সময়ের স্রোতে বদলে যায় অনেক কিছুই। বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানকে গ্রুপে পাবার পর শ্রীলঙ্কা যখন রেকর্ডের নহন বসীনোর স্বপ্নে ব্যতিব্যস্ত তখন তাদের বাস্তবতার নিরেট জামিনে নামিয়ে এনে লজ্জা দিয়েছে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান। বাংলাদেশের পরের ম্যাচটি উদীয়মান আফগানদের বিপক্ষেই। সে ম্যাচটি নিয়েই কিছু কথা বলব এবার।
সময়ের প্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার চেয়ে এ মুহূর্তে আফগানরা যে ভালো ক্রিকেট খেলছে সেটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। আর তাদের এই ভালো খেলাটা কতটুকু ভয়ঙ্কর হতে পারে তার নমুনা বাংলাদেশ দেখেছে দু’দলের মধ্যকার শেষ টি টোয়েন্টি সিরিজে। ফরম্যাট বদলানোর সাথে সাথে আফগানরাও নিজেদের বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। সুতরাং লঙ্কা-বাংলাদেশ লড়াইয়ের চেয়ে কঠিন পরীক্ষা বাংলাদেশকে দিতে হবে আফগানদের বিরুদ্ধে। শুনতে বিটকেলে শোনালেও এটিই এখন বাস্তবতা।
বাংলাদেশের মূল দুশ্চিন্তার নাম নিঃসন্দেহে এই মুহূর্তে ইনজুরি। তামিম তো ছিটকেই গিয়েছেন। মুশফিকও খেলেছেন পেইন কিলার নিয়ে। সাকিবও শতভাগ ফিট নন। এবং বাস্তবতা হচ্ছে এদের কোনো বিকল্প বাংলাদেশের নাই। মুশফিক এবং সাকিব যে ঝুঁকি নিয়ে খেলছেন তাতে বড় ধরণের খেসারত দেয়ার আশঙ্কা থাকলেও নিরুপায় হয়ে তাদের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে।
ইনজুরির পরেই যে বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য চিন্তার সেটি হচ্ছে ব্যাটিং। তামিম থাকার পরেও ওপেনিংয়ে সমস্যা বহুদিনের। সৌম্য, ইমরুল, এনামুল হয়ে এখন লিটন দাঁড়াচ্ছেন ইনিংস শুরু করতে। তার সামর্থ্য নিয়ে সংশয় না থাকলেও সেটি সাফল্যে রূপান্তরিত করার সূত্রটি তিনি এখনো আয়ত্ব করতে পারেননি। এ অবস্থায় লিটনের সঙ্গী কে হবেন সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে যিনিই আসুক তার জন্য পরীক্ষাটি বেশ কঠিনই হবে।
মিডল অর্ডারে সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ এবং মিঠুনকে নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও সৈকতকে নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। তার যে খেলার ধরণ আর তিনি যে পজিশনে ব্যাট করতে নামছেন দুটোর মধ্যে সুতো বাঁধার কাজটি ঠিক মতো হচ্ছে না। বর্তমান যে মিডল অর্ডার রয়েছে তাতে সৈকতকে প্রমোশন দিয়ে উপরের দিকে খেলানোও অসম্ভব। সেক্ষেত্রে তার যোগ্য বিকল্প হতে পারে আরিফুল।
বোলিং ইউনিট নিয়ে আপাতত কোনো সমস্যা না থাকলেও নিখুঁত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আবশ্যক। কেননা, প্রতিপক্ষের সামান্য ভুলের সুযোগ নেয়ার জন্য আফগানিস্তানে এখন রয়েছে একাধিক ব্যাটসম্যান। শুরুতে ঝড় তুলতে সিদ্ধহস্ত সেহজাদ। মিডল অর্ডারে রয়েছে ভরসা করার মত একাধিক নাম। এবং ফিনিশিং দেয়ার জন্য রয়েছে নবী-রশিদরা। সেক্ষেত্রে বোলারদের হতে হবে সতর্ক।
ব্যাটিংয়ে পরীক্ষা নেয়ার জন্য রয়েছেন রশিদ-মুজিবরা। তাদের যোগ্য সঙ্গী নবী। এই স্পিনত্রয়ীকে সামাল দেয়া বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের জন্য কতটা কঠিন হতে পারে সেটি বাংলাদেশ টের পেয়েছে দু’ দলের মধ্যকার সর্বশেষ টি টোয়েন্টি সিরিজেই। যেখানে অফগান স্পিনে নাস্তানাবুদ হয়ে ওয়াশ হয়েই ফিরেছিল টাইগাররা।
তবে, যেহেতু ফরম্যাট বদলে যাচ্ছে সুতরাং রশিদ-মুজিবের বলে বলে রান নেয়ার তাড়াটা থাকবে না। আফগান পেস অ্যাটাক সে অর্থে আহামরি কিছু নয়। সুতরাং, শুরু থেকেই যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাটিং করা যায়, আশা করা যায় বেশ ভালো একটা স্কোরই করতে পারবে বাংলাদেশ।
হার্ডলসটা কঠিন হলেও অনতিক্রম্য না। আধারের ছায়া যেমন রয়েছে তেমনি আশার আলোও জ্বলার মতন বেশ কিছু জায়গা রয়েছে। ইকুয়েশনে মারাত্মক কোনো ভুল না হলে, ম্যাচটি কঠিন হলেও বাংলাদেশই শেষ হাসি হাসবে বলে আশা করা যায়। এ ক্ষেত্রে ওয়ান ডে তে বিগত সময়ের সাফল্য এবং অভিজ্ঞতাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।