মুশফিক-মোস্তাফিজে ভর করে ফাইনালে বাংলাদেশ

মুশফিক-মোস্তাফিজে ভর করে ফাইনালে বাংলাদেশ

• প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসাবে ৯৯ রানে আউট হলেন মুশফিকুর রহিম
• এশিয়া কাপের সার্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকার আট নাম্বারে উঠে এসেছেন মুশফিক
• পাকিস্তানকে টানা চার ম্যাচ হারালো বাংলাদেশ
• এশিয়া কাপে দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে বাংলাদেশ
• স্কোর : বাংলাদেশ ২৩৯/১০ (মুশফিক ৯৯,মিথুন ৬০); পাকিস্তান ২০২/৯ (ইমাম ৮১; মোস্তাফিজ ৪০-৪, মিরাজ ২৮-২)
• ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : মুশফিকুর রহিম

টস জিতে ব্যাটিং নেয়ার পর টপ অর্ডার ব্যার্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে ফাইনালের স্বপ্ন ফিকে হতে শুরু করে বাংলাদেশের। কিন্তু ঠিক লঙ্কা ম্যাচের দেজা ভ্যু ফিরিয়ে এনে ১৪৪ রানে জুটি গড়ে বাংলাদেশকে লড়াই করা ভীত গড়ে দেন মুশফিক-মিথুন। ২৪০ রানের জওয়াবে বাংলাদেশের বোলারদের অসাধারণ বোলিংয়ে ২০২ রানেই থেমে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। ৪০ রানে ৪ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। ৩৭ রানের এ জয়ে দ্বিতীয়বারের মত এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের।

পাঁচ বলের জন্য দুবাই ভ্রমণ!

তিনি ঠিক কোন বিবেচনায় টুর্নামেন্টের মাঝপথে দুবাইয়ে যাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিলেন তার জওয়াব বোধকরি কারো কাছেই নেই। বুঝতেই পারছেন সৌম্য সরকারের কথা বলছি। তিনি রান করে দলের জন্য ভূমিকা রাখবেন এমন ভাবাটা এখন মস্ত এক ভ্রমে পরিণত হয়েছে। তিনি সেই ভ্রম ভাঙ্গানোর চেষ্টাও অবশ্য করেননি। আবুধাবির কাঠফাটা রোদে মাঠে থাকার চেয়ে ড্রেসিং রুমের এসির বাতাসকেই শ্রেয় মনে করে মাত্র পাঁচ বল খেলেই ধরেছেন প্যাভিলিয়নের পথ। দলের কাজে আসুক না আসুক, বিনা খরচে সৌম্যের দুবাই ভ্রমণটা তো হয়ে গেল!

ফাটকা কে কৌশল বলার চাতুরতা এক ম্যাচেই শেষ!

সৌম্যের সাথে জরুরি ভিত্তিতে দুবাইয়ের পথ ধরেছিলেন ইমরুলও। আফগানদের বিপক্ষে তাকে ছয়ে নামিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দেয়া ম্যানেজমেন্ট সেটিকে দাবি করেছিল কৌশল হিসাবেই। কাজে লেগে যাওয়ায় ফাটকাই কৌশল হয়ে গেলেও এ পজিশনে তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বিশ্লেষকরা। পাকিস্তান এর বিপক্ষে ম্যাচেই কৌশল এর কুফল দেখা গেল। এক্ষেত্রে ইমরুলকে দায় দেয়ার আগে একবার কৌশল নির্ধারকদের দিকে নজর দেয়া ফরজ। ওপেনিং’র বদলে তিনে খেলানোর চেষ্টার পরে ইমরুল সাফ জানিয়েছিলেন তার অস্বস্তিত কথা। সেটিকে রসিকতাই মনে করেছিলেন বোধহয় কর্তারা। তাই তিন থেকে নামিয়ে ছয়ে পাঠানোর অদ্ভুত চিন্তা মাথায় খেলেছে তাদের। ফলাফল তো এক ম্যাচ পরেই স্পষ্ট।

মিঠুনে আশার আলো

তরুণদের ক্রমাগত ব্যর্থতার মাঝে একমাত্র মুখতালিফ হয়ে আছেন মিঠুন। আউট হবার ধরণে লঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচের দেজা ভ্যু ফিরিয়ে আনলেও ফেরার আগে খেলেছেন একটি কার্যকর ইনিংস। মুশফিকের সাথে তার ১৪৪ রানের জুটিই শেষ পর্যন্ত মান রক্ষা করেছে বাংলাদেশের। মাত্রই ক্যারিয়ারের সূচনা লগ্নে থাকায় আপাতত আউট হবার ধরণটা নিয়ে সমালোচনা না করাই বেহতার। তবে, তিনি যত দ্রুত শিখতে পারবেন; শুধরাতে পারবেন ভুলগুলো ততই মঙ্গল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন বা অনভিজ্ঞের ঘ্রাণ গা থেকে মুছে যায় খুব দ্রুতই।

শুরু আর শেষের মাঝে পার্থক্য শুধু মুশফিক আর মিঠুনই

বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে যদি সাইক্লোনের পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন জুনায়েদ-শাহীনরা তাহলে শেষের দিকে দেখিয়েছেন সেটির আসল রুপ। যার ফলে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার পরেও বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ২৫০ এর আগেই। ক্রমাগত দারুণ লাইন লেংন্থ বজায় রেখে শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের জন্য রান তোলাটা কঠিন করে তুলেছিলেন পাকিস্তানের পেসাররা। বিশেষ করে জুনায়েদ। তার অসাধারণ বোলিং বয়ান করার জন্য কোনো আলফাজই বোধকরি যথেষ্ট না। তাই, মাহমুদুল্লাহ-মাশরাফিরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালেও শেষ ৪৭ বলে ৪৭ এর বেশি রান তোলা সম্ভব হয়নি। উইকেটও হারাতে হয়েছে পাঁচটি।

বোলিংয়ে সেই মাশরাফি ইউনিট

ব্যাটিং ছিল পুরোটাই দুই ‘ম’ এর শো। মুশফিক এবং মিথুন এর ব্যাটে ভর করেই মূলত লড়াই করার মত পুঁজি পায় বাংলাদেশ। কিন্তু বোলিংয়ে চিত্র ছিল সম্পুর্ন ভিন্ন। প্রত্যেক বোলারই রেখেছেন দারুণ অবদান। মিরাজ থেকে শুরু করে মাহমুদুল্লাহ; প্রত্যেকে ছিলেন অসাধারণ। মাহমুদুল্লাহর কথা আলাদা করে উল্লেখ করা ফরজ। সাকিব না থাকায় এমনিতেই বাড়তি চাপ ছিল তার ওপর। চোট পেয়ে মাশরাফিও কোটা পূরণ করতে না পারলে সে বাড়তি দায়িত্বটি নিতে হয় মাহমুদুল্লাকেই। মিতব্যায়ী বোলিং এর সাথে গলার কাটা হয়ে থাকা ইমামকে ফিরিয়ে চমৎকারভাবে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি।

অবশেষে সেই পুরোনো ফিজ

উইন্ডিজ সফরেই আভাস মিলেছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই পুরোনো ছন্দে বহুদিন পর দেখা গেল মোস্তাফিজকে। স্লোয়ার, কাটারসহ সকল মারণাস্ত্রের ব্যবহার করেছেন চমৎকারভাবে। লিটনের পিচ্ছল হাতের বাধা হয়ে না দাড়ালে বহুদিন পর পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেতেন তিনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ ম্যাচে মোস্তাফিজকে তার বোলিং উপভোগ করতে দেখা গিয়েছে। হ্যা, আফগানদের বিপক্ষে জয়ের নায়ক তিনি; সেটি মাথায় রেখেই বলতে হচ্ছে এমন চনমনে মোস্তাফিজকে বহুদিন দেখা যায়নি।

লিটন ২-২

এ ম্যাচে বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল চোখে লেগে থাকার মত। বিশেষ করে রুবেল এবং মাশরাফির ক্যাচ দুটো ছিল আজমাত। কিন্তু মুশফিকের বদলে গ্লাভস হাতে দাড়ানো লিটন সম্পুর্ণ বিপরীতমুখি দুটো অনুভূতিকে এক সুতোয় বাঁধলেন যেন। মোস্তাফিজের বলে দুবার দুটো সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন। বিশেষ করে আসিফ এর ক্যাচটি ছিল অবিশ্বাস্য এক মিস। এমন সহজ ক্যাচ এ পর্যায়ের ম্যাচে কেউ মিস করতে পারে এটাই কল্পনাতীত। আবার মিরাজ এবং মাহমুদুল্লাহর বলে যে দুটো স্ট্যাম্পিং করেছেন সেগুলোও চোখে লেগে থাকার মত। বিশেষ করে মিরাজের বলে যে ক্ষিপ্রতায় স্ট্যাম্পিংটি করেছেন সেটি দেখার পরে মোস্তাফিজের বলে মিস করা ক্যাচটি বিভ্রম জাগাতে বাধ্য।