ভারতে বিজেপি’র ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের শিকার হল বুদ্ধিজীবী-মানবাধিকারকর্মীরা। সরকারের মদদে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের বামপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতার করেছে দেশটির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসময় দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, রাঁচিসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাস করা বিভিন্ন লেখক-বুদ্বিজীবীদের বাসায় হানা দেয় পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার এক বামপন্থী ষড়যন্ত্রের সাথে এদের যোগসাজশ আছে।
পুলিশ ইতোমধ্যে মাওবাদীদের সমব্যথী বলে পরিচিত কবি ভারভারা রাও, ভারতের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন পিইউসিএল’র প্রধান সুধা ভরদ্বাজ, প্রাবন্ধিক গৌতম নওলাখাকে যথাক্রমে হায়দ্রাবাদ, ফরিদাবাদ এবং দিল্লি থেকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও তারা মানবাধিকার কর্মী অরুণ ফেরেরা ও ভেনন গঞ্জালভেজকে আটক করেছে।
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁওতে প্রায় তিন লক্ষ দলিত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন মারাঠা পেশোয়াদের বিরুদ্ধে তাদের বিজয়ের ২০০ বছর উদযাপন করতে। দলিতরা ভীমা কোরেগাঁওয়ের সেই যুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে লড়াই করেছিল।যার কারণে বামপন্থী কিছু সংগঠন ওই উদযাপনের বিরোধিতা করায় অশান্তি শুরু হয়, যা পরে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। পরবর্তী তিনদিন ধরে নানা শহরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্তত একজন নিহত হন। পুনে শহরের পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত করছিল, এবং সেই সূত্রেই দেশ জুড়ে তল্লাশী অভিযান চালানো হয় বলে সেখানকার পুলিশ বলছে। তারা বলছে ওই ঘটনার তদন্তের সূত্রে এর আগে কয়েকজন সামাজিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকেই যেসব ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছিল, তাদের বাড়িতেই তল্লাশী অভিযান চালানো হয়।
দেশ জুড়ে এই তল্লাশী অভিযান আর গ্রেফতারের তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গন। সমালোচনো করেছেন ভারতের নামকরা মানবাধিকার কর্মী এবং লেখক-বুদ্ধিজীবীরা। লেখিকা অরুন্ধতী রায় সংবাদমধ্যাম বিবিসিকে জানিয়েছেন, “জনসমক্ষে যারা মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করছে, তাদের না ধরে উকিল, কবি, লেখক আর মানবাধিকার কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশী চালানো হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভারত কোন দিকে চলেছে।” তিনি আরও বলেন, হত্যাকারীদের সম্মানিত করা হবে আর ন্যায়বিচার এবং হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলবেন, তাদের অপরাধী সাজানো হবে। এটা কি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হল?”
নামকরা ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ টুইটারে এই গ্রেফতার অভিযানের নিন্দা করে বলেছেন, “এটি খুবই উদ্বেগজনক। দেশের স্বাধীন কন্ঠগুলো রুদ্ধ করার এই অভিযান বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের এখনই হস্তক্ষেপ করা উচিৎ।”
অন্যদিকে আজ বুধবার সুপ্রীম কোর্ট এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছে। সুপ্রীম কোর্ট আটক ব্যক্তিদের পুলিশি হেফাজতের বদলে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া্ও কেন্দ্রীয় ও মহারাষ্ট্র সরকারকে আগামী সপ্তাহের মধ্যে গ্রেফতারের কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দিয়েছে সরকার। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পুনরায় মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ততদিন পর্যন্ত গৃহবন্দি রাখা হবে আটকৃতদের।