আমরা জানি যে কোন জনবিরোধী ক্ষমতার পরাজয় নিশ্চিত। কিন্তু সেটা জেনেও যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা বাড়াবাড়ি করে। বাংলাদেশ সেই দৃশ্যই অবলোকন করছে। এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মূলত আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে; যে নির্বাচনের প্রধান সংকট নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা।
দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র জনসমর্থন ও ভোটার সংখ্যা মাথায় রাখলে, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। কাজেই এই সংকট মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকরী হলো জোটের রাজনীতি, যা ইতোমধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে। এই জোটের মাধ্যমে সরকারকে একঘরে করে চাপে ফেলে একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন করা গেলে তা হবে ঐতিহাসিক সাফল্য। কিন্তু অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে তাতে জোটের মতিগতি নিয়ে তৈরি হয়েছে নানান শঙ্কা। বিএনপিকে এই সংকটের সময় আরও নাজেহাল করতে জোটের একাংশের নেতাদের তৎপরতা নিয়ে বিএনপি সমর্থকরা বিরক্ত হতেই পারেন।
কামাল, বদরুদ্দোজা, রব ও মান্না গংদের বিএনপির ভোটের রাজনীতিতে কোনোই প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তারা। তাদের জনবিচ্ছিন্নতা নিয়ে অনেকেই বিরক্ত। কামাল জামানত হারানো আওয়ামী নেতা, বি চৌধুরী নিজ এলাকা মুন্সীগঞ্জে জামানত হারিয়েছিলেন। লক্ষীপুর এলাকায় আ স ম রবের ভোটে জেতার কোনো সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই বলে রবের ঘনিষ্ঠজনদের অভিমত। আর মান্না? মান্না নিজেই নিজের ভোটটি পাবে কিনা সন্দেহ আছে। তাছাড়া কামাল হোসেনের ভারতপন্থী পজিশন কারো অজানা নয়।
জাতীয়তাবাদীরা স্বাভাবিকভাবেই মনে করেন, বিএনপির জন্য কোনো জোটের প্রয়োজন নেই। কামাল, বদরুদ্দোজা, রব ও মান্না গংদের বিএনপির ভোটের রাজনীতিতে কোনোই প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তারা। তাদের জনবিচ্ছিন্নতা নিয়ে অনেকেই বিরক্ত। কামাল জামানত হারানো আওয়ামী নেতা, বি চৌধুরী নিজ এলাকা মুন্সীগঞ্জে জামানত হারিয়েছিলেন। লক্ষীপুর এলাকায় আ স ম রবের ভোটে জেতার কোনো সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই বলে রবের ঘনিষ্ঠজনদের অভিমত। আর মান্না? মান্না নিজেই নিজের ভোটটি পাবে কিনা সন্দেহ আছে। তাছাড়া কামাল হোসেনের ভারতপন্থী পজিশন কারো অজানা নয়। তাই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, কামাল-বদরুদ্দোজারা ভারতীয়দের উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করছে নাতো? এরা কোনভাবে আওয়ামীদের ‘বি টিম’ হিসেবেই কাজ করছে কি?
এইসব সন্দেহ আরও দৃঢ় হচ্ছে বিএনপিকে অগ্রহণযোগ্য শর্ত দেয়ার বিষয়টি দেখে। আমার নিজের ধারণা শুরুতেই এমনই ছিল। কারণ জোটের সাথে কামালদের অন্তর্ভূক্তি করে পরবর্তীতে এই আমলের অপরাধীদের রক্ষা করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি পরিকল্পনা থাকার কথা অনেকেরই লেখা-লেখিতে উঠে এসেছে। কিন্তু কোনোভাবেই এই ফাঁদে যেন জাতিয়তাবাদীরা পা না দিতে পারে, দলের তৃণমুল পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থকেরা তাই সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। বিএনপিতে জোট নিয়ে তেমন কোন বাড়তি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে সরকারবিরোধী যে কোন জোট ও আন্দোলনে স্বাভাবিক ভাবেই সমর্থন নিয়ে যাচ্ছে দলটি।
অক্টোবরের ১০ তারিখ, আবারও দেশ কি আবারও উত্তাল হয়ে উঠবে? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে বিরোধীদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করা হবে -এটা অনেকেই বলছেন। বড় বড় নেতাদের শাস্তির আওতায় আনা হতে পারে। এটাতে বিএনপি যে বিপদে পড়বে তা আদালতের রায় হওয়ার আগেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব অবশ্য বলে দিয়েছেন। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে কি হতে যাচ্ছে সামনে!
অনেকে মনে করেন এইসব প্রেসব্রিফিং টাইপের জোট দিয়ে হবে না, আন্দোলনের জন্য তৈরি থাকতে হবে সকল দেশপ্রেমিক জনগণকে। কঠিন আন্দোলন ছাড়া স্বৈরাচারী শাসনকে হটানো যাবে না।
সরকার কি পতন নিশ্চিত জেনেই আবার গণহারে ধরপাকড় ও গুম-খুন শুরু করেছে। অক্টোবরের ১০ তারিখ, আবারও দেশ কি আবারও উত্তাল হয়ে উঠবে? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে বিরোধীদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করা হবে -এটা অনেকেই বলছেন। বড় বড় নেতাদের শাস্তির আওতায় আনা হতে পারে। এটাতে বিএনপি যে বিপদে পড়বে তা আদালতের রায় হওয়ার আগেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব অবশ্য বলে দিয়েছেন। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে কি হতে যাচ্ছে সামনে!
তোফায়েল আহমেদ, নাসিম এবং কাদের সাহেবের মতো আওয়ামীলীগ নেতারা কর্মীদের কয়েকবার করে বলেই ফেলেছে যে, “ক্ষমতা হারানোর পর লক্ষাধিক আওয়ামী লীগের লাশ পড়বে, এমন কি টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েও যেতে পারবে না”। যদিও অনেকেই স্ত্রী-সন্তানসহ হাজার হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে পাচার করে ফেলেছে। কানাডার অন্টারিও প্রদেশের রিচমন্ডহিল নামের একটি জায়গা, যেখানে ধনী কানাডিয়ানদের বাস এবং বাড়ির দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার। সেই এলাকায় আওয়ামীলীগের অনেক নেতা বাড়ি কিনে স্ত্রী-সন্তানদের রেখেছে। এলাকাটি এখন বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের মাঝে বেগম পাড়া হিসেবে পরিচিত।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির এই উদ্ভ্রান্ত পরিস্থতিতে পুলিশ ও র্যাবের ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে কম সমালোচনা হচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি যেন দিন দিন খারাপই হচ্ছে। জণগন এইসব আইনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে সামনে আরও বিপদ অপেক্ষা করছে। এখন রাজনীতি করতে হলে সংঘবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।
চারদিকের এইসব দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ আজ ভীত। অন্যায়কারী সব সময় ভীত থাকে। জনসমর্থনহীন বিনাভোটের অবৈধ ক্ষমতাও চিরদিন থাকা সম্ভব হয় না। এই ভয় থেকেই এমন পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সংস্কৃতি কর্মীরাও আছেন বিপদে। কারণ এরাও সরাসরি এই ফ্যাসিবাদী শাসনে সাহায্য করেছেন। ফলে এই অঙ্গনেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতার পালা বদল হলে কি হবে এই আতঙ্ক আজ চারদিকে।
ক্ষমতার লোভ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা আন্তর্জাতিক ও কূটনীতিক পর্যায়ে একেবারেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সরকারের মান-মর্যাদা কোন পর্যায়ে নামলে একজন কুটনীতিক সশরীরে এসে সরকার প্রধানকে ধমক দিয়ে যেতে পারে। এমন ঘটনা একটি দেশের মান-মর্যাদা ও ভাবমূর্তির জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য হয়। যদিও এটি মার্কিনদূতের কুটনীতি শিষ্টাচার বহির্ভুত আচরণ। কিন্তু সরকারের মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা যখন শূন্যের কোটায় থাকে তখনই এমন আচরণের স্পর্ধা দেখাতে পারে একজন কুটনীতিক। তেমনই নিকৃষ্ট দুটি ঘটনা ঘটেছে গত সপ্তাহে।
অন্যদিকে সরকার নিজেদের জনপ্রিয়তার বেহাল দশা আঁচ করতে পেরেই তাড়াহুড়ো করে আমদানি করছে বিতর্কিত ইভিএম প্রযুক্তি। যা ইতোমধ্যে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।
আজ যে ভারত তাদের রাষ্ট্রর স্বার্থসিদ্ধির জন্য এক চক্রান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই অবৈধ ক্ষমতার আমল শুরু করেছিল সেই ভারতই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে দ্রুত ভারতের সাথে আরও বহু অসম চুক্তি হচ্ছে এই শেষ সময়ে।
এদিকে গত সপ্তাহে নেপালী একটি দৈনিক পত্রিকা বাংলাদেশে সামরিক শাসনের পূর্বাভাস দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবসরপ্রাপ্ত একজন মেজর জেনারেল এ ব্যাপারে অনেক তথ্য দিয়েছেন পত্রিকাটিকে। জানাগেছে, স্বৈরাচারী শাসনের উপর চরমভাবে বিরক্ত দেশের মানুষ। তরুণ সামরিক কর্মকর্তারাও খুশি নন।
যা হোক সব শেষে বলব, দেশকে বিদেশি দালালমুক্ত করার সংকল্প গ্রহন করতে হবে। ভারতের সাথে করা অবৈধ সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে। সেই সাথে গোটা জাতির সংকল্প থাকতে হবে, দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য এখনই সময় ঘুরে দাঁড়ানোর।