ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টির অভাবিত সাফল্য দিয়ে শেষ হওয়া উইন্ডিজ সফরের পর এবার দুয়ারে কড়া নাড়ছে এশিয়া কাপ। একটি মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের নির্ধারক এ শিরোপার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে টাইগাররা। এশিয়া কাপে সাফল্য পেতে প্রয়োজন কিছু সমস্যার আশু সমাধান। সেদিকটি নিয়েই আলোচনা করবো এবার।
ওপেনিং
বাংলার গওহর তামিম নিয়মিত রানের ফোয়ারা ছোটালেও ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল দুশ্চিন্তার নাম। সৌম্য অধারাবাহিকতায় নিজের সুনাম প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হবার পর বিসিবি সমাধান খুঁজেছিল এনামুলের মাঝে। মাঝে মধ্যে চোখ ধাঁধাঁনো দু চারটি শট খেলা বাদে বলার মতন কিছুই করে দেখাতে পারেননি তিনি। সদ্য সমাপ্ত উইন্ডিজ সফরে শুরুতেই উইকেট হারানো ছিল নিয়মিত দৃশ্য। এ জায়গায় উন্নতি আবশ্যক। ওয়ান ডে ব্রাত্য সৌম্য টি-টোয়েন্টিতেও চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় তার ওপর পুনরায় আস্থা প্রয়োগ অযৌক্তিক। সেটি শুধু রানখরার জন্যই না, তার আউট হবার ধরনের জন্যও। সেক্ষেত্রে এ মুহুর্তে একমাত্র বিকল্প হতে পারেন লিটন। ঘরোয়া লিগে ধারাবাহিক লিটন আন্তর্জাতিক ময়দানে এখনো পায়ের নিচে জমিন শক্ত করতে পারেননি। কিন্তু তার স্কিল, কোয়ালিটি সবই রয়েছে একজন ক্লাস প্লেয়ার হওয়ার। কেলাশ মার্কা খেলোয়াড়দের পেছনে বিসিবি যে বিনিয়োগ করেছে তাতে লিটনের কিছু সুযোগ অবশ্যি প্রাপ্য।
মিডল অর্ডার
মিডল অর্ডার বলতেই যেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। পরের দুটি ক্রমে সাব্বির এবং সৈকতের নাম আসলেও অধারাবাহিকতায় ধারাবাহিক হয়ে দু’জনই পরিণত হয়েছেন দুশ্চিন্তার নামে। সাব্বির বোলারদের হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে হতাশা ঝাড়ছেন সমর্থকদের ওপর। তার অপরাধটি এখনো তদন্তাধীন থাকায় শারজা যাত্রা এখনো নিশ্চিত নয়। সৈকতের ফর্মেও ভাটার টান। যার ফলে কোনো দিন মুশফিক বা মাহমুদুল্লাহর যেকোনো একজন অথবা দু’জনই ব্যর্থ হলে মুখ থুবড়ে পড়ছে ব্যাটিং। ব্যাটিং অর্ডারটাও এক্ষেত্রে কিছুটা প্রশ্নের দাবি রাখে। সৈকত প্রথাগত হিটার নন, তিনি বরং ধীর লয়ে শুরু করতেই পছন্দ করেন। তাই তাকে দিয়ে স্লগ করানোর চেষ্টাটাও তার বিপক্ষে যাচ্ছে। সাব্বিরকে নিয়ে নতুন কিই বা বলার আছে? পাইপ-লাইনে পারফর্মারের অভাবে এতদিন টিকে গেলেও এখন তার বিকল্প খোঁজ করা আবশ্যক। সে জন্য সদ্য আয়ারল্যান্ড সফর করা দলটি থেকে কাউকে সুযোগ দিয়ে দেখা যেতে পারে।
বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে বোলারদের
স্বাভাবিকভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনায় ভারত-পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন-আপ যথেষ্ট শক্তিশালী। আর মরুর পিচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পিচের তুলনায় বেশ মরা। একই সাথে লড়াই করতে হবে গরমের সাথেও। এ অবস্থায় বোলারদের কাজটি কঠিনই হবে। ভারত-পাকিস্তান এবং লঙ্কান দলগুলোতে দ্রুত রান তুলতে সক্ষম একাধিক ব্যাটসম্যান রয়েছেন। এখানে তাই উইকেট নেয়ার পাশাপাশি রানের গতি চেপে ধরাটাও হবে চ্যালেঞ্জের। উইন্ডিজ সফরে মাশরাফি-মিরাজ যেভাবে একজন অ্যাটাক এবং অপর দিকে চেপে ধরেছেন সেটি ছিল দেখার মত। দুজনের কাছে একই রকম প্রত্যাশা থাকবে এশিয়া কাপেও। মোস্তাফিজকে পুরোনো রুপে দেখা না গেলেও অনেকটাই ছন্দে ছিলেন তিনি। এখন প্রয়োজন নিজেকে ফিট রেখে রিদমটা ধরে রাখা, তাহলে বাংলাদেশ বেশ ভালো সার্ভিসই পাবে তার কাছে। অকেশনাল বোলারদের মধ্যে সৈকত এবং মাহমুদুল্লাহকে নিয়মিতই ব্যবহার করেন মাশরাফি। এশিয়া কাপে তাদের ওপরও বাড়তি একটি দায়িত্ব থাকবে মূল বোলারদের সাহায্য করার। কন্ডিশন এবং প্রতিপক্ষের শক্তিই এ বিষয়ে দাবি রাখে।
ফিল্ডিংয়ে উন্নতি আবশ্যক
এ বিষয়টায় উন্নতির একমাত্র পথই প্র্যাক্টিস। এ বিষয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে কোচদের তরফ থেকে জোরালো কোনো অভিযোগ না উঠলেও ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ এখনো কাঙ্খিত মান থেকে বেশ দুরে। উইন্ডিজ সফরেও একাধিক ক্যাচ মিস, গ্রাউন্ড ফিল্ডিং মিস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করা অত্যাবশ্যক।
খুব কাছ থেকেও এশিয়া কাপের শিরোপা হারানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। সে সময়ের বাংলাদেশের চেয়ে এ বাংলাদেশ অনেক বেশি পরিণত, ধারাবাহিক। শারজার মরুদ্যানে তাই ফুল ফোটানোর আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। সেজন্য উল্লেখিত সমস্যাগুলোর সমাধান আবশ্যক।