ফাতিনা আল-গররা ১৯৭৪ সালে ফিলিস্তিনের গাজা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার পরিচয় আরব ডায়াস্পোরা সাহিত্যের বেলজিয়ান কবি। তিনি তার জীবনের অনেকটা সময়, বিশেষ করে শিক্ষাজীবনের পুরোটা সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় কাটিয়েছেন। তারপর তিনি মিশর এবং ফ্রান্সে অভিবাসিত হন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তিনি বেলজিয়ামে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন। তিনি এক সময় সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সাংবাদিক ছিলেন। এছাড়াও ওয়াফা নিউজ এজেন্সির রেডিও উপস্থাপকও ছিলেন। ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিচার করলে অবশ্যই ফাতিনা আল-গররা’র সাথে রাজনীতি চলে আসার কথা। কিন্তু না। তার কবিতায় ভালোবাসা, নারীত্ত্ব এবং নারীবাদ খুবই স্পষ্ট। ফিলিস্তিনি কবিদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক নারীবাদী চেতনার ধারক। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, “আমার কবিতা লেখা প্রয়োজন, আমার ভালোবাসা এবং সুন্দরকে উদযাপন করা প্রয়োজন। রাজনীতিবিদরা তাদের কাজ করবে।” ফাতিনা আল-গররা’র কাব্য সংকলনগুলো হলো: দেয়ার ইজ স্টিল এ সী বিটুইন আস (গাজা, ২০০০) এবং এ ভেরি ট্রাবলসাম ওমেন (কায়রো, ২০০৩) । এখানে তার বহুল পঠিত ‘অর্গাজম’ এবং ‘মুভমেন্ট’ কবিতা দু’টি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। কবিতা দু’টির আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে ক্লেইরে জ্যাকবসন এবং আন্না মিউরিসন।
অর্গাজম
যখন মৃত্যু আসে
আমি তার প্রিয়তম প্রেমিকার মতো নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই
মোমবাতি জ্বেলে সারাঘর আলোকিত করি
কুটিল দৃষ্টির চোখ এবং আমার মধ্যে পর্দা টেনে দেই
শরীর ধুই আস্তে আস্তে
লাজুকভাবে
সুগন্ধি দিয়ে তা স্নিগ্ধ করি
আস্তে এবং সতর্কতার সাথে তেল মাখি
কালো ফিতের নাইটগাউনে পিছলে পড়ি
এবং আবহ সঙ্গীতে উদ্দীপ্ত হই
জীবনের চুম্বন আঁচ করতে
একজন বেশ্যা হিসেবে আমি তার জন্য প্রস্তুত হতে চাই
তার অ্যাপার্টমেন্ট লাল আলোয় রাঙিয়ে
তার শরীরে তেল মেখে
কোনদিন ফিরে না আসা পুরুষের স্মৃতি মুছে ফেলে
সস্তা সুগন্ধির মিশ্রনে সুবাসিত করে
তার সমস্ত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে
সেই মুহূর্তের জন্যে
দোড়গোড়ায় প্রতীক্ষা করে যখন সে
তার ট্রাউজার খুলতে প্রবেশ করে এবং তার কাজ শুরু করে
আমি মৃত্যুকে একজন স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবো
শুক্রবার রাতে বাচ্চাদের এলোমেলো করা ঘর গুছিয়ে
তারপর গোসল করে
আলতো করে কিছু সুর্মা ও গোলাপি লিপিস্টিক লেপে
আরামদায়ক পাজামা পরে
এবং বিছানার মাঝখানে শুয়ে
আমি তার কর্তব্যের জন্য প্রস্তুত হই।
আমি মৃত্যুকে একজন তপস্বীনীর মতো গ্রহণ করবো
বাতাস ভর্তি ধূপ ছড়িয়ে
নিস্তব্ধতার ভাসমান ঘ্রাণ দিয়ে
সেই অবকাশ, অন্যকিছুর কোন স্থান নেই
আমি প্রসারিত করবো/ পূজাবেদিতে
অনুগত এবং ক্ষমতাহীন
এবং নির্মম মন্থরতার সাথে আমার
দেহকে মাদকে আহ্লাদিত করবো
শূন্যে, সন্দেহের কোন দাগ ছাড়াই
আমি শুয়ে পড়বো যেভাবে কখনোই
একজন পুরুষের জন্য শুই নি
তাকে দাও যা তার প্রাপ্য
একজন মিসট্রেস তার প্রেমিকের জন্য প্রস্তুত হয়
তার কড়া নাড়ার জন্য জানালার পাশে অপেক্ষা করে
যখন সে মদ ঠাণ্ডা ক’রে
সিগারেট ও সঙ্গীত প্রস্তুত করে
প্রিয় গান এবং ভিডিওগুলো তাদের হাসায়
যতক্ষণ না চোখ পানিতে ভরে ওঠে
হালকা-পা আনন্দে খানিকটা নাচতে থাকে
তারপর আঙুল কাজ শুরু করে
ধীরে ধীরে …
মুভমেন্ট
১.
যৌন-লালসা একটি পাগলাটে অভিযাত্রা
রাস্তায় একটি সংগ্রাম
২.
এড়িয়ে যাওয়া হল মেঘের সাথে ‘ওয়ালটজ’ নাচা
যার মুদ্রাগুলো ঘুঘুর পালকের উপর অদৃশ্য হয়ে যায়
৩.
সমুদ্রের গুঞ্জন: একটি অভিশপ্ত শহর
এবং চাঁদ ঠাট্টাচ্ছলে হাসে
শুধু পানিই জানে ডুবে যাওয়ার রহস্য
এবং ঢেউ তা উদ্ভাবনের ওস্তাদ
৪.
রাস্তা নগ্ন হলে
বৃষ্টি হিংস্র হয়ে ওঠে
৫.
সব সময় গল্প করো
যতক্ষণ না তা আমরা রক্ত থেকে নিষ্কাশন করতে পারছি
৬.
যখন আমরা কামনা দ্বারা বেষ্টিত হই
অ্যাড্রেলিন আমাদের আচ্ছন্ন করে।
৭.
আপনি কি আমার মুঠ খুলতে পারবেন
একটি চুম্বন
অথবা একটি বোমা ব্যতিত?
৮.
আলতো চাপুন… আলতো চাপুন প্লিজ… আলতো চাপুন
এখন থেকে, এই শহরে
কোন দরজা নেই।