একটা গল্প দিয়েই লেখাটা শুরু করি। কোনো এক নির্বাচনের আগে এক নেতা আদাজল খেয়ে নেমেছেন নির্বাচন জেতার জন্য। তো, প্রচারণার অংশ হিসাবে তিনি এক জনসমাবেশে গেলেন বক্তৃতা দিতে। বক্তৃতার মাঝে বলে বসলেন, আমি নির্বাচিত হলে আপনাদের জন্য একটা বড় ব্রিজ করে দিব। এ কথা শুনে পাশ থেকে সাগরেদ বলল, হুজুর ব্রিজ যে বানাবেন, এলাকায় তো নদীই নাই! নেতাও কম যায় না; তিনি বললেন, লাগলে নদী খুড়ে আপনাদের জন্য ব্রিজ বানায়া দিব!
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিসিবির প্রধানের সেই নেতা হবার শখ জেগেছে। বিসিবির প্রধানের পদ এমনিতেই যথেষ্ট সম্মানের। তাতেও তার পোষাচ্ছে না। যে করেই হোক, ক্রিকেটের সর্ব বিষয়েই যে তিনি জ্ঞান রাখেন তার প্রমাণ দেয়ার জন্য জী জান বাজি রেখে উঠেপড়ে লেগেছেন। কখনো মুখপাত্র হিসাবে, কখনো বা নির্বাচকের বেশে তিনি হাজির হচ্ছেন নিয়ত! তার প্রভাব কি হচ্ছে কেউ কি ভেবে দেখেছেন!
একটি আসরের মধ্য পথে আচমকা দু’জন খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তি এমনিতেই আশ্চর্য এক ঘটনা। সেটি আশ্চর্য থেকে নতুন রূপে রূপ নেয় যখন জানা যায় যে, এ খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে অধিনায়ক, ম্যানেজমেন্ট এমন কি নির্বাচকরা পর্যন্ত জানেন না! অধিনায়ক, কোচের কথা বাদই দিন, খোদ নির্বাচকই যদি না জানেন যে দলে কে আছে; তাহলে বিস্মিত হবার বদলে বোবা হয়ে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতেছে বটে, কিন্তু দলে যে একটি অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে সেটি তো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ব্যাটিং লাইন দেখার পরই। ওপেনিং এ সমস্যার সমাধা করার জন্য যাকে খেলার মাঝেই মরুর দেশে পাঠানো তিনি ব্যাট করলেন লোয়ার মিডল অর্ডারে! স্পিনের বিপক্ষে যিনি ভালো বলে অন্তর্ভুক্ত হলেন তিনি নামলেন পেস সামলাতে! দলের অন্যতম মূল ব্যাটসম্যান নামলেন সাত নাম্বারে! এতসব মুগ্ধকর কির্তীর পরেও যে দল জিতেছে এই তো ঢের।
দু’ম্যাচ দেখেই যদি কারো ওপর আস্থা কমে যায়, তাহলে তাকে দলে নেয়ারই দরকার নেই। এমন করে বাংলাদেশের বহু খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে অকালেই। শান্ত এখন পর্যন্ত ভালো করতে পারেননি সত্য, তাই বলে বিকল্প দু’জন ডেকে এনে নতুন করে বাড়তি চাপে রাখা তাকে কি সাহায্য করবে সেটি কর্তা মশাই ভালো জানেন। ইমরুল ফাটকাটা আফগান ম্যাচে কাজে লেগেছে, তাই বলে তাকে নিয়মিত মিডল অর্ডারে খেলানোর চিন্তাটা হবে আত্মঘাতি। কারণ, তিনি নিজেই একাধিকবার ওপেনিং ভিন্ন অন্য পজিশনে নিজের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন প্রকাশ্যে।
সর্বশেষ ওয়ান ডে সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপটা ছিল দল বিবেচনায় দারুণ। হ্যা, সৈকত এবং সাব্বির ব্যার্থ ছিলেন; কিন্তু ক্রমটা ছিল চমৎকার। সাকিব বেশ কিছুদিন ধরেই তিনে দারুণ খেলছিলেন। একটা আসরে দু ম্যাচের ব্যার্থতায় তার পজিশন বদলে দেয়া হাস্যকর। মাহমুদুল্লাহ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তিনিই সাতে নামেন তাহলে তাকে দলেই রাখার দরকারটি কী? আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্রুত কিছু উইকেট হারানোর ফলে তিনি বেশ কিছু ওভার পেয়েছেন খেলার জন্য; যার সুফল পেয়েছে দল। কিন্তু অন্য সময় যদি টপ অর্ডার-মিডল অর্ডার সফল হয়; তখন তিনি যেটুকু সময় পাবেন তাতে কি মাহমুদুল্লাহর যোগ্যতার পুরোটা ব্যবহার হবে?
স্লগের জন্য যে আরিফুলকে দলে নেয়া, তাকে মাঠে নামার যোগ্যই মনে করা হচ্ছে না। তার বদলে দেশ থেকে খেলোয়াড় উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আস্থার যদি এতটাই অভাব হয়, তাহলে তাকে দলেই নেয়া কেন? মুমিনুলকে নিয়ে নতুন করে কি বলবার আছে? তিনি এখন দলের শোভা বর্ধনের জন্য বিবেচিত হচ্ছেন। একটা ম্যাচ; যে ম্যাচে মূল ব্যাটসম্যানদের সবাই ব্যার্থ সে ম্যাচ দেখেই তাকে বাদ দিয়ে দেয়া হল! এক ম্যাচ দেখে যোগ্যতা নির্ণয়ের মাপকাঠি শুধু আমাদের কর্তাদেরই রয়েছে!
জয় অনেক সময় অনেক কিছু আড়াল করে দেয়, কিন্তু এ জয় আড়ালতো করছেই না, বরং অনেকগুলো প্রশ্নের সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে। কর্তা মশাই যদি দলের উপকারের কথা ভেবে জবরদস্তি উন্নয়নের নামে ব্রিজ তৈরির ব্রত নিয়ে থাকেন তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য যে বিপদ অপেক্ষা করছে তা বলাই বাহুল্য।