ফুটবল অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেই হয়তো অনেক ভ্রু কুচকাতে পারেন; ফুটবলে মুজিব পরিবারের নাম শুনলেও শেখ মুজিবুর রহমান কিভাবে?
আসুন আজকে ফুটবল অঙ্গনে শেখ মুজিবুর রহমানের কাহিনী শোনাই।
মুজিব পরিবারের শেখ কামাল ও শেখ জামাল ফুটবলের সাথে যুক্ত থাকলেও তারও আগে থেকে যুক্ত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু নামে মাত্র যুক্ত ছিলেন না, ছিলেন একেবারে পুরোদস্তর ফুটবলার।
শেখ মুজিব ছিলেন স্ট্রাইকার পজিশনের খেলোয়াড়। আর খেলেছিলেনও তখনকার ঢাকার বিখ্যাত ক্লাব ‘ওয়ান্ডারার্স’ এর হয়ে। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত মাঠ কাঁপিয়েছিলেন তিনি ঢাকার মাঠে। শুধু তাই নয় ছিলেন অধিনায়কও।
তিনি স্ট্রাইকার হিসাবে এতটাই ভয়ংকর ছিলেন যে, ডিবক্সে বল পাওয়া মাত্রই তার গোলের সম্ভাবনায় নড়েচড়ে বসত সবাই। তার শ্যুটের জোরে গোলবারের জাল ছিড়ে যাবার গল্পও শোনা যায়। অহরহ গোল করেছিলেন, হ্যাট্রিকও করেছিলেন কয়েকবার। একবার বগুড়ায় এক জনপ্রিয় টুর্নামেন্টে ওয়ান্ডারার্সকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন করান বঙ্গবন্ধু। ফাইনাল ম্যাচে করেন ২ গোল। করেন ৩টি অ্যাসিস্ট। হয়েছিলেন সেই টুর্নামেন্ট এর সেরা খেলোয়াড়। ওয়ান্ডারার্সের হয়ে স্ট্রাইকার পজিশনে কখনো ৯ কখনো বা ১০ নাম্বার জার্সি পরে খেলতেন তিনি।
কলেজে পড়া অবস্থা থেকেই তিনি ছিলেন ফুটবলে পারদর্শী। শোনা যায়, কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়া অবস্থায় তার ফুটবল দক্ষতার জন্য কলকাতার বিখ্যাত কোলকাতা মোহামেডান এবং এরিয়ান্স ক্লাব থেকে অফার পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ইন্ডিয়া তথা কলকাতার হয়ে খেলতে চাননি।
দেশে এসেই তিনি খেলেন একটি পাড়া ক্লাবে, সেখান থেকে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে। তবে রাজনীতিতে ব্যস্ততার জন্য তিনি নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার বেশি দূর আর আগাতে দেননি। কাজ করেছিলেন দেশের জন্য।
বঙ্গবন্ধুর খেলা নিয়ে খ্যাতনামা ফুটবলার গজনবী বলেছিলেন- “আমি তার খেলা সরাসরি দেখেছি, যদি তিনি রাজনৈতিক ব্যস্ততা সরিয়ে ফুটবল খেলতেন তবে তিনি চল্লিশ দশকের এশিয়ার অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হতেন।”
আমাদের স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু আজ ফুটবলার হতে পেরেছিলেন এই বংগবন্ধুর জন্য। তার বাবা চেয়েছিলেন পিন্টু ডাক্তার হন, কিন্তু বংগবন্ধু তার খেলা দেখে তাকে ফুটবলার হতে বলেছিলেন। হয়েছিলেনও তিনি একজন দেশখ্যাত ফুটবলার।
আজ আফসোস বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তবে হয়তোবা ফুটবলের এই অধঃপতন দেখতে হতো না আমাদের!