মুশফিকে তাবাস্সুম, তামিমে অশ্রু

মুশফিকে তাবাস্সুম, তামিমে অশ্রু

মুশফিক যে বাংলাদেশের অন্যতম মাহির ব্যাটসসম্যান তা নিয়ে কখনোই সংশয় ছিল না। তবে একাধিকবার জয়ের আশা জাগিয়ে শেষ মুহুর্তে এসে তালগোল পাকিয়ে ফেলায় সমালোচকদের কঠোর সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে তাকে। কিন্তু দুবাইতে মুশফিক যা দেখালেন সেটি শুধু রানের সংখ্যার বিবেচনাতেই না, আরো একাধিক কারণে অনন্য হয়ে থাকবে।

দুবাইয়ের বিরুপ কন্ডিশনে ইনিংসে প্রথম ওভারেই ক্রিজে যেতে হয়েছে তাকে। ফিরেছেন ইনিংসের শেষ ওভারে। খেলেছেন ৩০০ বলের মধ্যে ১৫০ টি। কোনো শব্দই বোধয় জুতসই নয় ইনিংসটির মাহত্ব্য বোঝাতে। ম্যাচ শুরুর আগে মাঠে নামতে পারবেন কি না, সেটি নিয়েই ছিল সংশয়। পাজরের ব্যাথাকে পরাজিত করে অসাধারণ একটি ইনিংস উপহার দিলেন তিনি। যেটি শুধু রানেরই না মানের বিচারেও বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস হয়ে থাকবে।

মুশফিকের এ ইনিংসে দেখা গিয়েছে চমৎকার পরিণত বোধও। এর আগেও এমন পরিস্থিতিতে নেমে পাল্টা আক্রমণেই ভরসা করতে গিয়ে দলকে রক্ষার বদলে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে এসেছেন একাধিকবার। কিন্তু এ ম্যাচটিতে খেললেন পরিস্থিতির দাবী অনুযায়ী। কখনো ধীর লয়ে, কখনো প্বার্শ চরিত্র হয়ে কখনো চূড়ান্ত রকমের আক্রমণাত্বক হয়ে একাই যেন শেষ করে দিয়েছেন লঙ্কাকে। এমন পরিণত ব্যাটিং শুধু মুগ্ধই করে না, জানিয়ে দেয় মানও।

মুশফিকের ব্যাটিং যখন মুগ্ধতার শেষ সীমানায় নিয়ে গিয়েছে সমর্থকদের সেখানে তামিম ক্রিজে নামার সাথে সাথেই অশ্রুশিক্ত হয়েছেন অনেকেই। ম্যাচের শুরুতেই আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে হাসপাতাল ঘুড়ে আসা তামিম যে এশিয়া কাপই শুধু না লম্বা সময়ের জন্যই মাঠ থেকে ছিটকে গিয়েছেন সেটি ততক্ষণে সবাই নিশ্চিত। অথচ, এই তামিমই ম্যাচের অন্যতম মূল হিরো। কয় রান করেছেন বা কয় বল খেলেছেন সেটি নেহায়েতই গৌণ হয়ে গিয়েছে যখন ভাঙ্গা কবজি নিয়ে একহাতেই ব্যাট নিয়ে নেমে পরেছেন দলকে উদ্ধার করতে। তার এই সাহস, এই নিবেদন স্কোর বোর্ডে যোগ করেছে বাড়তি ৩২ রান। কিন্তু মানষিক শক্তি এবং দলের জন্য, দেশের জন্য নিজেকে সম্পুর্ণ রুপে উজার করে দেয়ার যে নজির তিনি গড়েছেন সেটি ব্যাখ্যাতীত। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা মুহুর্তই যেন উপহার দিলেন তিনি।

প্রিয় বন্ধুর এই নিবেদনকে বৃথা যেতে না দিয়ে আশ্চর্য নাজাকাতের সাথে লঙ্কান বোলারদের নিয়ে যেন ছেলেখেলা করলেন মুশফিক। চারটি ছয়ের তিনটিই তিনি মেরেছেন তামিম ক্রিজে নামার পরে। তামিমের এই নিবেদন যে পুরো দলের ওপরই প্রভাব ফেলেছে তা দেখা গিয়েছে ইনিংসের পরের পর্বে। নিজেদের সবটুকুই যেন ঢেলে দিচ্ছিলেন টাইগাররা। এক সময় বাংলাদেশের টাইগার ডাক নামটি নিয়ে পরিহাস হলেও কালকে তামিম-মুশফিকরা যেন দেখিয়ে দিলেন তারা আসলেই টাইগার। যারা হারার আগে হার মানে না।

হাথুরু মুশফিকের শেষ অধ্যায়টি ছিল তিক্ততায় পরিপূর্ণ। তাই হাথুরুর দলের বিপক্ষে মুশফিকের নিজেকে প্রমাণের বাড়তি একটি তাড়না বোধয় কাজ করে। সে বাড়তি তাড়নাতে এমন খেললেন যে পুরো লঙ্কান দল মিলিয়েও তার একার রান করতে পারলো না।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময় যদি মুশফিক দর্শকদের মুখে হাঁসি ফুটিয়ে থাকেন তবে তামিম সেটিকে করেছেন অশ্রুশিক্ত। এ অশ্রু বেদনার না; গর্বের, আনন্দের, অহংকারের।