সিরি আ’তে শেষ হলো আরো একটি ম্যাচ। ইতালিয়ান লিগের পর এবার য়্যুভেন্তাসের নিজেদের মাঠে অভিষেক হলো রোনালদোর। লাৎসিও’র বিপক্ষে তুড়িনের বুড়িরা দু’গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেও গোলশূন্য গোল মেশিন রোনালদো। এর আগে তুড়িনে অতিথি হিসাবে যে ক’বারই এসেছেন জাল খুঁজে নিয়েছেন এই পর্তুগিজ তারকা। শুধু পেলেন না সাদা-কালো জার্সি গায়ে নিজের প্রথম ম্যাচে।
এখন যে আলোচনাটা করতে চাচ্ছি সেটা সময়ের বিবেচনায় কতটা উপযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিশেষ করে বিষয় যখন খোদ রোনালদো তখন রোষের মুখোমুখি হবার সম্ভাবনাও নেহায়েত কম নয়। তারপরও আলোচনটা করতে চাই, কারন রোনালদো বলেই এটি আলোচনার দাবি রাখে। রোনালদো বলেই ঔজ্জ্বল্য সামান্য কমলেই তা বড় বেশি চোখে লাগে।
প্রথম যে প্রশ্নটি আসে সেটি হচ্ছে বয়স বিবেচনায় সিরি আ’র অংশ হবার জন্য সময়টি সঠিক কি না? ইতালিয়াল লিগ বহুদিন আগেই জৌলুশ হারিয়ে হতশ্রী রূপ নিয়েছে। কিন্তু লিগটি মরে নি। এটা সম্ভবও না, কারন ইতালির রয়েছে সুবিশাল ফুটবল ঐতিহ্য। ইতালিয়ান খেলা বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রক্ষণাত্বক ফুটবলের দৃশ্য। য়্যুভেন্তাস বিগত কয়েক বছরে আকর্ষনীয় ফুটবল উপহার দিলেও, বাঁকি দলগুলো আঁকড়ে আছে পুরোনো ঐতিহ্যই। যার ফলে লা লিগার মত সিরি আ’তে ম্যাচ প্রতি গোল করাটা প্রায় অসম্ভব। প্রথম দুই ম্যাচে রোনালদোও সেটি বুঝেছেন বলেই আশা করা যাচ্ছে। কোনো খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার শুরুর জন্য, বিশেষ করে সে যদি আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হয়; তাহলে সিরি আ অন্যতম উপযুক্ত জায়গা নিঃসন্দেহে। কিন্তু ভিন্ন একটি লিগ থেকে গিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করার জন্য ইতালি সঠিক জায়গা কি না সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, রিয়ালে রোনালদো যখন গিয়েছিলেন তখন তার বয়স এবং ফর্ম বিবেচনায় রিয়ালের প্রত্যেক কোচই রণকৌশল সাঁজিয়েছেন রোনালদোকে কেন্দ্র করে। হ্যা, রোনালদোর ফর্ম এখনো পড়ে যায়নি, অন্তত মাত্র দুটি ম্যাচ দেখে এমনটা বলার জো নেই। কিন্তু, এখন রোনালদো না চাইলেও তার বয়সটা একটি প্রশ্ন হিসাবে সামনে চলে আসবেই। যার ফলে, পুরো রোনালদো কেন্দ্রিক খেলা য়্যুভেন্তাস নাও খেলতে পারে। প্রথম দুটো ম্যাচ যেমন তারা খেলল। এমন পরিস্থিতি রোনালদোর পছন্দের হবে না এটা খুবই স্বাভাবিক।
তৃতীয় যে বিষয়টি সামনে আসবে সেটি হচ্ছে রোনালদোর সাথে রসায়ন। এক সাথে নয় বছর টানা খেলার ফলে রোনালদোর সাথে বেনজেমার একটি চমৎকার বোঝাপড়া গড়ে উঠেছিল। গত কয়েক বছরে রিয়ালের মূল দলে পরিবর্তন এসেছেও খুব কম। যার ফলে চমৎকার একটি রসায়ন গড়ে উঠেছিল সবার মাঝে। য়্যুভেন্তাসে রোনালদোকে শুরু করতে হবে শূন্য থেকে। বিষয়টি এমন নয় যে, তিনি মানিয়ে নিতেই পারবেন না। প্রশ্ন যেটি আসে সেটি হলো, কত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন? রোনালদো মেসির ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দিতার কথা ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। রোনালদো যত বেশি সময় নিবেন মেসি ততটাই এগিয়ে যাবেন। যার ফলে সময়ও একটি বাড়তি চাপ হিসাবে কাজ করবে সিআর৭ এর জন্য।
রিয়ালে থাকলেই যে রোনালদো আরো সাফল্য পেতেন বা তুড়িনে গিয়েছেন বলেই যে রোনালদো ব্যর্থ হবেন বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু তুড়িনে গিয়েও রোনালদো শুধুই ইতালিয়ান দলগুলোর সাথে না, প্রতিদ্বন্দিতা করবেন মেসির সাথে। সেটি বিবেচনায় প্রশ্নগুলো উঠে আসছে। তবে, আশঙ্কাকে অমুলক পরিণত করার প্রবনতা তার রয়েছে। তাই, মৌসুম শেষে এ সকল প্রশ্ন অবান্তর ঠেকলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না। তাই, এখন এটিই দেখার বিষয় যে, সাধারণ ফুটবলীয় বিশ্লেষণ নাকি অসাধারণ রোনালদো; দিন শেষে হাসিটা কে হাসে?