দীর্ঘ চার ঘণ্টা আলোচনার পর ২০১৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন ও চলতি বছরের অক্টোবরে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। গত রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে অনুষ্ঠিত সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মার্চ মাসের মধ্যে নির্বাচন করার লক্ষ্যের কথা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর কর্তৃত্বে থাকা ছাত্রলীগ এবং ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা ছাত্রদলের কাছ থেকে শোনা যায় একই রকমের দাবি। উভয়কেই যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন করার কথা বলতে দেখা যায়। তবে ছাত্রদলের দাবি, নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এদিকে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সবচেয়ে সোচ্চার অবস্থানে থাকা বাম ছাত্র সংগঠনগুলো এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভার শেষে ডাকসু নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, নির্বাচনী কাজের পরিধি নিয়ে আমাদের প্রভোস্ট কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটি ইতোমধ্যে একটা নির্দেশনা দিয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে একটা নির্দেশনা আমাদের আগেই দেওয়া আছে। আমাদের টার্গেট ২০১৯ সালের মার্চ মাস।
ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহবাস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, হলে সহাবস্থান ও মধুর ক্যান্টিনে রাজনৈতিক চর্চা সবার জন্য উলন্মুক্ত। ছাত্র সংগঠনগুলোর সহবাস্থানের জন্য যা যা করা দরকার প্রাধ্যক্ষরা তা করবেন। সবাই অভিজ্ঞ, যা করার দরকার তা তাঁরা করবেন। আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নিষওেধাজ্ঞা নেই।
এসময় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কবি মুহম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
সভা শেষে সকল ছাত্র সংগঠনের নেতারাও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবেশ পরিষদের সভায় উঠে আসা বিভিন্ন দাবি ও প্রশাসনের আশ্বাসের কথা জানান তারা। সেখানে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন ও ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতকরণের দাবির কথা জানান।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোতে যখনই সহাবস্থান নিশ্চিত থাকবে, তখনই ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ হবে বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক সহাবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের দাবির মধ্যে ছিলো, আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতি করার যে স্বাভাবিক পরিবেশ, তা নিশ্চিত করতে হবে। হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। হলগুলোর ভীতিময় পরিবেশ দূর করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আসন বণ্টন করতে হবে। নির্বাচন করবে ছাত্র সংগঠনগুলো।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, “আমরা কোনো সময় বেঁধে দেব না। কারণ এটি নির্দিষ্ট করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তবে ডাকসু নির্বাচনটা যেন যৌক্তিক সময়ে হয়, সে দাবি আমাদের থাকবে। অনেকে এ বছরের নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছে। আমরা বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যখন করতে চায় , তখনই আমরা নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি”
প্রসঙ্গত, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান না থাকায় গত ১৫ই সেপ্টেম্বর বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল উপাচার্যের কাছে এই সভায় ছাত্রদল নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ছাত্রদলের প্রতিনিধি দলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে বিশেষ ব্যবস্থায় নিরাপত্তা দিয়ে আলোচনা সভাস্থলে নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সহকারি প্রক্টর আব্দুর রহিম, সোহেল রানা ও মাকসুদুর রহমান। বৈঠক শেষে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ এক সঙ্গে বের হয়ে আসেন। পরে গাড়িতে উঠার আগে ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসানকে জড়িয়ে ধরেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সবশেষে প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আবার একই গাড়িতে তাদের উঠিয়ে দেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজিব আহসান, ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকি, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা ছাড়াও জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট প্রভৃতি বিভিন্ন সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারাও মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেই নির্বাচন আর হয়নি। ছয় বছর আগের একটি রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে এবছরের ১৭ জানুয়ারি এক রায়ে হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সাত মাসেও নির্বাচনের কোনো উদ্যেগ দৃশ্যমান না হওয়ায় গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিস পাঠান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। জবাব না পেয়ে গত বুধবার তিনি হাই কোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন উপাচার্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।