জোনাকিরা নিজ আলোয় জ্বলে
বৃষ্টি রঙের শাড়ী পাবো কই
বলবে?
আজ যে আমার সারাটা রাত শ্রাবণ উৎসব
তুমি বলেছিলে আমি যখন বৃষ্টিতে হারাই তখন আমি বৃষটি রঙের পরী হই,
বিশ্বাস করো এটা বললে সবাই আমাকে পাগলী বলে।
আমি হেঁটে যাই একাধারে দোলনচাঁপা আর হাস্নাহেনা
বাগানে, মোমবাতি, বিদ্যুৎ, টর্চলাইট কিছুই নেই,
জোনাকিরা ঝিঁ ঝিঁ করে বলছিল আছিতো আলো দিয়ে
তোমার চরণে চরণে
সেকি চরণে কেন? তোমরা আমার আঁধার রাত্রির দেবদেবী, তোমাদের ছোট করে দেখার সাহস
কার আছে বলো?
নিজ আলোয় তোমরা জ্বলো উড়ে উড়ে,
আমি এখন জোনাকি আলোয় শ্রাবনের কলসি,
শুধু কবিতা লিখে যাব,দোলনচাঁপার ঘ্রাণে হৃদয়চাপ
বড় বেশী,হাস্নাহেনা গন্ধে সর্পবিষ ঠোঁটে উত্তাল,
আজ শ্রাবণের কবিতার অক্ষরগুলো মুছে যাবে
বৃষ্টিমেয়ের কলমে,
দোলনচাঁপা, হাস্নাহেনা,জোনাকিরা সারারাত ওদের
প্রকৃতিপৃষ্টায় লিখে রেখে গেল কবিতাচয়ন।
প্রতি শ্রাবনে ওরা আসবে চুপিচুপি নতুনকাব্যে,
জোনাকীরা আবার আসবে নিজ আলোয়
আমার অন্ধকার মুখে আয়না তুলে।
জলমন
তবুও এক আকাশ কুয়াশাজল প্রতিরাতে
আমার বসন ভেজাতো,অঙ্গও থেমে যেতো
তৃষনা মিটায়ে। শুকনো জমিনে পুঁথি গেঁথে
আসনের পিপাসারা শিশিরে জলমন ঝাপ,
কুয়াশাজল নিপুণ করে ধরে রাখে আঁখির
কাজলশিল্প, শিল্পীরা বন্ধদমে ফেরারিচাদরে
মায়ারখেলায় বাঁচায়।
আঁখিজল ফোয়ারাবাদ্যে ইতরের সাধন
চেনায়। আঘাতের বজ্রী হস্তচাবুকে বন্যতার
ছায়াসাথি,মায়াবীমুখে ব্যাথানিবারক বরফ
টুকরোগুলোর গলন, আঁখিজলে জ্বলেজ্বলে
ফুলে উঠে রোদনের কাঁটালবনের এক দ্বীপ।
জানি তুমি আবার আসবে জমিন ভেজায়ে
আমাকে খুঁঁজে নিও জমিনের তলটায়।
ঝড়ের পরে
তবুও ঝড়ের জন্য অপেক্ষা
ঝড় কিন্তু এসেছিল, সে ঝড়ে প্রাণ হলো খড়ি
বিদায়বাঁশী দুর্বোধ্য,মস্তিষ্কে নির্যাতন।
শুরু হয় নতুন স্বপ্ন পরজন্মপথে,
কত প্রিয়নামে তোমার ডাকগুলো মধুভাষ্য হতো
প্রাণেশ্বরী ডাকে খাঁচার রক্তনালী প্রবাহিত হয়ে
লাল নদীতে আর বাঁচেনা
তোমার ঝড়ে এত তাপদাহ যে এক সমুদ্রও
শীতল করতে পারেনি,
প্রাণে প্রাণে দর কষাকষি
হেরে যাই বারবার তোমার একশো কবিতার
সব ক’টা পৃষ্ঠায়।
ঝড় কেনো আসছে না?
আমের মুকুলের ঘ্রাণ শুকে শুকে
আমি ঝড়ের পথেই হাটছি
শূন্যমন আকাশে ঘূর্ণমান।
নগরউপচানো বিদ্রোহী বাতাসের গতিবেগে
প্রাণেশ্বরীকে খুন করবো,
সে যে বেঁচে আছে তোমার ঝড়ের পরও
নকশাতারায় খুঁজতে খুঁজতে চাঁদ হতে চোখ
দূরে সরে যায়।
পরজন্মপথে রশ্মিজালে আটকাবো তোমার
নিথর দেহ,
চাঁদের আলোয় লকলকে কলমিবিছানায়
নিঃশ্বাসগুলো দুজনে খুলে দেবো,
মধ্যপুকুরে দুটো ডুবকে একহৃদয়ে বাঁধবো
বলে জলের ভাঁজে একশো কবিতা উৎসর্গ
করবো, বছরের শেষ স্নান সেরে,
ঝড় কিন্তু আবারও এসেছিল
কারণ ওটাই ছিল শেষ নৌকা।
নিঃশ্বসন
আমি আর কিছুই মনে করতে চাই না,
বাবার বাড়ী,বন্ধুদের বাড়ী,তোমার আর
আমার চিঠিগুলো,আমাদের সংসারের
বাসাগুলো,ট্রেনের ঝিকঝাক অপেক্ষাগুলো,
ছবিগুলো,গল্পগুলো,
পথগুলো, কলিংবেল,
হাড়িপাতিল, নাহ্ কিচ্ছুনা,
এমনকি জন্ম দেবার অনুভূতিগুলোও নাহ্।
আমার শুধু বর্তমান টানতেই স্বাভাবিক লাগে
আগের কোনো কিছুকেই নিজের মনে হয়না,
তবুও ছুটে গিয়েছিলাম
আমার ডাকাতিয়া নদীটার বুকে গান গাইতে,
সুখের ঘ্রাণগুলো নিতে গিয়ে
আমার বুকের মধ্যে জীবনটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
হঠাৎ
আমার হাতে একটা অবস হৃদয় জমাট বেঁধে
পাড় থেকে গভীর নিঃশ্বাস সমর্পণ করলো,
লাল-গভীর সূর্যাস্ত থেকে হেঁটে হেঁটে
একটা সকালের বাতাস ছুঁয়ে
আবার শ্বাসে শ্বাস ঘসলাম।