করেছিলেন খোলা তরবারিতে। যাতে কচুকাটা হয়েছিল লঙ্কান বোলাররা। আমিরাতের ফালাকে আফতাবের জানান অন্য যে কোনো জায়গার চেয়ে বেশি। সে আফতাবের তীব্র কিরণ সয়ে পুরো ইনিংস ব্যাট করার পর আর শরীরে কুলোয় নি। তাই গ্লাভস হাতে আর দাড়াননি উইকেটের পিছনে।

অঘোষিত সেমিতে পরিণত হওয়া পাকিস্তানের বিপক্ষের ম্যাচটিতেও আরো একবার পুরো কায়ানাত দেখল মুশফিক নামের বিস্ময়কে। ইনিংসের মাঝপথেই পায়ের অস্বস্তিটা বোঝা যাচ্ছিল বেশ। সেটিকে বাঁধা হয়ে দাড়াতে না দিয়ে আরো একবার উপহার দিলেন অসাধারণ এক ইনিংস। দুর্ভাগ্য এবার মাত্র এক রানের জন্য দেখা পাননি প্রাপ্য সেঞ্চুরিটির। সেঞ্চুরি না পেলেও ইনিংসটির মাহাত্ম্য সামান্যও কমছে না। তার কার্যকর ৯৯ রানের ইনিংসের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ পেয়েছে লড়াই করার পুঁজি।

অন্য কেউ হলে কি করতেন বলা মুশকিল, কিন্তু মুশফিক যেন অন্য ধাতুতে গড়া। এবার গ্লাভস হাতে না নিতে পারাটাকে যেন অন্যায় জ্ঞান করলেন। গ্লাভস হাতেই নামলেন ব্যাট হাতে পুরো ইনিংসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি সময় কাটানোর পরেও। শুধু যে নামার জন্যই নামেননি, সেটির প্রমাণ রেখেছেন অসাধারণ ক্যাচেও।

অনেকেই যেখানে আয়েশি ভঙ্গিমায় নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে ড্রেসিংরুমে আয়েশে সময় কাটান সেখানে বিপর্যয়ে দলকে টানার দায়টা যেন স্বেচ্ছায়ই নিজের কাধে তুলে নিয়েছেন তিনি। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে চোখে পড়ার মত নিবেদন নিয়ে নিজের সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দেয়ার পরেও পান থেকেই চুন খসলেই যেন মুশফিক হটাও রব উঠে যায়। মাঠের চাপটা তো খোলা চোখেই দেখা যায়। মুশফিককে যে নিয়ত লড়াই করতে হয় মাঠের বাইরেও। তবু যে আশ্চর্য ধী শক্তি নিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তাতে একটি স্যালুট অনায়াসেই প্রাপ্য লিটল মাস্টারের।