ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিবাসন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে লাতিন আমেরিকা। ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট এবং তার ফলে তাদের দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকে এখন ভয়াবহ ‘অভিবাসন সংকট’ হিসেবেই দেখতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে।
বর্তমানে প্রায় ২৩ লাখ ভেনেজুয়েলান শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। প্রতিবেশি দেশ কলম্বিয়াতে সবচেয়ে বেশি ভেনেজুয়েলান রয়েছে; যার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। পাশাপাশি ইকুয়েডর ও পেরুতে রয়েছে যথাক্রমে ৫ লাখ ও ৪ লাখ।
কিন্তু অতি সম্প্রতি ব্রাজিলে প্রবেশ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ নিয়ে এই সংকট সামনে এসেছে। ব্রাজিলে এই মুহূর্তে ৬০ হাজারের মতো ভেনেজুয়েলান অবস্থান করছে। গত কয়েকদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় খাদ্য এবং ঔষধের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা ব্রাজিলসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রবেশ করছিল। সংঘর্ষের সময় স্থানীয়রা অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্রাজিলের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া একা ভাষাণে তিনি এটিকে দক্ষিণ আমেরিকার শান্তি ও স্থিতিশীলতার হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “ভেনেজুয়েলার সমস্যা এখন আর তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয় নয়, এই সঙ্কট এখন পুরো মহাদেশের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।”
অন্যদিকে প্রতিবেশি পেরুও ভেনেজুয়েলা সীমান্তবর্তী দু’টি প্রদেশের ‘স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অবস্থা’ জারি করেছে। সেখানকার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, ভেনেজুয়েলা থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন রোগ ছড়াতে পারে।
উল্লেখ্য, তৃতীয় বিশ্বের জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় রিজার্ভ ভেনেজুয়েলা। ২০১৪ সালে পশ্চিমা সিন্ডিকেট সে জ্বালানি তেলের বাজারে ধ্বস নামানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। দ্রুতই তেলের দরপতন হয়। আর সাথে সাথে ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডও ভেঙে পড়ে। বিগত চার বছর ধরে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম শুধু বেড়েই যাচ্ছে। সেদেশের প্রতি পাঁচজনের একজন দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। অর্থনৈতিক ধ্বস মোকাবেলায় মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে মুদ্রা পরিবর্তনের পরেও তেমন কোন ফল পায়নি দেশটির সরকার।
লাগামহীন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে ইতোমধ্যে কড়াকড়ি শুরু করেছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। ব্রাজিল সেনা মোতায়েন ছাড়াও রোরাইমা সীমান্ত বন্ধের ঘোষাণা দিয়েছিলো কিন্তু আদালতের কারণে তা সম্ভব হয়নি। একই ভাবে ইকুয়েডরও আদালতের কারণে তা পারে নি। পেরু অবশ্য সীমান্তে পাসপোর্ট চেক অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে ইকুয়েডর, পেরু, কলম্বিয়া এবং ব্রাজিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই প্রসঙ্গে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বৈঠকে বসবেন বলে জানাগেছে।