চীন যে আগামীতে অর্থনৈতিক বিশ্বকে শাসন করতে যাচ্ছে, তা এখন অনেকটাই পরিস্কার। আর সেই শাসনে অস্ত্র যে ‘সিল্করুট’ তাও নিশ্চিত। আর এই সিল্করুটের স্বার্থে একের পর এক বিভিন্ন দেশকে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আর সে কারণেই পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ ছিল, চীন আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলিকে ঋণের জালে জড়াচ্ছে। অনেকে ধারণা করছে, চীন হয়তো সেখানে আধুনিক উপনিবেশ করতে চায়। অবশেষে আফ্রিকায় অর্থনৈতিক ভূমিকা নিয়ে মুখ খুললেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। জানালেন, আফ্রিকায় কোন ‘লোক দেখানো’ প্রকল্পের কাজে হাত দেননি তারা। বরং ওই দেশগুলির আর্থিক-পরিকাঠামোগত উন্নয়নই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে শুরু গতকাল শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী আফ্রো-চীন শীর্ষ সম্মেলন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রধানেরা সেই উপলক্ষে এখন বেইজিংয়ে। দু’দিনের সম্মেলন উপলক্ষে বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোসা, জ়াম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এডগার লঙ্গুরা। রয়েছেন বিভিন্ন চীনা বাণিজ্যিক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাও। সেখানেই আজ ৪ সেপ্টেম্বর শি জিন পিং বলেছেন, আফ্রিকায় কোনও উপনিবেশ গড়ার ভাবনা তাদের নেই। সেখানকার দেশগুলির আভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক বিষয়েও চিন নাক গলাতে চায় না। তবে দরিদ্রতম যে সব দেশে চীনের প্রকল্প রয়েছে, তার একমাত্র লক্ষ্য সেই দেশগুলির আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়ন। এর বাইরে চীনের কোনও স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে না সেখানে।
চীনা প্রেসিডেন্ট আজ জানিয়েছেন, আফ্রিকাকে ছ’হাজার কোটি ডলার আর্থিক অনুদান দেবে বেইজিং। ২০১৫ সালে আফ্রিকার দেশগুলিকে একই পরিমাণ ঋণের প্রস্তাব দিয়েছিল বেইজিং। আর ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আফ্রিকাকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ হাজার ছ’শো কোটি ডলার। শি জিন পিংয়ের আজকের অনুদান ঘোষণায় তাই খানিকটা বিব্রত অন্যান্য শক্তিশালী রাষ্ট্র। পশ্চিমা দেশগুলো বটেই, চীনের পড়শি ভারতেরও দীর্ঘদিনের অভিযোগ, অর্থের প্রলোভন দেখিয়েই আফ্রিকায় ধীরে ধীরে অন্য সব দেশের জমি কেড়ে নিচ্ছে চীন। শি জিন পিং অবশ্য তাতে খুব একটা বিচলিত নন। বরং তিনি চীনা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে বলেছেন, যারা ওই সব দেশে নিজেদের প্রকল্প গড়ে তুলছেন, তারা যেন সেখানকার স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস ও ভাবাবেগকে মর্যাদা দেন।
মূলত, চীনের শত্রুরাষ্ট্রগুলো চীনের ‘সিল্করুট’ প্রকল্পকে তাদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে আর তাই পৃথিবীব্যাপী চীনে বিনিয়োগকে নানাভাবে বিতর্কিত করে তুলছে।