রোনালদো-মেসির রাজত্বে হানা দিতে পারবেন মদ্রিচ?

রোনালদো-মেসির রাজত্বে হানা দিতে পারবেন মদ্রিচ?

ইউয়েফার এ্যাওয়ার্ড নাইটে ম্যাজিক দেখালেন বলকান ম্যাজিশিয়ান লুকা মদ্রিচ। ইউয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সাথে জিতে নিয়েছেন বর্ষসেরা মিড ফিল্ডারের খেতাবটিও। রাতটি মাদ্রিদময় হলেও বিশেষ সঙ্গত কারণেই আলোচনার শীর্ষে মদ্রিচ। মেসি-রোনালদোর দশকের রাজত্ব ভাঙ্গার সম্ভাবনা বহু দিনের মধ্যে তিনিই তৈরি করতে পেরেছেন। ইউয়েফার বর্ষসেরার খেতাব তার প্রথম ধাপ।

পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় যাবার আগে একটি পুরোনো দিনের গান মনে পড়ে গেল, গায়কের নামটি মনে না থাকলেও গানটি মনে গেথে আছে বেশ করেই। “আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে…”। ক্রীড়া জগতে গানের জিকর কেন করলাম সেটি দিয়েই শুরু করি। মদ্রিচের বর্ষসেরা হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রোনালদোর এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেস। পরিসংখ্যান হাজির করে হোর্হে তার মক্কেলকেই যোগ্য বলে দাবি করার পাশাপাশি ইউয়েফার সিদ্ধান্তকে বলেছেন হতাশাজনক। সাথে অভিযোগ করেছেন ইউয়েফা নাকি মাদ্রিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। অপর দিকে মাদ্রিদ অধিনায়ক রামোস আশা করছেন মদ্রিচের হাতেই উঠবে ব্যালন ও।

মাসের ফারাকে চেনা দৃশ্যই কল্পনা মনে হয়। এবার আসা যাক বলকান ম্যাজিশিয়ানের কথায়। ক্লাব মৌসুম শেষে মেসি-রোনালদোর রাজত্ব ভাঙ্গার সাম্ভাব্য ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছিল মিশরীয় ফারাও সালাহকে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পরাজয় এবং বিশ্বকাপে ম্লান পারফর্ম্যান্স সালাহ সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপেই শেষ করে দিয়েছে, এবং অপ্রত্যাশিতভাবে সে জায়গাটি দখল করে নিয়েছেন মদ্রিচ।

এর পিছনে রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় যতটা ভূমিকা রেখেছে তারচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বিশ্বকাপে তার নজরকারা নৈপুণ্য। অপরুপ নাজাকাতের সাথে একের পথ বাঁধা ডিঙ্গিয়ে ক্রোয়েশিয়া প্রথমবারের মত ফাইনালে নিয়ে যাবার অন্যতম মূল কারিগর তিনি। যার ফলে, জিতেছেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও। আর এটিই মদ্রিচের ব্যালন এবং বেস্টের দাবিকে জোড়ালো করে তুলছে প্রতিনিয়ত।

গত এক দশক ধরে ব্যালন এবং পরবর্তিতে আসা বেস্ট, দুটো এ্যাওয়ার্ড নাইটেই আফতাব হয়ে রোশনি ছাড়িয়েছেন মেসি-রোনালদো। তাদের রাজত্বে হানা দেয়া তো দূর, সামান্য সম্ভাবনাও কেউ সৃষ্টি করতে পারেননি। মেন্ডেস যে পরিসংখ্যানের জিকর করেছেন সেটি রোনালদো কতটা অসাধারণ খেলেছেন সেটি তুলে ধরে সত্যি, কিন্তু পরিসংখ্যান সব সময় সঠিক তথ্যটিও দেয় না। মদ্রিচ হয়ত সে অর্থে গোল পাননি, কিন্তু মাঝ মাঠ দখলে নিয়ে দলকে যেভাবে খেলিয়েছেন সেটি ফুটবল পণ্ডিতদের নজর এড়ায়নি। যার ফলে, বেস্ট এবং ব্যালনের গায়ে যদি নতুন নাম খোদাই হয় সেটিতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

বিশ্বকাপের বছর হওয়ায় ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের দুটো খেতাবের ক্ষেত্রেই বিশ্বকাপ বিবেচনায় থাকবে। আর সেটিতে মদ্রিচ এবার বেশ এগিয়ে। শুধু দল ফাইনাল খেলেছে বলেই নয়, যে দল নিয়ে যে ভাবে তিনি ফাইনালে গিয়েছেন সেটি প্রসংশার দাবি রাখে। বিশ্বকাপের মাঝপথেও সাম্ভাব্য ফাইনালিস্ট হিসাবে কেউই ক্রোয়াটদের নাম চিন্তা করেনি। রোনালদো অসাধারণ শুরু করলেও যাত্রা থেমে গিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ডেই। দুঃস্বপ্নের মত বিশ্বকাপ কাটানো মেসির হাতলও একই রকম। সেদিক বিবেচনায় মদ্রিচ দু’জনের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু, এখানেও লড়াইটা হবে রোনালদোর সাথেই। বিশ্বকাপে যে তিনি পুরোই ব্যর্থ সেটি বলার সুযোগ নেই। আর রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়েও তার অবদান ব্যাপক।

ইউয়েফার বর্ষসেরা যারা নির্বাচন করেছেন, তাদের দেয়া ভোটে রোনালদোকে প্রায় শ’খানেক ভোটের ব্যবধানে পিছনে ফেলেছেন মদ্রিচ। মেসি হয়েছেন পঞ্চম। এই অবস্থায় মদ্রিচের আশার সলতে যদি আরো একটি উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে তবে অবাক হবার কিছুই থাকবে না। সব জওয়াব সময়ের হাতেই। কিন্তু তার আগেই মেন্ডেস যে তীরটি ছুড়েছেন সেটি যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলবে সেটি বলাই যায়।