মাহি বি চৌধুরী কার ও আসলে কী চাচ্ছেন?

মাহি বি চৌধুরী কার ও আসলে কী চাচ্ছেন?

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কথা শুরু পর থেকেই শিরোনামে মাহি বি চৌধুরী। বিকল্পধারার এই নেতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠাও এখন স্বাভাবিক। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষ যখন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার যুগান্তকারী সাফল্য দেখার জন্য অপেক্ষমান, তখনই মাহি বি চৌধুরী যেন কাজ করছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও দিল্লীর এজেন্ট হিসেবে।

এমন অভিযোগ উঠেছে অসংখ্য ফেসবুক পোষ্টে ও নানান ব্যক্তির মতামতে। কেননা, যেখানে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, এখানে কোন জোট নয়, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলগুলো যোগ দিচ্ছে পৃথকভাবে। তখন এই তরুণ রাজনীতিবিদ বিএনপির জাতীয় ঐক্যে থাকা নিয়ে শর্ত দিচ্ছেন। জামায়াতের প্রসঙ্গ আওয়ামী লীগের কৌশলের মতো তিনিও বিএনপির উপর প্রয়োগ করছেন। যদিও বিএনপি বলেছে, এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপি ২০ দলীয় জোট হিসেবে যোগ দেয়নি। যোগ দিয়েছে আলাদা দল হিসেবে ঐক্য প্রক্রিয়ার দাবির সাথে একমত পোষণ করেই তাহলে কেন জোটের শরিক জামায়াতকে নিয়ে মাহির এই অর্থহীন আপত্তি ও সন্দেহজনক আচরণ বক্তব্য চলছে।

বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের সাতে বৈঠক শেষে বলেছেন, স্বাধীনতা বিরোধী দল বা ব্যক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনও ঐক্য হতে পারে না। বিএনপির সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐক্য চাই। তবে ঐক্যে আসতে হলে বিএনপিকে অবশ্যই জামায়াতকে ছেড়ে আসতে হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে মাহি বি চৌধুরী কি চাচ্ছেন? প্রত্যেক দল যখন স্বতন্ত্রভাবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দিচ্ছেন তখন ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কথা সামনে নিয়ে আসার পিছনে অন্য উদ্দেশ্য দেখছেন রাজনীতির বিশ্লেষকেরা।

এদিকে বৈঠক শেষে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি বি চৌধুরী বলেন, আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা বিএনপির অনেক কাছাকাছি এসেছি। আজকের বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতিনিধি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আমরা দ্রুত একটা লিয়াজোঁ কমিটি করবো। এ ব্যাপারে আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির প্রস্তাব অনুসারে আমরা ২৯ তারিখের পরে এই লিয়াজোঁ কমিটি করব। কারণ তারা ২৯ সেপ্টেম্বর জনসভার মাধ্যমে আমাদের সাথে ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়া কী হবে এবং তাদের নীতি সম্পর্কে বিবৃতি দেবেন।

যুক্তফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা সব দলকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিতভাবে এগোতে চাই। নয়-ছয় করে ঐক্য করতে চাচ্ছি না। তাই বিএনপির সমাবেশের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐক্য ও যুক্তফ্রন্ট একসঙ্গে ময়মনসিংহে জনসভা করবে। ওই সমাবেশে স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানানো হবে।

বৈঠকে বিএনপির মহাসচিবের প্রতিনিধি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপিত আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের প্রতিনিধি হিসেবে ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্যসচিব আ ব ম মোস্তফা প্রমুখ অংশ নেন।

বৈঠকে মোবাইল সংক্রান্ত ঘটনা নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। বৈঠকের মাঝপথে মাহি বি চৌধুরীর কাছে খবর আসে, কোন একটি মোবাইল লন্ডনে সংযুক্ত রয়েছে। কিন্তু পরে মোবাইল অন্যরুমে রাখা হলেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু কথা, হচ্ছে মাহি বিকে বৈঠকের মাঝে কে ফোন করে মোবাইল সংযুক্ত করার তথ্য দিয়েছিল। আর সে প্রশ্নে উত্তর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় মাহি বি চৌধুরী নিজেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে মাহি বি চৌধুরী দিল্লীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।

অন্যদিকে এ প্রশ্নও উঠেছে যে যেখানে বিকল্প ধারার সেক্রেটারিই স্বাধীনতা বিরোধী সেখানে, বিএনপিকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’দের ছাড়তে বলার উদ্দেশ্য কি? মাহি বি চৌধুরী কি আদৌ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া চাচ্ছেন। নাকি জাতির এই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত।  কার ইশারায় কাজ করছেন মাহি তা নিয়ে সারাদেশে তৈরি হয়েছে সন্দেহ।