বিল নিকোলসন : যার হাত ধরে টটেনহাম পেয়েছিল সোনালী প্রজন্মের স্বাদ

বিল নিকোলসন : যার হাত ধরে টটেনহাম পেয়েছিল সোনালী প্রজন্মের স্বাদ

টটেনহাম হটস্পার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পাওয়ার হাউজ, শিরোপার অন্যতম দাবিদার। সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ ক্লাবটি পূরণ করবে তাদের ১৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৮৮২ সালে জনা এগারো স্কুল বালকের হাত ধরে যে পথচলার শুরু হয়েছিল তারপর কালের পরিক্রমায় গত হয়েছে প্রায় সার্ধ্বশতবর্ষ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জবান পাঠকদের জন্য থাকছে তাদের সম্পর্কে জানা অজানা নানান তথ্য। যার ধারাবাহিকতায় আজ থাকছে বিল নিকোলসনের গল্প, যিনি ক্লাবের স্বর্ণযুগের প্রধান কান্ডারি…

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্যার ম্যাট বাসবি, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন কিংবা আর্সেনালের আর্সেন ওয়েঙ্গার। এভারটন ভক্তদের কাছে ডেভিড ময়েস আছেন অনেকটা নিয়ে। উপরের চারজনই ক্লাবগুলোর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে। শেষেরজন বাকি তিনজনের মতো সফল না হলেও এভারটনের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন এগারো বছর! ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেরই ক্লাব টটেনহাম হটস্পার। প্রায় সার্ধশতবর্ষী ক্লাবটিতে কোচ এসেছেন, কোচ গিয়েছেন। এর মাঝে একজন আজীবনের জন্য পাদপ্রদীপের আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন। ‘উইলিয়াম বিল এডওয়ার্ড নিকোলসন’; উপরের তিনজনের মতো সফল, উপরের চারজনের মতো ক্লাবের ইতিহাস বইয়ে ঢুকে গেছেন। রয়েছেন আবেগের অনেকখানি জুড়ে।

এখানে আসা প্রতিটি খেলোয়াড়, হোক সে বড় তারকা কিংবা মাঠকর্মীর সন্তান, তাকে অবশ্যই ক্লাব অন্তঃপ্রাণ হতে হবে। নিজের পারফর্মেন্সে কখনোই তুষ্ট হতে পারবে না এবং পরাজয়কে অপছন্দ করতে হবে

— বিল নিকোলসন

কোচ হিসেবে যখন কেউ এভাবে বলতে পারে তখন দলের সাফল্য অনিবার্য।

১৯৫৮-১৯৭৪ পর্যন্ত টটেনহামে ছিলেন বিল, ক্লাবটি তাদের স্বর্ণযুগ কাটায় সে সময়টাতেই। বিলের অধীনে প্রথম দল হিসেবে এক মৌসুমে দেশীয় এবং মহাদেশীয় শিরোপা জেতার অনন্য কীর্তি গড়ে স্পার্সরা। ১৬ বছরে ৮টি মেজর, ২টি নন-মেজর শিরোপা আর গোটা তিনেক কমিউনিটি শিল্ড জিতিয়ে বিল পেয়ে গেছেন অমরত্ব।

বিল নিকোলসনের জন্ম ১৯১৯ সালে, নর্থ ইয়র্কশায়ারে। ১৯৩৮ সালে পেশাদার ফুটবলে পদার্পণ। ক্লাবের নাম টটেনহাম। তারপর ১৯৫৫ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ান হোয়াইট হার্ট লেন, সাদাজার্সি গায়ে চাপান ৩১৪ বার। ১৯৫১ তে টটেনহামের বিখ্যাত ‘পুশ অ্যান্ড রান’ এর অংশ বিল, যে মৌসুমে প্রথমবারের মতো লিগ শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ পায় দল। কোচ হিসেবে প্রথম দুই মৌসুম খালি হাতেই থাকা নিকোলসনের সাফল্যযাত্রা শুরু হয় ১৯৬০/৬১ মৌসুম থেকে, সঙ্গে স্পারদের পুনর্জন্ম। সেবার এফএ কাপ জিতিয়ে ঘুচান দশ বছরের শিরোপাখরা, যা ছিল চার দশক পর তাদের এফএ কাপ জয়!

ভদ্রলোক তার কোচিংয়ে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন। তার অধীনে লন্ডনের ক্লাবটি আস্বাদন করে বহু প্রথমের স্বাদ! ১৯৬৩ সালে তাদের একমাত্র ইউরোপিয়ান কাপের টাইটেলটি ছিল বিংশ শতাব্দীতে কোন ব্রিটিশ ক্লাবের ফার্স্টএভার ইউরোপিয়ান টাইটেল জয়। ইউরোপের দুটো ভিন্ন টুর্ণামেন্টে ট্রফি উঁচিয়ে ধরা প্রথম ব্রিটিশ ক্লাবও টটেনহাম। একাধিকবার লিগ কাপ জেতার পথ দেখিয়েছে তারাই। ১৯৬০/৬১ মৌসুমে লিগের প্রথম ১১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড আজ অব্দি স্পার্সদের দখলে!

কোচিং পরবর্তী সময়ে টটেনহামের টিম কনসালটেন্টের দায়িত্ব পালন করা বিল পান ‘মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দি ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার’ খেতাব। ২০০৪ সালে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করলেও টটেনহাম ক্লাবকে সোনালি স্বাদ দেয়া এনে দেয়া উইলিয়াম নিকোলসন ক্লাবের প্রতিটি ধূলিকণায় বেঁচে রবেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে।