অবশেষে মানুষের হাতে উঠল ফিফার বর্ষসেরার পুরষ্কার! মেসি-রোনালদো রাজত্ব শুরু হবার পরে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে বেস্ট’র খেতাব জিতলেন বলকান ম্যাজিশিয়ান লুকা মদ্রিচ।
মেসি-রোনালদোর অতিমানবীয় নৈপুন্যের কারণে সাধারণ সমর্থক থেকে শুরু করে বিশ্লেষকরা তাদের নামের পূর্বে ভিন গ্রহের বিশেষণ ব্যবহার করে থাকেন। সে হিসাবে মদ্রিচের এই খেতাব জয়টি বাড়তি তাৎপর্য রাখে সন্দেহ নেই। স্বপ্নের মতন মৌসুম কাটানো মদ্রিচ এর আগে জিতেছেন ইউরোপের বর্ষসেরার পুরষ্কার। ইউরোপ বর্ষসেরা পুরষ্কার প্রদানের মতই বেস্ট প্রদানের রাতেও রোনালদোর অনুপস্থিতি মদ্রিচের জয় সম্পর্কে একটি আগাম ধারণার জন্ম দিয়েছিল। প্রায় ৩০% ভোট পেয়ে সে আভাসকেই বাস্তবে পরিণত করলেন তিনি।
তবে, মদ্রিচের এই বেস্ট খেতাব জয়ের আগে পরে বাহাস চলছে বেশ। মাদ্রিদ অধিনায়ক রামোস কিছুদিন আগেই বলেছিলেন বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা না করে যদি বেস্ট বাছাই হয়, তবে মদ্রিচেরই সেটি পাওয়া উচিত। যার জেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রামোসকে আনফলো করেন এক সময়ের সতীর্থ রোনালদো। মদ্রিচের জয়ের পরেও থেমে নেই এই বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ফিফার গোল্ডেন বল পাওয়া যদি মদ্রিচের সেরা হবার পেছনের কারণ হয়ে থাকে তাহলে ‘১৪ সালে মেসির দোষটি কি ছিল?
ফিফার এই বর্ষসেরা নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক বহুদিনেরই। ঠিক কোন মানদন্ডে বা কি বিবেচনায় কেউ সেরা ঘোষিত হন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আজও কাটেনি। বাস্তবতা হচ্ছে যে প্রক্রিয়ায় সেরা নির্ধারন করা হয়ে থাকে তাতে অদৌ কোনো নির্দিষ্ট মানদন্ড মানা হয় বলে কখনোই প্রতিয়মান হয়নি।
বেস্ট নির্বাচনে ফিফার সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কোচ এবং অধিনায়কেরা ভোট দিয়ে থাকেন। নতুন করে যুক্ত হয়েছে সমর্থকদের ভোট। এখানে, নৈপুণ্যের চেয়ে যে, নিজস্ব ভালো লাগাটাই বেশি প্রাধান্য পায় তা সহজেই অনুমেয়। যেমন, নৈপুণ্য যেমনই হোক আজ অব্দি মেসি বা রোনালদো কেউই কাউকে ভোট দেননি! যাই, হোক নিয়ম যেহেতু এটাই সুতরাং, মদ্রিচই যে এখন বেস্ট এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
মাদ্রিদের টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পাশাপাশি ক্রোয়েশিয়ার হয়ে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলাটা যে মদ্রিচকে এগিয়ে দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বভাবতই বিশ্বকাপের বছরগুলোতে বিশ্বকাপের নৈপুণ্য বিশেষভাবে বিবেচিত হয়। সে হিসাবে ক্রোয়েশিয়াকে সামনে থেকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ফাইনালে নিয়ে গিয়েছেন তাতে সকলেই মুগ্ধ ছিল। যার রেশ পড়েছে ভোটের বাক্সে। সে অর্থে একদমই অযোগ্য হাতে বেস্টের ক্রেষ্ট উঠেছে এমনটি বলার সুযোগ নেই। বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে তো দুর, মাঝপথেও কেউ ক্রোয়াটদের ফাইনালিষ্ট হিসাবে কল্পনা করেনি।
সেরা নির্বাচনে বিতর্ক এখন স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হওয়ায় মদ্রিচের কৃতিত্ব ম্লান হচ্ছে না মোটেও। বরং, রোনালদো-মেসির জামানাতেই তাদের টপকে সেরা হওয়াটা বাড়তি প্রশংসারই দাবি রাখে।