বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বিএনপি’র ১৫ দফা প্রশংসার দাবি রাখতেই পারে। কেননা, এতে করে দলটি ‘সব’ রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করার আশা প্রকাশ করেছে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ১২টি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এতে করে খর্বিত হয়েছিল রাজনীতি করার অধিকারও। এই ১৫ দফার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি রাজনীতিতে রচিত হবে ‘জাতীয় মেরুকরণ’- এমনই ধারণা দলটির নেতা-কর্মীদের।
১৫ দফার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে না চাইলেও স্বীকার করেছেন খসড়া তৈরির কথা। জাতীয় মেরুকরণের এই দফাগুলোর সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিএনপির ছয় দফাও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনা। দেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করা। তারা মনে করেন, এ কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের দরকার আছে এবং নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির প্রয়োজন আছে। তা ছাড়া ভোটের দিন মানুষ যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, তেমন পরিবেশ তৈরি করা দরকার। পাশাপাশি ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সেটিও ১৫ দফার মধ্যে আনা হয়েছে। এখন অন্য দলগুলো যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চায়, তাদের দাবিগুলোকে এক করে একটি বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। তারা এ মাসের শেষ দিকেই কাঙ্ক্ষিত ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনের আশা করছেন। এরপরই দাবি দাওয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
বিএনপির ১৫ দফা দাবিকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১. বিরোধীদের ওপর জুলুম, হামলা, মামলা, হয়রানি বন্ধ ও বন্দীদের মুক্তি দেওয়া। ২. নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি। ৪. ক্ষমতায় গেলে যেসব কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বিএনপির ১৫ দফা দাবি
১.
(ক) বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
(খ) সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
(গ) নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা আদায়।
(ঘ) পুরোনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করা।
(ঙ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের ন্যায্য আন্দোলন এবং সামাজিক ও গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে গ্রেপ্তার ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির নিশ্চয়তা আদায়।
২. ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া।
৩. আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা।
৪. আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৫. নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
৬. ভোটকেন্দ্রে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ করা।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।
৮. রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসানে ঐকমত্য গঠন করা।
৯. রাষ্ট্রকে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।
১০. রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।
১১. স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।
১২. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার ও কার্যকর।
১৩. নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা।
১৪. সর্বনিম্ন আয়ের মানুষের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে আয়ের বৈষম্যের অবসান করতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ধারণ করা।
১৫. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।
সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ছাড় দিয়ে হলেও তাঁরা বৃহত্তর ঐক্য করতে চান। এতে করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটও বৃহত্তর ঐক্য গড়তে বিএনপির প্রচেষ্টায় সায় দিয়েছে । অন্যদিকে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের সাথে আলোচনাও অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি আভ্যন্তরীন কূটনীতিতে কতটুকু সফল হয় এবং ‘জাতীয় ঐক্য’ গঠিত হলেও তা আগামী নির্বাচনের বিষয়ে কতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারে।