পরমাণু ইস্যুতে একঘরে হয়ে পড়েছে আমেরিকা

পরমাণু ইস্যুতে একঘরে হয়ে পড়েছে আমেরিকা

সম্ভবত বিশ্বব্যাপী একচেটিয়া রাজত্ব করার দিন ফুরিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে নিজেদের শত্রুতা সৃষ্টি করা ছাড়া বন্ধুত্ব তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে দেশটি। হয়ে পড়ছে একঘরে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের চলমান বৈঠক তারই উদাহরণ হয়ে দাঁড়াল। মারণাস্ত্র বিস্তার রোধ করার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল বুধবার। এতে ট্রাম্প ইরান সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেও বিশ্ব নেতারা ইরানের পরমাণু সমঝোতার পক্ষে কথা বলে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অপ্রস্তুত করে দিয়েছেন।

বৈঠকের শুরুতে ট্রাম্প তার ভাষায় মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা ও গোলযোগ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইরানকে দায়ী করেন। ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চায় বলে অভিযোগ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, পরমাণু সমঝোতা থেকে অর্জিত অর্থ মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের কাজে ব্যয় করেছে তেহরান।

ইরান শুরু থেকেই এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ওয়াশিংটনকে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে এসেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি রাশিয়া ও চীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ইরানের পরমাণু সমঝোতার পক্ষে কথা বলেন। এমনকি ট্রাম্পের বন্ধু-খ্যাত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনও পরমাণু সমঝোতাকে সমর্থন করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

এরপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, ইরানের পক্ষ থেকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন ঠেকানোর জন্য পরমাণু সমঝোতার চেয়ে ভালো কোনো উপায় নেই; কাজেই এ সমঝোতা রক্ষা ও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।

ট্রাম্পের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ করার প্রচেষ্টার মারাত্মক ক্ষতি করেছে। রাশিয়া এ সমঝোতা রক্ষা করার লক্ষ্যে চীনসহ অন্যান্য দেশকে নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকে ইরানের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তবে বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, “আমেরিকা আবারো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অপব্যবহার করল। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে নিজেকে আরো বেশি একা ও অসহায় অবস্থায় পেল ওয়াশিংটন। এ ধরনের বিষয়গুলো থেকে আমেরিকা আর কবে শিক্ষা নেবে?”

উল্লেখ্য, পরামানু চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরই আমেরিকা পৃথিবীর শীর্ষ দেশ ও নেতাদের সমর্থন হারিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, পরমাণু বিষয়ে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হয়?