“শিক্ষার্থীরা যেভাবে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে, এটা আমাদের দেশের জন্য অভূতপূর্ব ঘটনা। কোনো দায়িত্বশীল সরকার হলে এ আন্দোলন থেকে তারা নতুন শক্তি পেত। কিন্তু তা না করে উল্টো এ আন্দোলনকে দমন করতে সরকার হামলা চালিয়েছে। সরকার জনগণকে ভয় দেখাতে চাচ্ছে। কিন্তু আসলে সরকার নিজেই ভয়ের মধ্যে আছে” বলেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ।
খ্যাতনামা আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতারকৃত সব শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংহতি সমাবেশ করে লেখক-শিল্পী-ছাত্র-শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। সমাবেশ থেকে বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘হামলাকারীরা নাকি বিএনপি-জামাত। কিন্তু তাদেরকে আপনারা কেন গ্রেপ্তার করছেন না? আমরা তো আজ পর্যন্ত কোনো হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করতে দেখলাম না ৷ আন্দোলন-সংগ্রামের সকল দায় আপনার বিএনপি-জামাতের ওপর চাপান ৷ আপনারাই তো বিএনপি-জামাতকে জনপ্রিয় করে তুলছেন ৷ শহিদুল ইসলাম ও আটককৃত সকল শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করুন ৷’
শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষমা করা যাবে না ৷ আপনাকে কে ক্ষমা করবে?’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক টিএইচ হাবিব বলেন, ‘প্রশ্ন করতে দিতে হবে, প্রশ্ন করা ছাড়া জ্ঞান চর্চা হয় না। আপনারা তো বলছেন যে, সমস্ত কিছুর উন্নয়ন হচ্ছে, তবে প্রশ্ন করতে দিতে আপনাদের কীসের এত ভয়? আমাদের আপাত সরল প্রশ্ন কেন আপনারা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না? তার মানে কী? তার মানে হচ্ছে ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। এই সাফল্য-উন্নয়নের মাঝে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে, সেটা হয়তো আপনারা বুঝতে পারছেন।’
বেলা’র পরিচালক রেজওয়ানা হাসান বলেন, শাসক এখন শোষকে পরিণত হয়েছে! এই নিপীড়নের মাধ্যমে জনগণকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেন দাঁড়াবে?
মত প্রকাশের কোনও স্বাধীনতা এখন নাই। আমরা জনগণের মতামতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, নতুবা আপনাদের পালানোর পথ থাকবে না; আমাদেরও বেঁচে থাকবার পথ থাকবে না।
সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট তাসলিমা আক্তার লিমার সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক, সামিনা লুৎফা, তানজীম উদ্দীন খান, সেন্ট্রাল উইমেন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদ সুমন, সায়েমা খাতুন, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, লেখক-সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, ওমর তারেক চৌধুরী, নারী-সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা দেব প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার ঝিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে আসেন অধিকারকর্মী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। ওই আন্দোলনের বিষয়ে আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।
দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফার ড. শহিদুল আলমকে গত রোববার রাতে তার বাসা তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরে সোমবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। মি. আলমের বিরুদ্ধে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে ‘ইন্টারনেটে ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়াতে কল্পনাপ্রসূত উস্কানিমূলক মিথ্যা তথ্য’ প্রচারের অভিযোগ আনা হয়।