রূপচর্চার রকম-সকম

রূপচর্চার রকম-সকম

কাজের চাপ, সংসারের চাপ। অফিস, বাড়ি, পার্টি, হই-হুল্লোর সবকিছু নিয়ে মেতে থাকতে কে না চায়। তার মধ্যে এই প্যাচপ্যাচে গরম এখনও নাজেহাল করে যাচ্ছে। এত কিছুর ভেতর নিজের জন্যে সময়টাই বা কোথায়? তাই বলে যে ঘরে বসে শুধু রূপচর্চা করে যাবেন, তাও তো নয়। বেরোতে আপনাকে হবেই। আর বেরোনো মানেই রোদ, ধুলো, দূষণ- সব মিলিয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা। শুধু মুখের ওপর নয়, শরীরের খোলা অংশে এর প্রভাব কিন্তু বেশ একচেটিয়া। তার মানে এই নয় যে ঘাবড়ে যাবেন। হাতের কাছেই যখন রয়েছে এতকিছু উপকরণ। যা আমরা ফেলেও দিই কখনও না জেনেই। হ্যাঁ না জেনেই এমন অনেক কিছু উপকরণ আছে যা আমাদের ত্বকের জন্যে খুব উপকারী। ভাবছেন, কী সব বলছি। যা বলছি সত্যি বলছি-র মতই বলব এমন কিছু উপকরণের কথা। যা ত্বক ঝলমল করতে আপনাকে সাহায্য করবে। সঙ্গে বাঁচিয়ে দেবে অর্থ, সময় দুটোই।

আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে টুথপেস্ট, বরফের টুকরো, দারুচিনি, ফল/সবজির খোসা, পেয়ারা, বেকিং সোডা, পেট্রোলিয়াম জেলি। সাধারণ ব্যবহারের পাশাপাশি এদেরই রয়েছে কিছু বিশেষ গুণ। যা আমরা দেখতে পাই না বা জানি না। আসুন তাহলে জেনে নিই ত্বকের সমস্যার সমাধানে সবকিছুর উপকার।

ত্বকের জন্য ব্যবহার করুন ফ্লুরাইড টুথপেস্ট

টুথপেস্ট

সকালে উঠেই আমাদের প্রথম কাজ। ঘুম ঘুম চোখে কোনওমতে ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ করি। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিই না যে এই পেস্ট ত্বকের পরিচর্যাতেও সমান কার্যকর। ত্বকের যত্নে টুথপেস্ট দিতে পারে এমন সব চমকপ্রদ উপকারিতা, যা নামীদামী প্রসাধনীও দিতে পারে না। তবে বাজার চলতি নানা রঙ, স্বাদ, গন্ধের যে টুথপেস্ট রয়েছে, তা কখনই ব্যবহার করতে যাবেন না। রূপচর্চায় সাধারণ ফ্লুরাইড টুথপেস্ট বেছে নেবেন অবশ্যই।

  • হোয়াইট হেডঃ- ধুলোময়লা, দূষণ, মেকআপ ইত্যাদির কারণে রোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস-এর আধিপত্য দেখা দেয়। এতে লোমকূপের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। নাক, কপাল, চিবুকে সাধারণত হোয়াইট হেডস বেশি হয়। সেইসব জায়গায় পুরু করে টুথপেস্টের প্রলেপ লাগান। শুকিয়ে গেলে তুলে ফেলুন। এরপর ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ফলাফল হাতেনাতে।
  • ব্রণ- ব্রণের সমস্যায় কে না পরে। বিশেষ করে ব্যাথাযুক্ত ব্রণ। একটাই ম্যাজিক। রাতে ঘুমনোর আগে ব্রণের উপর টুথপেস্ট লাগিয়ে ঘুমোতে যান। সকালে দেখবেন ফোলা কমে গেছে, আর ব্যথাও ছু মন্তর।
  • বলিরেখা- বয়স বাড়লেই যে ত্বকে বলিরেখা পড়ে, সেটা কিন্তু নয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি কারণে ত্বকে বলিরেখা পড়তে পারে। টুথপেস্ট নিয়ে হালকা জলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার মুখ, গলা ঘাড়ে প্রলেপ লাগান। শুকিয়ে যাওয়া অবদি অপেক্ষা করুন। পেস্ট শুকিয়ে গেলে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন এরকম ব্যবহার করতে পারলে, বলিরেখার সমস্যা দূর হতে বাধ্য।
  • ক্লান্তি- আমাদের শরীরের মতো ত্বকও ক্লান্ত হয়ে পরে। যার ফলস্বরূপ ছাপ পরে আমাদের ত্বকে। দু চা চামচ চায়ের লিকারের সঙ্গে সামান্য টুথপেস্ট ভালো করে মেশান। মিশ্রণটি পুরো মুখে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ফ্রেশনেস হাতের নাগালে।
  • ম্যাড়ম্যাড়ে ত্বক/ অনুজ্জ্বল ত্বক -হাতে টাইম নেই। এখুনি যেতে হবে পার্টিতে বা কোনও গেট টুগেদারে। এদিকে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময় নেই।চিন্তা নেই হাতের নাগালে টুথপেস্ট আছে তো।সাধারণ ফেসওয়াশের মতোই পেস্ট ব্যবহার করুন আর ঝটপট আপনি রেডি পার্টির জন্যে।
বরফ কিউবও রূপচর্চায় কার্যকরী

বরফ

ফ্রিজের মধ্যে মাঝে মাঝেই বরফ জমে গিয়ে থাকে। আর সপ্তাহের শেষে এসে আমরা ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় ফেলেও দিই। কিন্তু জানেন কি কোরিয়ান বা জাপানিরা রূপচর্চায় বরফ ব্যবহার করেন। আর তাই তাঁদের ত্বক এত টানটান। বিউটি এক্সপার্টরা স্কিন ট্রিটমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন বহু বছর ধরে। কিন্তু তার জন্যে আপনাকে পার্লারে দৌড়োতে হবে না। বাড়িতে বসেই আপনি বরফ প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের টোনিংএর জন্যে বরফ কিন্তু বেশ কার্যকর।এটি বলিরেখা প্রতিরোধ করে, ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ব্রণের দাগ দূর করে। তাই সপ্তাহে একদিন বরফের প্যাক ব্যবহার করুন। জেনে নিই বরফের কিছু প্যাক।

  • অ্যালোভেরা জেল কিউব- অর্ধেক কাপ অ্যালোভেরা জেল আইস ট্রেতে ঢেলে দিন। ফ্রিজে রেখে দিন ২ ঘন্টা। এরপর মুখ, ঘাড়ে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। অ্যালোভেরা জেল-এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান রোদে পোড়া দাগ, ত্বকের জ্বালা পোড়া দূর করতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা দুধ এবং লেবুর রস- ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে বলিরেখা দূর করতে কাঁচা দুধ আর লেবুর রসের আইস কিউব দারুন উপকারী। এর জন্যে দুটি উপকরণই সমান পরিমাণে আইস ট্রেতে ঢেলে দু ঘন্টা ফ্রিজে রাখুন। এরপর ত্বকে মাসাজ করুন। দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড আর লেবুর রস ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • গ্রিন টি- গ্রিন টি বানিয়ে নিন। তারপর আইস ট্রে তে ঢেলে ফ্রিজে রাখুন। বরফ হয়ে এলে চোখের নীচে মাসাজ করুন। চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতে এই কিউব বেশ কার্যকর।
রূপচর্চায় দারুচিনির ব্যবহার পুরনো

দারুচিনি

রান্নায় মশলা হিসেবে দারুচিনির খ্যাতি জগত জুড়ে। প্রাচীন যুগে আয়ুর্বেদিক ও চীনা ওষুধ তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হতো। হবে না, এ যে দূর দ্বীপবাসিনী। তবে শুধু ঔষধি কিম্বা রান্নার জন্যে নয়, ত্বকের যত্নেও দারুচিনির তুলনা হয় না। বিশেষ করে তৈলাক্ত বা অয়েলি ত্বকের জন্য দারুচিনি খুব কার্যকরী উপাদান। প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বক দাগছোপ মুক্ত হতে বাধ্য। এছাড়াও দারুচিনি গুঁড়ো ব্যবহারে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন আপনি-

  • দারুচিনি গুঁড়ো বলিরেখা মিটিয়ে ত্বককে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। এর জন্যে দু-চামচ অলিভ অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলির সঙ্গে দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ত্বকের উপর ঘন করে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ রাখার পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • দারুচিনি কিন্তু ভীষণভাবে অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে। স্কিনের কোনও অংশ কেটে গেলে দারুচিনি গুঁড়ো লাগাতে পারেন। যা ত্বকের কোনও ক্ষতি হতে দেয় না।
  • অনেকসময় নানা কারণে ত্বক জ্বালা করে। তৎক্ষণাৎ ত্বকের এই সমস্যা দূর করতে ১ চামচ দারুচিনি গুঁড়ো অল্প মধুর সঙ্গে মিশিয়ে স্কিনে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। ফল পাবেন হাতেনাতে।
  • ত্বক উজ্জ্বল করতেও দারুচিনি বেশ উপকারি। কলা, দই, দারচিনি ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক বনিয়ে নিন। ত্বকের উপর মিশ্রণটি লাগিয়ে রেখে হালকা গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক আরো উজ্জ্বল হবে।
  • ১ চামচ দারুচিনি পাউডার, ২ কাপ কফি গুঁড়ো, অর্ধেক কাপ সামুদ্রিক লবন, ২/৩ চামচ আমন্ড অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই বডি স্ক্রাবটি রোজ ব্যবহার করলে আপনি পাবেন সতেজতার এক দারুন অনুভূতি।
  • অ্যান্টি এজিং-এর সমস্যা দূর করতে ১ চামচ দারুচিনি পাউডার ও ৩ চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিক্সচার তৈরি করুন। ত্বকের উপর ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর হালকা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তারপর দেখুন ম্যাজিক।

 

ফল/ সবজির খোসা

সবজি কেটে ফেলার পর আমরা খোসাগুলো ফেলে দিই ডাস্টবিনে। এবার থেকে ফেলে দেওয়ার আগে আর একবার চিন্তা করবেন। আসলে খোসার মধ্যেও রয়েছে ত্বক ঝকঝকে করবার উপকরণ। তাহলে জেনে নিই এরকমই কিছু খোসার উপকার।

  • আলুর খোসায় আছে বেশ কিছু এনজাইম ও ভিটামিন সি। যা চোখের চারপাশের কালচেভাব, ফোলাভাব আর ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। আলুর খোসা ১০-১৫ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন। ঠান্ডা হয়ে এলে চোখের উপর রাখুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফোলাভাব কমে যাবে।
  • দাঁত হলদে হয়ে গেছে। চিন্তা নেই। অরেঞ্জ এর খোসা কিংবা কলার খোসার ভেতরের দিক দাঁতে ঘষলে হলদে ভাব দূর হয়ে যাবে। এই খোসায় আছে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম। যা দাঁতের এনামেলের আস্তরণকে প্রাণবন্ত করে। দাঁত ঝলমলে করে তোলে।
  • অরেঞ্জ-এর খোসার এক অদ্ভুত সুগন্ধ আছে। তাই স্নানের সময় এক বালতি জলে অরেঞ্জের খোসা যোগ করলে শরীর মন দুই ভালো করবে।
  • এছাড়াও ত্বকের পরিচর্যায় ফল ও সবজির খোসার বিভিন্ন ব্যবহার আপনাকে দেবে এক অনন্য অনুভূতি। ত্বক ময়েশ্চারাঈজ করতে কয়েক টুকরো কমলার খোসা দু তিনদিন রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর এতে মধু ও দই মিশিয়ে নিন। মুখ ও ঘাড়ে এই মিশ্রণ ১৫-২০ মিনিট রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও অ্যাভোকাডো, পেঁপে কিংবা কলার তাজা খোসা ত্বকের ওপর ঘষতে পারেন।
ত্বকের জন্য ব্যবহার করুণ পাকা পেয়ারা

পেয়ারা

হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। এই ফলটি ত্বকের জন্যে বাস্তবিকই এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরও সব উপকারী উপাদান ত্বকের গভীরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদান বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বক ফর্সা হয়।

  • বিশেষজ্ঞের মতে নিয়মিত পেয়ারা দিয়ে বানানো ফেসপ্যাক মুখে লাগালে স্কিন টোনের উন্নতি হয়, সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বল আর প্রাণবন্তও।
  • পেয়ারা ছোটো ছোটো টুকরো করে নিন। তাতে ডিমের কুসুম মিলিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর পেস্টটা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার লাগানোর পর দেখুন তফাৎ। ফেসপ্যাকের জন্যে পাকা পেয়ারাই সবথেকে ভালো।
  • পেয়ারায় রয়েছে লাইকোপেন নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে।
  • বিভিন্ন কারণে স্কিনের ওপর বলিরেখা পরে যায়। তাই আর বেশি না ভেবে ত্বকের পরিচর্যায় পেয়ারাকে কাজে লাগাতেই পারেন। ত্বকের মধ্যে থাকা টক্সিক উপাদান বের করতে এর জুড়ি মেলা ভার। সেই সঙ্গে স্কিনের সেল যাতে কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। স্বাভাবিকভাবে বলিরেখাও কমে যাবে।
  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং নানারকম উপকারি উপয়াদান থাকায় শুধু পেয়ারা নয়, পেয়ারার পাতাও স্কিন টোনার হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এরজন্যে এক কাপ জলে পেয়ারা পাতা সেদ্ধ করে সেই জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এরকম করলে ত্বকের পুষ্টি পূরণ হবে। এতে ত্বক টানটান হবে। ব্রণের প্রকোপও কমে যাবে।
  • ত্বক যত আর্দ্র থাকবে, সৌন্দর্য বাড়বে তত বেশি। তাই ত্বকের আর্দ্রতা যাতে না কমে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আর এই কাজে পেয়ারা ভীষণ উপকারি। আসলে পেয়ারায় ৮০ শতাংশ জল। তাই পেয়ারাকে রাখুন রোজকার ডায়েটে । 

বেকিং সোডা

বেকিং সোডা আমরা বিভিন্ন রান্নার প্রণালীতে ব্যবহার করি। কিন্তু এই বেকিং সোডা যে কতটা উপকারি তা অনেকেই জানি না। তাহলে জেনে নি বেকিং সোডার এরকমই কিছু ব্যবহার।

  • ব্রণের সমস্যা কমাতে সামান্য জলে বেকিং সোডা গুলিয়ে নিয়ে ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। দু-তিন দিন ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা কমে যাবে।
  • অনেক সময় খুব বেশি জল ঘাটলে হাত ও পায়ের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে জল বা সাবানের সঙ্গে খানিকটা বেকিং সোডা মিশিয়ে হাত ও পায়ের ত্বকে মালিশ করুন। এরপর হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক হয়ে উঠবে কোমল।
  • স্কিন পরিষ্কার করতে রোজ ফেসওয়াশের সঙ্গে খানিকটা সোডা মিশিয়ে নিলে ত্বক পরিষ্কার হবে গভীর থেকে। রোদে পোরা ত্বক দূর করতে এক গ্লাস জলে দু’টেবল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে দিয়ে তুলো দিয়ে মুখে ও হাত-পায়ে লাগান। ট্যান কমে যাবে, ত্বক হবে উজ্জ্বল।
  • বেকিং সোডার সঙ্গে শ্যাম্পু মিশিয়ে চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালো করে মাসাজ করুন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। চুলের রুক্ষতা দূর করার পাশাপাশি চুলকে করবে নরম ও সিল্কি। চুলের তেলাভাব দূর করতেও বেকিং সোডা খুব ভালো। এক টেবল চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে এক চা চামচ ল্যাভেন্ডার অয়েল ও অর্ধেক চা চামচ গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগান। এবার চুল চিরুনি করে নিন। তেলতেলে ভাব কমে যাবে।
  • নখ পরিষ্কার করতে অল্প জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে পেস্ট বানান। ম্যানিকিওর, পেডিকিওর করার সময় এই প্যাক নখ ও হাত-পায়ে ভালো করে মালিশ করুন। এরপর হালকা গরম জলে ধুয়ে নিন। সোডা নখ চকচকে করে ও নখের পাশের চামড়া উঠতে সাহায্য করে। পায়ের গোড়ালি নরম করতেও এর জুড়ি নেই। এক টেবল চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে এক টেবল চামচ লেবুর রস, সামান্য জল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে পায়ের গোড়ালিতে লাগান। এবার নরম ব্রাশ দিয়ে ভালো করে ঘষুন। পায়ের ফাটা দূর হবে, মসৃণও হবে।

পেট্রোলিয়াম জেলি

পেট্রোলিয়াম জেলির কৌটো আমাদের সবার ঘরে কিম্বা ব্যাগে থাকেই। সাধারণত শীতে ঠোঁটকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু এই ছোট্ট জিনিসটিই আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য যে কতটা উপকারি। সত্যি অবাক হতে হয়। জেনে নিই তাহলে এর ছুপারুস্তম গুণগুলি।

  • গরমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুসকুড়ি কিম্বা লাল দাগ হয়। পেট্রোলিয়াম জেলি এই ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে। যে সমস্ত জায়গায় ফুসকুড়ি হয়েছে, সেখানে লাগিয়ে নিন পেট্রোলিয়াম জেলি, আর দেখুন এর কামাল।
  • অনেকেরই আইব্রো পাতলা ও অগোছালো হয়। বারবার আয়না দেখে ঠিক করতে হয়। এক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম জেলি আইব্রো জেল হিসেবে ব্যবহার করুন। আইব্রো সমান ও মোটা দেখাবে। তাই ঘর থেকে বেরোনোর আগে আইব্রোতে সামান্য পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন, আর টেনশন মুক্ত থাকুন।
  • ছোটো চুলের সমস্যা আমাদের অনেকেরই। ভালো করে চুল বাধার পরও ছোটো চুল বেরিয়ে থাকে। যা খুব বিরক্তিকর। অল্প পেট্রোলিয়াম জেলি নিন, লাগিয়ে নিন চুলে। ব্যস, সমস্যা মুক্তি।
  • সুন্দর ঠোঁট চান। বেশ খানিকটা পেট্রোলিয়াম জেলি নিন। এবার ঠোঁটে বেশ পুরু করে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। তারপর নরম ব্রাশ নিয়ে হালকা করে স্ক্রাব করুন, আর পান নরম ঠোঁট।
  • মেকআপ রিমুভ করতেও পেট্রোলিয়াম জেলি ভীষণ কার্যকরী। একটি কটন বলে পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে ধীরে ধীরে মেকআপ তুলে নিন। মাসকারা বা গাঢ় প্রসাধনী তুলতে এর জুড়ি নেই।

ব্যাস, এই তো গেলো বিভিন্ন ধরনের জিনিসের অন্যরকম ব্যবহার। তাহলে আর দেরি করছেন কেন। চটপট কাজে লাগান। আর সময় বাঁচিয়ে হয়ে উঠুন আরো মোহময়ী।