আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম ‘নামাজ’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য নামাজের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দিয়েছেন। কারণ, একমাত্র ইবাদত নামাজ; যা পালনের মাধ্যমে মানুষের জন্য অসংখ্য কল্যাণের দরজা খুলে যায়। অথচ যথাযথভাবে নামাজ আদায় না করলে এ নামাজ তার আদায়কারীকে ভর্ৎসনা করে।
আবার নামাজ আদায়ের ফলে দুনিয়ার সব খারাপ কাজের পথও বন্ধ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ সব ধরনের অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে।’
সুতরাং যারা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সঙ্গে যথাযথভাবে আদায় করে, তারা সত্য ও সঠিক পথে সন্ধান পাবে। পক্ষান্তরে অনিয়মিত নামাজ আদায়কারীদের ব্যাপারে রয়েছে কঠোর থেকে কঠোরতম হুঁশিয়ারি।
যারা নামাজের ব্যাপারে গাফেল বা অলস, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। আল্লাহ তাআলা বলেন- `এরূপ নামাজিদের জন্য বড় সর্বনাশ যারা স্বীয় নামাজ হইতে গাফেল। (সূরা মাউন : আয়াত ৪,৫)
নামাজের ব্যাপারে সতর্কতা
নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়া অনেক উত্তম। কিন্তু তাতেই যথেষ্ট নয়; নামাজকে নিয়ম অনুযায়ী, যথাযথভাবে এবং সহিহশুদ্ধভাবে না পড়লে সে নামাজ গ্রহণযোগ্যও নয়। কারণ নিয়মবহির্ভূত নামাজ পড়া, অশুদ্ধ নামাজ পড়া নামাজ পড়া, না পড়ারই সমতুল্য।
নামাজে অবহলোকারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন ফেরাউন, কারুন, হামানসহ ইসলাম বিদ্বেষীদের সঙ্গী হবে। সুতরাং নামাজের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ব্যাপারে অলসতা না করে যথা সময়ে যথাযথ নিয়মে নামাজ আদায় করে আল্লাহর রহমত বরকত কল্যাণ লাভ করা জরুরি।
নামাজে উদাসিনতার ফল
এমন অনেক লোক রয়েছে যারা ইচ্ছা করেই নামাজ পড়ে না। আবার অনেকে যথারীতি নামাজ আদায় করলেও তাদের সুরা কেরাত বিশুদ্ধ নয়; এমনকি সুরা কেরাত শুদ্ধ করার চেষ্টাও করে না।
যারা কষ্ট করে ওয়াক্ত মতো জামাআত ঠিক রেখে নামাজ আদায় করছে; অথচ সুরা কেরাত শুদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো চেষ্টা করে না; তাদের এ কষ্ট ও নামাজ আদায় নিষ্ফল কাজ। এ সব লোকের নামাজকে তাদের দিকে ছুঁড়ে মারা হবে।
আবার অনেক নামাজি এমন রয়েছে, যারা কষ্ট করে নামাজে উপস্থিত হয় ঠিকই; কিন্তু তাদের নামাজের রোকজনগুলো সুরা, কেরাত, রুকু-সেজদা, তাসবিহ-তাহলিল, তাশাহহুদসহ যাবতীয় বিষয়গুলো যথাযথভাবে আদায় করে না। হাদিসের ভাষায় তারা নামাজ চোর। তাদের নামাজ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
‘সব চেয়ে বড় চোর হলো সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, কিভাবে নামাজে চুরি করা হয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যথাযথভাবে রুকু-সিজদা না করা এবং সহিহভাবে কুরআন না পড়া।’ (মুসনাদে আহমাদ)
নামাজ তার নামাজিকে অভিশাপ দেয়
যারা সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে না সে সব লোকদেরকে নামাজ ভর্ৎসনা করতে থাকে। তাদের নামাজকে পুটলি বানিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। হাদিসে এসেছে- ‘আর যখন নামাজে রুকু-সেজদা ও কুরআন পাঠ সহিহভাবে করে না, তখন নামাজ তাকে বলে, তুমি যেমন আমাকে নষ্ট করলে, আল্লাহও তোমাকে নষ্ট করুক। অতঃপর তা অন্ধকারে আচ্ছন্ন অবস্থায় আকাশে উঠে যায়। সে নামাজের জন্য আকাশের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর তাকে পুরনো কাপড়ের মতো গুটিয়ে নামাজির মুখের ওপর ছুড়ে মারা হয়।’ (নাউজুবিল্লাহ)
সুতরাং মানুষের উচিত আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা করে সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করার পাশাপাশি সুরা-কেরাতগুলো শুদ্ধ করে নেয়া। সঠিক নিয়মে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার মাধ্যমেই সম্ভব আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।