আশার আলো জ্বালে দর্শকরা, হতাশ করে অন্ধ বাফুফে

আশার আলো জ্বালে দর্শকরা, হতাশ করে অন্ধ বাফুফে

যে গুলিস্তান সিনেমা হলের নামে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানের নামকরণ সেই গুলিস্তান হলের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে বহু আগেই। তবু, ঢাকা নিয়ে গল্প করতে গেলেই গুলিস্তানের স্মৃতিচারণ আবশ্যক। ক্রীড়াপ্রেমীরা অবশ্য হল থেকে আরো একটু সামনে গিয়ে মজেছিলেন ঢাকা মাঠের প্রেমে। সেই ঢাকা স্টেডিয়াম নাম বদলে হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। গুলিস্তানেরও সেই আগের রূপ আর নেই।

খেলার পাতায় গুলিস্তানের গপ্পে মজে যাবার কারণ চলমান সাফ ফুটবল। ঢাকা স্টেডিয়ামকে ঘিরে যে গল্প শুনে বড় হয়েছে একটি প্রজন্ম তাদের কাছে এ মাঠে কানায় কানায় দর্শক এক অলীক কল্পনার মতনই। নেপাল-বাংলাদেশ ম্যাচ; গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই কালোবাজারীদের হাঁক কানে আসল। যে মাঠে ডেকে দর্শক আনা যায় না বলে জ্ঞাত সে মাঠের প্রবেশ দুয়ারে কালোবাজারীদের কাছে টিকেটের জন্য দর্শকদের ধরণা দেয়ার দৃশ্য বিস্ময়করই বলা যায়।

মাঠে ঢুকতেই বিস্ময়ের মাত্রা যেন আরো বাড়লো। কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি। সামান্য তিল ধারনের ঠাঁই নেই। একপাশে বাংলাদেশের দর্শকরা বাজনা বাজিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে সগৌরবে। অপর পাশে বিশাল জন সমুদ্রের মাঝেও সমান তেজে গর্জন করে যাচ্ছে গুটি কয়েক নেপালী দর্শক। ফুটবল খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করার এক আদর্শ পরিবেশ। পুরো ম্যাচ জুড়েই চলেছে দর্শকদের উল্লাস। নেপাল গোল করার পর বাংলাদেশের সমর্থকদের স্বর ক্ষণিকের জন্য স্তিমিত হলেও ক্ষণিক পরেই আবারো জেগেছে। কিন্তু তা প্রভাব ফেলতে পারেনি দলের খেলায়।

ম্যাচের শেষ দিকে পরাজয়ের হতাশা থেকে শুরু হলো বোতল ছোড়ার উৎসব! বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও এমন কিছু নিশ্চিতভাবেই কাম্য না। উপরের বয়ানে বেশ কিছু নেতিবাচক দিক এসেছে; যেমন কালোবাজারী, বোতল ছোড়া। তবু, প্রাণহীন বলে পরিচয় পেয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এ দৃশ্য গুলোই বেশ লাগছিল যেন। খেলোয়াড়রা হয়তো প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি। তবে, টানা দু ম্যাচ জিতে আশি-নব্বইয়ের দশকের ঢাকার মাঠকে পুরোনো চেহারায় কিন্তু ফিরিয়ে এনেছিল তারাই।

একটু বাফুফের ভূমিকা খতিয়ে না দেখলে পুরো বিষয়টি কেমন যেন অসম্পুর্ণ থেকে যায়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাঠ। এ মাঠে বসার ব্যবস্থা বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কোন দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পড়ে তা জানার বেশ কৌতূহল রয়েছে। টয়লেট নামক যে স্থান রয়েছে, তা ব্যবহারতো দূরের কথা, চিন্তা করলেই যে কারো গা গুলিয়ে আসবে। বসার জন্য যে সিট, তাকে আর যাই হোক সিট বলা চলে না। শ্রী তো নেইই, ভেঙ্গেচূরে যে অবস্থা তাতে কেউ জবরদস্তি করে বসার চেষ্টা করলে তার গন্তব্য যে হাসপাতালে হবে তা বলাই বাহুল্য। দামি গাড়ি হাকিয়ে ভিআইপি গ্যালারিতে বসে ম্যাচ দেখার নামে ঝিমানো কর্তাদের অবশ্য এসব জানা আছে বলে মনে হয় না।

সাফ গেমসে বাংলাদেশের ম্যাচগুলোতে বিপুল দর্শক সমাগমই বলে দেয়, এ প্রজন্মও পূর্ববর্তীদের সিলসিলা জিইয়ে রাখতে জানে। তারাও মাঠকে ভালোবাসে, গলা ফাটিয়ে সমর্থন জানাতে জানে নিজেদের খেলোয়াড়দের। এ দৃশ্য দেখে বাফুফে যদি কৃতিত্ব দাবি করে তবে তা হবে চরম হঠকারিতা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিনও বলতে গেলে কোনো প্রচার ছিল না। অথচ, ক্রিকেট বিশ্বকাপকে ঘিড়ে বিসিবি যেন পুরো ঢাকাকেই সাঁজিয়েছিল নতুন করে। হ্যা, বিশ্বকাপের সাথে সাফের তুলনা চলে না, কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় সাফই বাংলাদেশের ফুটবল দলের জন্য বিশ্বকাপের সমান। সে হিসাবে এই হেলা জবাবদিহিতার দাবি রাখে।

ভরা গ্যালারি যদি আশার আলো দেখায়, ঘি মাখনে চকচকে কর্তাদের মুখশ্রী পরক্ষণেই হতাশার চাদরে তা ঢেকে দেয়। দর্শক মরেনি, তরুণরাও বিমুখ না। তবু, যে দর্শক খরার অযুহাতে ফুটবলের বেহাল দশার কাহিনী কর্তারা বয়ান করেন তা নির্লজ্জ মিথ্যাচার। পরিতাপের বিষয় হলো, এদের হাতেই জিম্মি ফুটবল!