তিন মাসেরও কম সময়ে ইসরায়েলি ইহুদিবাদী দখলদাররা পশ্চিম তীরে অধিকৃত দুই হাজার গাছ এবং বীজতলা ধ্বংস করেছে। ফিলিস্তিনি কৃষকদের সাক্ষ্যর ভিত্তিতে ‘বি-টিসেলেম’ নামক অধিকার সংরক্ষণ গ্রুপ এই ধ্বংসযজ্ঞের উপর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রচুর বার্লি ক্ষেত এবং খড়ের গাদাও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ইসরায়েলি ঔপনিবেশিক দখলদাররা ফিলিস্তিনি কৃষিকে সন্ত্রাসবাদের সাথে তুলনা করে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে; ফিলিস্তিনি সম্পত্তির ধ্বংসাবশেষের পরে তারা ‘নো টু ফারমার্স টেরোরিজম’ স্লোগান ছড়িয়ে দিয়েছে।
বরাবরের মতো দখলদার ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের এবং তাদের জমির উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। আসলে যে সকল ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূমিতে প্রবেশের অধিকার চায় তাদের উচ্ছেদ করাই এর উদ্দেশ্য। বি-টিসেলেম’-এ বলা হয়েছে, এই পদ্ধতি পশ্চিম তীর জুড়ে একটি অদৃশ্য দেয়াল রচনা করেছে, ফিলিস্তিনিরা জানে যে দেয়াল পার হতে গেলে তারা সহিংসতার মধ্যে পড়ে যাবে এবং তাদের জীবন বিপন্ন হবে।
ইসরায়েল সহিংসতার জন্য একটি পরিপূরক কাঠামো ব্যবহার করছে: ফসলকে টার্গেট করে সরাসরি ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, একই রকম ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে এসব এলাকার জনগণকে মনস্তাত্ত্বিক হুমকি দিয়ে। নথিভূক্ত ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধ্বংসযজ্ঞ এতটাই তীব্র যে নতুন করে গাছ লাগাতে হবে, যা ফিলিস্তিনের কৃষিখাত থেকে আসা অর্থনৈতিক স্বচ্ছন্দে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়ার পর প্রত্যাবর্তনের একটা ফল আছে; অন্য দখলদারদের কাছ থেকে হুমকি আসা সত্ত্বেও কৃষকরা এখনো ক্ষেতের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। এই সহিংসতা অধিকার সংরক্ষণ সংস্থাগুলো কতটা প্রকাশ করল তাতে কিছু যায় আসে না, ফিলিস্তিনিদের সচেতনতা ব্যতিত আর কোন আশ্রয় নেই। এটাও আংশিক কারণ যে ইসরায়েল উপনিবেশ সম্প্রসারণের কাজ স্বাভাবিক করে আনছে।
ইসা হাসান নামক এক ফিলিস্তিনি আবিস্কার করলেন যে তার বাগানে ২৫০টি আঙ্গুর গাছের ১৬৮টিই দখলদাররা নষ্ট করে ফেলেছে। ইসা মর্মাহত হন, “আমার আঙুরের কি হলো, অনুভব করলাম ভয়ানক অবিচার এবং আমি অনুভব করলাম অবিশ্বাস্য হতাশা এবং দুঃখ। এটা পড়া বেদনাদায়ক।” ইসার বক্তব্যের অস্পৃশ্যতা তুলনা করলে, দখলদারদের মাধ্যমে ‘নো টু ফারমারস টেরোরিজম’ হুমকি দিয়ে জাতিবিদ্বেষী ইসরায়েলের উপনিবেশ করার কোন অধিকার নেই।
বলপ্রয়োগে স্থানচ্যূত করতে মানুষ এবং জমির মূল্যকে ভুল বিবেচনায় রাখা হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনের বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার চিত্র দেখানো হচ্ছে, এটি ইসরায়েলের ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপনের ভুল একটি পদক্ষেপ। পার্থক্য হলো, ইসরায়েল এখন সহিংসতার নথিভুক্ত এবং বহুল আলোচিত ঘটনাগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
অবশ্যই ‘ফারমার্স টেরোরিজম’ বা ‘কৃষক সন্ত্রাসবাদ’ সম্পূর্ণরূপে একটি মিথ্যা অপবাদ, কিন্তু এর এমন একটি জায়গা তৈরি হয়েছে যে, উপনিবেশ সম্প্রসারণ সুবিধা পাচ্ছে। ইসরায়েল এরকম একটি উদ্ভট অভিযোগের সদ্ব্যবহার করছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভর্ৎসনা থেকে সরিয়ে রাখছে।
এটি ইসরায়েলকে যথেষ্ঠ সময় এবং সুযোগ প্রদান করেছে— এবং পুরোপুরি মুক্তি দিয়েছে— তার দখলদার-উপনিবেশের উপস্থিতিতে এই ধরণের হুমকির মতো বিভিন্ন ধরণের ‘সন্ত্রাস’র কাহিনী রচনা থেকে। কেন কেউ ‘কৃষক সন্ত্রাসবাদ’কে চ্যালেঞ্জ করতে চান? প্রথম নজরেই এটি যে কোন যুক্তিতেই অকার্যকর। দ্বিতীয় পাঠে, এটি প্রদর্শন করে এর লাম্পট্য, যা রাষ্ট্র এবং তার দখলদারদের দ্বারা রূপায়িত।
ফিলিস্তিনি প্রত্যাবর্তন সর্বদা যায়নবাদী মিথের মধ্যে উদ্ঘাটিত। নিজেকে রক্ষা করার অন্য কোন উপায় নেই, ইসরায়েল তার মিথগুলোকে বিকশিত সত্যে রূপান্তর করতে শর্ত তৈরি করতে আগ্রহী, এমনকি তারা ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব স্বীকার করাকে তাদের ‘নিরাপত্তা উদ্বেগ’ হিসেবে অলঙ্কৃত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। যাইহোক, যদিও অবৈধ ইহুদী দখলদার বা অন্য কারও দ্বারা ফসলের এমন অবাধ ধ্বংসের কোন যথার্থতা নেই।
লেখাটি গত ৭ আগস্ট ২০১৮ ‘মিডল ইস্ট মনিটর’র মতামত পাতায় প্রকাশিত হয়। লেখক রামোনা ওয়াদি, মিডল ইস্ট মনিটর’র নিজস্ব লেখক। লেখাটি জবানের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন তুহিন মোহাম্মদ।