হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় ১১টি খাবার ও তার গুণাগুণ নিয়ে এই লেখা। এসব তিনি প্রায়ই আহার করতেন। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে নবীজীর খাদ্যাভ্যাসে থাকা খাদ্যগুলো গবেষণা করে দেখা গেছে তা মানবদেহের জন্য শুধু উপকারীই নয় বরং সর্বোৎকৃষ্ট। বিজ্ঞানের আমূল উৎকর্ষের ফলে এ সকল খাবারের গুণাগুন আরও স্পষ্ট হয়েছে। মহানবী (সাঃ) প্রিয় খাবারের মধ্যে পানি, খেজুর, আঙ্গুর, দুধ, মধু, তরমুজ, ডালিম, মাশরুম, অলিভ-অয়েল ও ভিনেগার অন্যতম। এদের গুণাগুণ উল্লেখ করা হলো।
১. খাবার পানি
পানির অপর নাম জীবন। মহানবী (সাঃ) পানির গুণাগুণ বিবেচনা করে এটিকে তার খাদ্যাভাসের প্রধান হিসেবে দেখেছেন। মানবদেহের জন্য পানির গুরুত্ব অপরিসীম। পানি নতুন রক্তকোষ ও দেহকোষ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে। কৌষ্ঠকাঠিন্য দূর করা ও মলাশয়কে সচল রাখতে সাহায্য করে। পানি পানের ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর থাকে। তাছাড়া খালি পেটে পানি পান করলে শরীর সতেজ থাকে।
২. খেজুর
খেজুরের গুণাগুণ ও খাদ্যশক্তি অপরিসীম। খেজুরের খাদ্যশক্তি ও খনিজ লবণের উপাদান শরীর সতেজ রাখে। মহানবী (সাঃ) বলতেন, যে বাড়িতে খেজুর নেই সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই। এমনকি প্রিয়নবী (সাঃ) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকে খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। খেজুর রুচি বাড়াতে সহযোগিতা করে। তাছাড়া এতে ভিটামিন-এ থাকায় দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। খেজুরে থাকা অ্যামাইনো এসিড হজমে সাহায্য করে।
৩. আঙ্গুর
প্রিয়নবী (সাঃ) আঙ্গুর খেতে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। পবিত্র কোরানের ১১টি আয়াতে আঙ্গুরের কথা উল্লেখ রয়েছে। আঙ্গুরে উচ্চ খাদ্যশক্তির থাকার কারণে এটা আমাদের তাৎক্ষণিক খাদ্যশক্তি প্রদানে সক্ষম এবং এটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীও বটে। আঙ্গুর কিডনির জন্য উপকারী। আঙ্গুরের ফ্রুকটোজ সরাসরি আমাদের রক্তে প্রবেশের ক্ষমতা রাখে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্করা। যাদের আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম আছে তারা খেতে পারেন। আঙ্গুর শুকিয়ে কিসমিস আকারেও খাওয়া যায়। এতে সারাবছরই আঙ্গুরের উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।
৪. দুধ
দুধের খাদ্যগুণ, পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণ বর্ণনাতীত। আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে বিজ্ঞান যখন অন্ধকারে তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দুধ সম্পর্কে বলেন, দুধ হার্টের জন্য ভালো। দুধ পানে মেরুদন্ড সবল হয়, মস্তিষ্ক সুগঠিত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। আজকের বিজ্ঞানীরাও দুধকে আদর্শ খাবার হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং এর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি অস্থিগঠনে সহায়ক। দুধ দাঁত ক্ষয় রোধ ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে।
৫. মধু
মধুর নানা পুষ্টিগুণ ও ভেষজ গুণ রয়েছে। মধুকে বলা হয় খাবার, পানীয় ও ওষুধের সেরা। হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে মধু পান করা ডায়রিয়ার জন্য ভাল। খাবারে অরুচি, পাকস্থলীর সমস্যা, হেয়ার কন্ডিশনার ও মাউথ ওয়াশ হিসেবে উপকারী। মধু আপনার বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া মধু পুরুষের যৌন দূর্বলতা দূরীকরণে কার্যকরী ভেষজ।
৬. তরমুজ
সব ধরনের তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। প্রিয়নবী (সা:) তরমুজ আহারকে গুরুত্ব দিতেন। যেসব গর্ভবর্তী মায়েরা তরমুজ আহার করেন তাদের সন্তান প্রসব সহজ হয়। তরমুজের পুষ্টি, খাদ্য ও ভেষজগুণ এখন সর্বজনবিদিত ও বৈজ্ঞানিক সত্য। তাছাড়া তরমুজ হাড় শক্তিশালী ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। তরমুজ প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৭. মাশরুম
বর্তমানে বৈশ্বিক খাদ্যাভ্যাসে মাশরুম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার এবং মাশরুম নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। অথচ দেড় হাজার বছর আগে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) জানতেন মাশরুম চোখের জন্য ভাল। এটা বার্থ কন্ট্রোলে সহায়ক ও মাশরুমের ভেষজগুণের কারণে এটা স্নায়ু শক্ত করে এবং শরীরের প্যারালাইসিস বা অকেজো হওয়ার প্রক্রিয়া রোধ করে। মাশরুমে কোলেস্টেরল হ্রাস করার উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টিন, এনেটাডেনিন, কিটিন থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় হয়। এছাড়াও ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে মাশরুম উপকারী।
৮. যবের আটা
এটা জ্বরের জন্য এবং পেটের পীড়ায় উপকারী। অসুস্থ অবস্থায়, মূলত জ্বর হলে রাসুল [সা.] এই খাবারটি বেশি গ্রহণ করতেন বলে জানা যায়।
৯. জলপাইয়ের তেল
অলিভ অয়েলের খাদ্য ও পুষ্টিগুণ অনেক। গবেষণায় দেখা গেছে অলিভ অয়েল ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী এবং বয়স ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক বা বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। এছাড়া অলিভ অয়েল পাকস্থলীর প্রদাহ নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
১০. ডালিম-বেদানা
বেদানার পুষ্টিগুণ ও খাদ্যগুণের পাশাপাশি এটার ধর্মীয় একটি দিক আছে। প্রিয়নবী (সা:) বলেছেন, এটা আহারকারীদের শয়তান ও মন্দ চিন্তা থেকে বিরত রাখে। ডালিম দেহের কোলস্টেরলের ঝুঁকি কমায়। এতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। ডালিম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে ডালিম বেশ উপকারী।
১১. ভিনেগার
ভিনেগারের ভেষজ গুণ ও খাদ্যগুণ অপরিসীম। প্রিয়নবী (সা:) অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে ভিনেগার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আজকের এই আধুনিক ও বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্যের যুগে বিশ্বের বড় বড় নামি-দামি রেস্টুরেন্টে বিশেষ করে অভিজাত ইতালীয় রেস্তোরায় অলিভ অয়েল ও ভিনেগার এক সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।