কার জন্য ও কি নিয়ে ঐক্য চাই : পর্ব -১

কার জন্য ও কি নিয়ে ঐক্য চাই : পর্ব -১

বর্তমান সরকারের চরম কর্তৃত্ববাদী আচরণ, জেল-জুলুম ও গুম-খুনের উপর ভর করে স্বৈরাশাসন ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ঐক্য প্রক্রিয়া লক্ষ্ করা যাচ্ছে। যা মূলত উদার ডানপন্থী ও প্রগতিশীল বাম ভাবধারার রাজনৈতিক ঐক্য। এর মধ্যে একটা বিষয় ভেবে দেখার রয়েছে যে, তাদের এই ঐক্যের কৌশলগত ভিত্তিসমূহ ঠিক কতটুকু আন্তর্জাতিক নাগরিক সনদের আলোকে কিংবা কল্যান রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কতোটা নিবেদিত। এছাড়াও তা কতটুকু নাগরিক স্বার্থ-কেন্দ্রিক সেটা নিয়েও ভাবার অবকাশ রয়েছে। একথা সত্য এই মুহূর্তে রাষ্ট্রকে চরম কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী শাসনের খোলস থেকে বের করে নাগরিকবান্ধব করে তোলার একটি নাগরিক চাপও সমাজে তৈরি হওয়া দরকার। কিসের ঐক্য চাই, কি নিয়ে ঐক্য চাই, এই বুঝাপড়াগুলোর মীমাংসা না হলে বারবার রাজনৈতিক ঐক্য প্রক্রিয়াগুলো ক্ষমতা কুক্ষিগত ও ক্ষমতায় টিকে থাকার কূটচাল হিসেবেই কাজ করবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ইতিহাস ঠিক যেন নাগরিক স্বার্থের সাথে নিয়মিত চলতে থাকা চরম প্রতারণার প্রতিচ্ছবি। আসলে ঐক্যের জন্য কি কি বিষয় জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে তারই আলোকে আজকে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করবো।

বুঝাপড়ার ভিত্তি : 

১. স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, নির্বাচন উত্তর ক্ষমতা হস্তান্তরে একটি স্থায়ীভাবে স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনী প্রশাসন গড়ে তোলার ঐক্য।

২. স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোকে পুনর্গঠন করে, তাদের বৈচারিক ক্ষমতা, স্বাধীন বাজেট এবং স্বাধীন জনবল নিয়ে কাঠামো তৈরি করে ও দায়বদ্ধতা ভিত্তিক আইনি কাঠামো দিয়ে তাদেরকে নির্বাহী বিভাগের আওতা থেকে দূরে রাখতেই এই ঐক্য।

৩. সংবিধান ও বিচার বিভাগের কার্যকর ও নাগরিক অধিকার বান্ধব সংস্কারের জন্য ঐক্য।

৪. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয়ের রাজধানী কেন্দ্রিক একচেটিয়া ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ঐক্য।

৫. মানসম্পন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানবিক কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের দাবি নিয়ে ঐক্য।

৬. দুর্নীতি রোধ করে বাজেটের বাস্তবায়ন সক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যেই ঐক্য।

৭. রাষ্ট্রের বৈদেশিক ঋণের লাগাম টেনে ধরার জন্য ঐক্য।

৮. জন ও পরিবেশ বান্ধব অবকাঠামো তৈরি ও সাশ্রয়ী গণপরিবহন তৈরির ঐক্য।

৯. দৈনন্দিন জীবনের খরচ যেমন, কৃষি, শিল্প শ্রমিক ও শহুরে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের সাধ্যের ভিতরে রাখার দাবি নিয়ে ঐক্য।

স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ নির্বাচনী কাঠামো এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর কাঠামো তৈরি না করতে পারলে কোন ভাবেই আগামী দিনের সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করার উপায় থাকবে না।

শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার ও দ্রুত সময়ে অর্থ লোপাটের চিন্তা-চেষ্টা ও চর্চার কৌশল বাস্তবায়নে দিন কাটায় তখন মানবসম্পদ, নাগরিক জীবন যাত্রার মান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অবকাঠামো উন্নয়নের মৌলিক ও টেকসই দিকগুলো চিরতরে হারিয়ে যেতে বাধ্য। যা হয় তার সবকিছু লোক দেখানো, সাময়িক এবং লুট সর্বস্ব। দায়বদ্ধতা না থাকায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ক্ষমতাবলয়ের লোকেরা বেপারোয় অর্থ লুটে আত্মনিয়োগ করে, ফলে সব কিছু নষ্টের দখলে চলে যেতে বাধ্য হয়।

 

সুশাসনের অনুপস্থিতির কারণে কি কি ঘটছে তা একনজরে দেখে নিতে পারি। দেশে সামাজিক অশান্তি, রাজনৈতিক হানাহানি, জেল-জুলুম-গুম-খুন, ব্যবসায়িক মন্দা, আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ধ্বস, বেকারত্ব বৃদ্ধি, নির্বাচনের আগে আগে ব্যাংক লূট এবং অর্থ পাচারের মত ভয়ঙ্কর সব সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচনহীনতা এবং শান্তি পুর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের কোন প্রক্রিয়া না থাকা। দেশের নেতৃত্বগুলো যখন বাকি সব কিছুকে দূরে ঠেলে  শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার ও দ্রুত সময়ে অর্থ লোপাটের চিন্তা-চেষ্টা ও চর্চার কৌশল বাস্তবায়নে দিন কাটায় তখন মানবসম্পদ, নাগরিক জীবন যাত্রার মান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অবকাঠামো উন্নয়নের মৌলিক ও টেকসই দিকগুলো চিরতরে হারিয়ে যেতে বাধ্য। যা হয় তার সবকিছু লোক দেখানো, সাময়িক এবং লুট সর্বস্ব। দায়বদ্ধতা না থাকায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ক্ষমতাবলয়ের লোকেরা বেপারোয় অর্থ লুটে আত্মনিয়োগ করে, ফলে সব কিছু নষ্টের দখলে চলে যেতে বাধ্য হয়।

প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য ঐক্য চাই :

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাব মুক্ত করে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ, সংসদ এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বাইরে স্থায়ীভাবে একটি স্বাধীন নির্বাচনী কাঠামো তৈরির ঐক্য খুবই জরুরি।

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এমন হওয়া চাই- যারা প্রধানমন্ত্রীর বা রাষ্ট্রপতির নির্দেশ মানতে বাধ্য নয়, যারা সাংবিধানিক ক্ষমতায় নির্বাচনী প্রার্থীদের দায়বদ্ধ করতে পুরোপুরি সক্ষম, শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত নিজের সকল জনবল নিজেরাই স্বাধীনভাবে তৈরি ও বিন্যস্ত করতে সক্ষম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত যাদের নির্বাচনী স্বচ্ছতার সকল কাজ ও উদ্দেশ্যকে সুরক্ষা দিতে বাধ্য। এমন নির্বাচন কমিশন চাই যারা একটি দলের নির্বাচনী ইশতেহার বা তার অংশ মিথ্যা কিনা, পুনরাবৃত্তি আছে কিনা তা যাচাই করবে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতিদাতা দলের নেতাকে সামনের নির্বাচনে অযোগ্য বলে বিবেচিত করার ক্ষমতা পাবে, ইতিপূর্বে নির্বাচিত প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ৭৫% বাস্তবায়নের সাপেক্ষে নতুন মনোনয়ন গ্রাহ্য করবে। এই একই ধরণের সার্বভৌম কাঠামো দরকার আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্যও।

যেমন- ক. বিচার বিভাগ খ. দুর্নীতি দমন কমিশন গ. বাংলাদেশ ব্যাংক ঘ. উচ্চ ক্ষমতা অসম্পন্ন জালিয়াতি প্রতিরোধ কমিশন (প্রস্তাবনা) ঙ. জাতীয় হিসাব নিরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ অফিস চ. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ছ. পুলিশ-আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার নাগরিক হয়রানি, ঘুষ ও চাদাবাজি রোধে স্বাধীন জাতীয় তদন্ত কমিশন (প্রস্তাবনা)। এইসব স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গুলোকে পুনর্গঠন করে, তাদের বৈচারিক ক্ষমতা, স্বাধীন বাজেট এবং স্বাধীন জনবল কাঠামো তৈরি করে ও নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে নির্বাহী বিভাগের আওতা বহির্ভূত করতে হবে। এই ব্যাপারে দৃঢ় নাগরিক ঐক্য চাই যা রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ তৈরি করবে। এতে করে চাইলেই রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, ব্যক্তি মাফিয়ার দুর্বৃত্তপণা রাষ্ট্রীয় ইন্সটিটিউশনকে যখন তখন কলুষিত করতে পারবে না। অর্থাৎ নির্বাহী ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা বিন্যাসতো বটেই আরো কিছু বৈষয়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে যারা শাসন ব্যবস্থায় চেক অ্যান্ড ব্যালান্স তৈরি করবে, স্বচ্ছতা আনবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করবে।

বিচার বিভাগের সংস্কার :

বিচার বিভাগের সংস্কারে ঐক্য খুবই জরুরি। বর্তমান বিচার ব্যবস্থা সমাজ ও রাষ্ট্রের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ। নিম্ম আদালতে বিচারক নিয়োগে খুললামখুল্লা দলীয়করণ প্রতিহত করতে স্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতি আনতে হবে, জুডিশিয়াল সার্ভিসে যেনতেন পরীক্ষা, মানহীন সনদভিত্তিক নিয়োগকে রুখে দিতে ঐক্য চাই। বিচারক নিয়োগে নির্বাহী বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। আলাদা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন করতে হবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর করতে হবে। বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় যৌক্তিক বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। ২ বছরের মধ্যে মামলা জট কমিয়ে নতুন মামলাকে সময় নিয়ন্ত্রিত প্রসেসে নিয়ে আসতে হবে যাতে নাগরিকরা বিচারের চূড়ান্ত রায়ের সম্ভাব্য তারিখ মামলার সময়েই জানতে পারেন।

প্রকৃত সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চার জন্যে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হওয়ার ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার দাবিতে রাজনৈতিক ঐক্য চাই।

 

মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আলোকে মানুষের জান, মাল এবং ইজ্জতের সুরক্ষার জন্যে একটি নতুন সার্বজনীন নাগরিক অধিকারের সনদ তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠান এই সনদের নীতিবিরুদ্ধ কোন কাজ এবং আইন প্রণয়ন করতে পারবেনা। মানবাধিকার কমশনকে সরকারের চাটুকারিতার বিপরীতে নাগরিক ও আদালতের কাছে দায়বদ্ধ সংস্থার অধীনে আনতেও ঐক্য চাই।

সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা :

প্রকৃত সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চার জন্যে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হওয়ার ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার দাবিতে রাজনৈতিক ঐক্য চাই। বিপরীতে দলীয় প্রধান ও তার পরিবারের ইচ্ছা, দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বিশেষের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বদলে রাজনৈতিক দলের আভ্যন্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকেই গণতান্ত্রিক করা চাই, যাতে হর্স ট্রেইডিং ক্ষেত্রই তৈরি না হয়।  রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যবধান তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। “কনফ্লিক্ট ইন পাওয়ার এন্ড ফান্নান্সিয়াল ইন্টারেস্ট” দূর করতে সরকার প্রধানকে দলীয় পদ ছাড়তে হবে, মন্ত্রীসভার সকল সদস্যকেও দলীয় যে কোন পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ পূর্বক শপথ নিতে হবে। মন্ত্রীসভার কোন সদস্যই কোন বেসরকারি কোম্পানির চেয়ারম্যান বা এমডি বা ডিরেক্টর বা উপদেষ্টা হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী জীবন মেয়াদে দুই বারের অধিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এই ঐক্যগুলো রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা আনতে অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সংসদীয় নির্বাচন, আসন ভিত্তিক সংসদ নির্বাচনের বদলে একটি জেলায় একদল প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রিক ভোট হবে। জেলায় প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ অনুসারে ঐ জেলার জন্য নির্ধারিত সংসদীয় আসনে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত বলে বিবেচিত হবেন। (সম্ভাব্য মডেল- একটি জেলায় ১০ টি আসন, দলগুলো সর্বোচ্চ ১০ জন করে কমন প্রার্থী ঘোষণা করবে পুরো জেলায়, একজন ভোটার সকল দলের সব প্রার্থীর শুধু একজনকেই ভোট দিতে পারবেন, কোন দল জেলায় মোট প্রদত্ত ভোটের ৪০% পেলে সেই দল চারটি আসন সংসদে পাবে, ৩০% পেলে তিনটি, ২০% পেলে ২টি এবং ১০% পেলে ১টি সংসদীয় আসনের সুরক্ষা পাবে, দলীয় প্রার্থীদের মাঝে ক্রমানুসারে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তরা নির্বাচিত বলে বিবেচিত হবেন)। প্রতিনিধিত্বের শতাংশ ভিত্তিক আসন বরাদ্দের এই নতুন বিধান চাই এজন্য যাতে করে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, দলীয় ভিন্ন মতাদর্শী, ক্ষুদ্র দল, আঞ্চলিক দল, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এবং বঞ্চিত পেশাজীবী সংগঠনগুলো সংসদে দাবি উত্থাপন ও কথা বলার সুযোগ পায়। রাষ্ট্র চালাতে যেসব মূখ্য পেশাজীবীর প্রয়োজন সেসব সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টদের প্রতিনিধিত্ব থাকা চাই দলীয় প্রার্থী তালিকায়। না ভোট রাখা চাই, চাই এক তৃতীয়াংশ ‘না ভোট’ পড়া সাপেক্ষে ঐ নির্বাচনের সব প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করে নতুন প্রার্থীতে নির্বাচনের বিধান রাখা চাই যাতে একদলীয় বা গোষ্ঠীগত নির্বাচন, চোর ও জনবিরোধী প্রার্থী ঠেকানো যায়। জামানত ভোটের মোট শতাংশের ১ থেকে সর্বোচ্চ ২% এ নামিয়ে আনা চাই, দেশের যে কোন নাগরিকের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন করার এবং নির্বাচন করার অধিকার দেয়া চাই।

আগামী একটি বা কয়েকটি নির্বাচনে সব ঠিক থাকলেও, ক্ষমতা হস্তান্তর স্বচ্ছ হলেও, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার গত দশ বছরে বাজেট স্ফীতকরণ, বরাদ্দ, প্রকল্প ব্যয় এবং দলীয় লোকেদের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ঋণ দিবার যে বেপারোয়া লুটেরা মডেল স্থাপন ও বাস্তবায়ন করে গেছে, নতুন সরকার যদি এই দুর্বৃত্ত মডেল আমূল পরিবর্তন না করে বেপরোয়া খরচের লাগাম টেনে না ধরে, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি ঋণের জাল থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করা যাবে না, ইতোমধ্যেই দেশের বাজেটের ২য় শীর্ষ খাত হিবেসে আবির্ভুত হয়ে ঋণের সুদ প্রদান।

 

কল্যাণ ও সেবা মুখী রাষ্ট্র :

রাষ্ট্রকে কল্যাণমুখী করার প্রথম ১ম পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির নূন্যতম ৫% করে মোট ১০% বরাদ্দ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রাখার ঐক্য চাই যা পরবর্তিতে ধাপে ধাপে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। বিদ্যুৎ পানি গ্যাস, গণ পরিবহণ ভাড়া এবং বাসা ভাড়া বছরে বাৎসরিক ঘোষিত মূল্যস্ফীতির পরিমাণের বাইরে এক আনাও কিংবা এক শতাংশও বাড়াতে পারবে না সরকার, প্রসাশন, বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান-এই ভিত্তিতে দৃঢ় ঐক্য চাই। সর্বনিম্ন মজুরি নির্দিষ্ট শহরে বাঁচার উপযোগিতার ভিত্তিতে নির্ধারিত করার ঐক্য চাই।

কেন্দ্রীয় খরচ ও ক্রয় স্বচ্ছতা কমিটি :

জন প্রশাসনের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ক্রয় ও বাজেট খরচের অনুমোদন গুলো -ক্রয় কমিটির মাধ্যমে হতে হবে।  যাবতীয় ক্রয়, খরচ ও ব্যয়কে ‘কেন্দ্রীয় খরচ ও ক্রয় স্বচ্ছতা’ কমিটি নামক স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য ন্যাস্ত করতে হবে। দুর্নীতি রোধে সরকারি সকল ব্যয় ও ক্রয়কে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব মুক্ত এই স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করতে হবে, দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে এই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকাণ্ডকে আধুনিক কারিগরি স্বয়ংক্রিয়তায় আনতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হবে দুর্নীতি ও লুটপাট থামিয়ে বাজেটের বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানো। প্রতিটি সরকারি বিভাগ ২০০০ টাকার উপরে প্রতিটি খরচ হওয়ার পরেই তার ক্রয়মুল্য এবং বিক্রেতার নাম উল্লেখ পূর্বক তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে বাধ্য থাকবে।

আগামী একটি বা কয়েকটি নির্বাচনে সব ঠিক থাকলেও, ক্ষমতা হস্তান্তর স্বচ্ছ হলেও, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার গত দশ বছরে বাজেট স্ফীতকরণ, বরাদ্দ, প্রকল্প ব্যয় এবং দলীয় লোকেদের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ঋণ দিবার যে বেপারোয়া লুটেরা মডেল স্থাপন ও বাস্তবায়ন করে গেছে, নতুন সরকার যদি এই দুর্বৃত্ত মডেল আমূল পরিবর্তন না করে বেপরোয়া খরচের লাগাম টেনে না ধরে, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি ঋণের জাল থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করা যাবে না, ইতোমধ্যেই দেশের বাজেটের ২য় শীর্ষ খাত হিবেসে আবির্ভুত হয়ে ঋণের সুদ প্রদান। বাস্তব ব্যয়ের ১০ থেকে ১০০ গুণও বরাদ্দ পেয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প ব্যয় ও বিভিন্ন সরকারি ক্রয়। এটা অবাধ লুটতরাজ থামাতে না পারলে নাগরিকের আর্থিক মুক্তি সুদূর পরাহত। রাষ্ট্রীয় বাজেটের সক্ষমতা তৈরি ও দুর্নীতি বন্ধের এই বোধ প্রতিষ্ঠার ঐক্য চাই।

পূর্ব ও পরে প্রতিষ্ঠানিক শাসনের যৎসামান্য কাঠামো যা ছিল কিংবা বিচ্ছিন্নভাবে গঠিত হয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৭ বছর শেষে বর্তমানে তা পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই সবই করা হয়েছে সচেতনে, শুধু মাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে, কেন্দ্রীয় নজরদারি আনার কথা বলে। এতে করে বহুবিধ সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে, বহু আইন এবং শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে সাজানোর দরকার পড়েছে।

বাংলাদেশের সম্পদ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এমন কোন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া তৈরি হয়নি যাতে প্রতীয়মান হয় যে আমরা কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে হাঁটছি। নাগরিকদের জন্য নিবেদিত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের মূল লক্ষ্য ভুলে আমরা নিছক কিছু অকার্যকর ও লুটেরা উপলক্ষ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে, পথ হারিয়ে ভ্রান্ত পথ নিয়েই বিতর্কে জড়িয়েছি, লক্ষ্য নিয়ে নয়। ফলে যে কোন পর্যায়েই সুশাসন ফেরাতে সত্যি সত্যিই একটা আমূল পরিবর্তনের দরকার, কেননা বর্তমানের শাসন মডেল নাগরিক স্বার্থ্যের সাক্ষাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। যে কোন নিবেদিত ও সৎ ঐক্য প্রক্রিয়ার বুঝাপড়া নিয়ে তৈরি এজেন্ডার লিস্টও অতি দীর্ঘ হতে বাধ্য। তার পরেও আমাদের পথ খুঁজে পেতে হবে, মত ও পথের ভীড়ে, নাগরিকদের জন্য নিবেদিত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঐক্য নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের জানতে হবে, আমরা কি করছি, কি চাচ্ছি, কেন চাচ্ছি, কোথায় আমাদের গন্তব্য! ঠিক কখন আমরা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হতে পারবো।