শিহাব নেতৃত্ব দিতে চান লাল-সবুজকে

শিহাব নেতৃত্ব দিতে চান লাল-সবুজকে

মোহাম্মদ শিহাব। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের সম্ভাবনাময় ফরোয়ার্ড। নানান বাঁধাবিপত্তিও দমাতে পারেনি তাকে। পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা, ইঞ্জুরিকে ড্রিবল করে ঠিকই নিজ যোগ্যতায় পাড়ি দিচ্ছেন বহুদূর পথ। পবিত্র ইদের বিশেষ আয়োজনে জবান পাঠকদের জন্য থাকছে এই তারকার উত্থান পতনের কড়চা…

সম্ভাবনার অজস্র অপমৃত্যু দেখেছেন চোখের সামনে। ভঙ্গুর সময়ে ফুটবলে আগমন। হালআমলে সবাই ক্রিকেটারই হতে চায়। কারো কারো কাছে অবশ্য স্বপ্নটা বড়। অর্থ, প্রতিপত্তি, নামযশ তখন ঘেঁষতে পারে না কাছে। মূল্যহীন লাগে ওসব। তারা বরঞ্চ বুঁদ হয়ে থাকেন দেশের প্রতিনিধিত্ব করার নেশায়। ২০১৫ সালের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পাওয়া মোহাম্মদ শিহাব তাদেরই একজন। ফুটবলেই ঘর বেঁধেছেন, লড়াইটা কম করতে হয়নি। স্রোতে গা না ভাসালে যা হওয়ার তাই হয়েছে।

২০০৬ সালে ‘ক্যানারি ওয়ার্ফ ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট’ প্রোগ্রামের আওতায় অনুষ্ঠিত ট্রায়ালে ভাইয়ের সঙ্গে ব্রাদার্স ইউনিয়নের মাঠে ট্রায়াল দিতে আসেন। গোলাম সারওয়ার টিপুর পরিচালনায় হওয়া সেই ট্রায়ালে টিকে যান। তারপর বিকেএসপির দরজায়। হাজার জনের মধ্য থেকে যে ক’জনকে নেওয়া হয়েছিল নিজ যোগ্যতায় শিহাব জায়গা করে নেন। সেখান থেকে শুরু।  খেলেছেন অনুর্ধ্ব ১৮-২৩ পর্যন্ত সব বয়সভিত্তিক দলে। গিয়েছেন ইংল্যান্ডেও। ইঞ্জুরির ফলে সুবিধে করতে পারেননি তেমন। তবে তার সামর্থ্য নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে কেউই সন্দিহান নয়।

মোহাম্মদ শিহাব

মোহাম্মদ শিহাবের পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হয় ব্রাদার্স ইউনিয়নের হাত ধরে। ২০১০-১১ মৌসুমে প্রথমবার প্রিমিয়ার লীগে অভিষেক ঘটে মোহাম্মদপুরের এই ফরোয়ার্ডের। দুর্ভাগ্যের ফেরে এবারো ইঞ্জুরিতে পড়েন তিনি। ফুটবলে তার চলার পথ যেন বাংলার হতশ্রী ফুটবলেরই প্রতিবিম্ব। তার হতশ্রীপনা অবশ্য অন্যখানে। পরিবার থেকে প্রবল নিষেধাজ্ঞা ছিল, মায়ের মৃত্যুর পর তো এলোমেলো হয়ে গেছিল সবকিছু। একবছর ছিলেন খেলার বাইরে। শফিকুল ইসলাম মানিকের কথায় মাঠে ফিরেন তিনি। শিহাব বলেন, “মানিক ভাই তখন মুক্তিযোদ্ধার কোচ। তিনি আমাকে একদিন ট্রেনিংয়ে আসতে বলেন। উনার অনুপ্রেরণাতেই আবার ফিরে আসি”। প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছে রাজসিক। সেই মৌসুমে লীগে রানার আপ হয় মুক্তিযোদ্ধা।

মোহাম্মদ শিহাব পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেন এরপর থেকেই। জীবনের সবচাইতে বড় অনুপ্রেরণা তার শতবর্ষী দাদু, যিনি এখনো নটআউট। পেশাদার ক্যারিয়ারে শিহাব খেলেছেন ব্রাদার্স, মুক্তিযোদ্ধা, অগ্রণী ব্যাংকে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে খেলেন ধানমন্ডি পাড়ার শেখ জামালে। ওই বছরই ডাক পান জাতীয় পর্যায়ে। এবারের মৌসুমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা মোহাম্মদ শিহাব এখনো লালসবুজের জার্সি গায়ে না চাপালেও হাল ছাড়ছেন না। ফুটবল নিয়ে স্বপ্নের পরিধিটা ব্যাপক বিস্তৃত ২৬ বছর বয়সী এই তারকার। নেতৃত্ব দিতে চান দেশকে। স্বপ্ন দেখেন একদিন তার নেতৃত্বে একদিন বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ।