প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি’র গণসমাবেশ

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি’র গণসমাবেশ

গণতন্ত্রের সংকটাপন্ন সময়ে একটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কী? -সে প্রশ্নে হয়তো কিছুটা হলেও দায়িত্বহীন মনে হতে পারে বিএনপি’র মতো একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে। কিন্তু গত জুলাইয়ের এবং আজ পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপি দু’টি সমাবেশ করে, যা ওই প্রশ্নের বিপক্ষে আরও একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। আর তা হল, এই রাজনৈতিক দলকে কি বিগত দশ বছর যথেষ্ঠ প্লাটফর্ম দেয়া হয়েছিল?

উল্লেখ্য, জুলাইয়ের ২০ তারিখ বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। সে সময় সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি এবং আজকের সমাবেশেও একই রকম মানুষের ঢল সরকারকে সাধারণ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে।ধারণা, করা হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে বিএনপিকে রাজনীতি করতে দেয়া হচ্ছে না। জুলাইয়ের সমাবেশ শর্তসাপেক্ষে করতে হয়েছিল বিএনপিকে একই সাথে ছিল কড়া পুলিশি প্রহরা। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠা নেতা-কর্মীদের সমাবেশে উপস্থিতি, বিএনপির জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েনি— তা খোলাসা করেছিল।

আজ পহেলা সেপ্টেম্বর, বিএনপি’র ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করার অনুমতি প্রদান করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১২টার দিকে ছোট ছোট দলে জড়ো হতে থাকে নেতা-কর্মীরা। দুপুর ২টার মধ্যেই জনতার সমুদ্রে পরিণত হয় নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা। আর তাতেই আরেকবার বিএনপির জনপ্রিয়তার ব্যাপারটা সামনে আসে আর তার সাথে যুক্ত হয় সুষ্ঠু রাজনীতির অধিকারও। দলটিকে নানান শর্ত দিয়ে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়। যার কারণে স্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা সম্ভব হয়না। সমাবেশে করতে হয় ট্রাকে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “সরকারের মধ্যে ২৪ ঘন্টা বিএনপি ভীতি কাজ করছে। ঘুম থেকে উঠেই আতকে ওঠে এই ভেবে যে, এই বুঝি খালেদা জিয়া এলো, এই বুঝি তারেক রহমান এলো।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, “ আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে খালেদা জিয়ার সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সকাল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, ইভিএম বাতিল করতে হবে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।”

এই মুহূর্তে যদি বিএনপি মহাসচিবের এই দাবিগুলোকে সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড ধরি। তাহলে দেখবো, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এর কোনটাই করতে রাজি নয়। তারা ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে তৈরি করেছে দূরভিসন্ধিমূলক জটিলতা, সরকার কিছুতেই পদত্যাগ করতে রাজি নয়, এমনকি নিরপেক্ষ সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে তারাই। অন্যদিকে “অন্তর্বতীকালীন সরকারের বিএনপি’র থাকার সুযোগ নেই” মন্তব্য করে সরকারদলীয় রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক ‘অন্তর্বতীকালীন সরকার’ কাঠামোকেই কলুষিত করেছে। আবার যেখানে বিল পাস হওয়ার আগেই ইভিএম কেনার যে ঘটনা তা ইভিএম’র স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে সেটা স্বাভাবিক। ইভিএম ব্যবহারকে শুধু রাজনৈতিক পক্ষই নয় সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনীতির বিশ্লেষকেরাও দূরভিসন্ধিমূলক আচরণ হিসেবে দেখছে। আর সেনামোতায়েনের ব্যপারে বোধহয় বিএনপিকেও সতর্ক হওয়ার ব্যপার রয়েছে।

মির্জা ফখরুল দলটির বর্তমান চেয়ারপারসনকে নিয়ে বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে সাজা দিতে চাইছে। রায়ের আগে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিচ্ছেন, এ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হবে। তাহলে কি আপনারা আগেই গণভবনে রায় লিখে রেখেছেন। মনে রাখবেন, কোনো ষড়যন্ত্রের রায় দেশের জনগণ মেনে নিবে না।
এছাড়াও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণতন্ত্র রক্ষায় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান। তিনি ঘুরে দাঁড়াতে বলেন। এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হতে বলেন।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, জমির উদ্দীন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, আলতাব হোসেন চৌধুরী, জয়নুল আবদিন, বেগম সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তৈয়মুর আলম খন্দকার, ফরহাদ হালীম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি সামসুল আলম তোফা প্রমুখ।

এছাড়াও সমাবেশে বিএনপি’র এবং তার অঙ্গসংগঠনের প্রায় একশ’ নেতৃত্বস্থানীয় রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন।