বাদ পড়া নাগরিকদের পাঠানো হবে বাংলাদেশে, জানালেন বিজেপি নেতা

আসাম সংকট

বাদ পড়া নাগরিকদের পাঠানো হবে বাংলাদেশে, জানালেন বিজেপি নেতা

অবশেষে অনুমানই সত্য হচ্ছে। আসাম সংকট পরিণত হতে যাচ্ছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে। আসামে নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়া ৪০ লাখ নাগরিককে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার কথাই জানালেন ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি। এতদিন নীরব থাকলেও এবার স্পষ্ট জানালেন তাদের এই অভিপ্রায়।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব  রাজধানী দিল্লিতে এনআরসি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় এই নীতির কথা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করলেন। তিনি বলেন, “ এখানে আমাদের পরিকল্পনা হল তিনটে ডি – ডিটেক্ট, ডিলিট ও ডিপোর্ট। অর্থাৎ প্রথম ধাপে অবৈধ বিদেশী কারা, তাদের শনাক্ত করা হবে (ডিটেক্ট) – যেটা এখন চলছে। তারপর ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া ও বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে (ডিলিট)। আর তারপর আমরা তাদের বাংলাদেশে ডিপোর্ট করব! ”

এর আগে নানাভাবে সনাক্তকারীদের ‘বাংলাদেশি’ বলে উল্লেখ করলেও বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যাপারে স্পষ্ট কোন মন্তব্য করেনি দলটির নেতৃবৃন্দ। কিন্ত এবার সেটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করলেন তারা। ডিপোর্ট করার এই সিদ্ধান্তের ঘোষণার পর বিজেপির অন্যান্য নেতারা করতালীর মাধ্যমে স্বাগত জানায়। আলোচনাসভায় হাজির ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও। তিনি মন্তব্য করেন, অবৈধ বিদেশিদের খুঁজতে আসামের পর এবার সারা ভারতেই এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করা উচিত।

অন্যদিকে, রাম মাধব যেভাবে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন তাতে স্পষ্ট হয় যে তারা এই নিয়ে ইতোমধ্যে বহুদূর এগিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, “অনেকে হয়তো প্রশ্ন তুলবেন, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ, সেখানে কীভাবে আপনি এই লোকগুলোকে ডিপোর্ট করবেন? আরে, বন্ধু তো আপনাদের সবাই – তাই বলে কি তাদের যে সব লোকজন অবৈধভাবে এখানে আছেন তাদের কি ফেরত পাঠানো যাবে না?”

সুতরাং এটাও নিশ্চিত যে বিজেপি বন্ধু রাষ্ট্রের ব্যাপারটা মাথায় রেখেই এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। আর রাম মাধব বিজেপি’র প্রভাবশালী নেতা হওয়ায়, ডিপোর্টের বিষয়টি গুরুত্বের সাথেই দেখতে হচ্ছে।

এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ সরকার এই সংকট কিভাবে মোকাবেলা করেন। যদিও বন্ধু রাষ্ট্রকে তারা যা দেবার তা ইতোমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিয়মিতই ভারতের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন। গতকালই ভিডিও কলে কথা বলেছেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমারতো বলেছেনই যে এনআরসি’র সময় থেকেই তারা বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করে আসছেন।

একথা সত্য যে, বাংলাদেশ সরকার কূটনীতিতে ব্যর্থ হলে, অবৈধ অভিবাসীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে ভারত। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ৪০ লাখ মানুষের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। এই সংকট রোহিঙ্গা সংকটের চেয়েও বেশি বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।