নতুন করে এরদোগান তুরস্কের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পরে এই প্রথম আমেরিকার সাথে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিরোধ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন তুরস্ককে চাপে রাখতে শুরু করেছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ।
২০১৪ সালে এক ডলারের বিপরীতে তুরস্কের লিরার মূল্যমান ছিল ২.১৫ । টাকার অঙ্কে লিরার মূল্যমান তখন ৩৫ টাকা। ২০১৬ সালে এক ডলারের বিপরীতে ডলারের দর ৩ লিরা, বাংলাদেশি টাকায় প্রতি লিরা ২৬-২৭ টাকার মত। ২০১৮ সালের শুরুতে ছিল ৩.৮ লিরা (বাংলাদেশি টাকায় এক লিরায় ২২ টাকা)।
কিন্তু হঠাৎ করে মার্চ মাস থেকে লিরার মান কমতে শুরু করেছে। নির্বাচনের আগে হঠাৎ ডলার রেট প্রায় ৫ লিরা হয়ে যায়। সরকারের বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপের ফলে নির্বাচনের পর ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমান ৪.৫ এ নেমে আসে। কিন্তু গত কয়েকদিন তুরস্কের অর্থনীতির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা কূটচালে ডলার ৫.৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প তুরস্কের অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিক পণ্যের ওপর দ্বিগুণ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় তখন থেকেই পরিস্থিতিরি দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে তুরস্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের এক ধর্মযাজককে তুরস্কে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই অর্থনৈতিক অবরোধ নেমে আসছে তুরস্কের ওপর। ইতিপূর্বে বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিবাদে তুরস্কও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে তুরস্কের স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে তুরস্কও যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা অারোপ করে। এইসব রাজনৈতিক বিবাদকে ছাপিয়ে সামনে চলে আসছে অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাবের বিষয়টি। আর চলছে লিরার মানের ধারাবাহিক অবনতি।
তুরস্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেই ধর্মযাজক তুরস্কের ক্যু ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধির সাখে জড়িত। তার সাথে সম্পর্ক রয়েছে পিকেকের বড় বড় নেতাদের। অবশ্য আমেরিকার এই ধর্মযাজককে বাহানা হিসেবেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তুরস্ক ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় একমত নয় শুরু থেকেই। তারা ইরান থেকে তেল আমদানি স্বাভাবিক রেখেছে। সবমিলে, রাশিয়া ও ইরানের ওপর অারোপিত অর্থনৈতিক নানা নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় এবার যোগ হচ্ছে তুরস্ক।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ঘটনায় জনগণকে শঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছেন এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তুরস্ক প্রস্তুত বলে নিজের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এদিকে অধিকাংশ বিরোধী দল এই ঘটনায় সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থার উন্নতির জন্য তুরস্ককে আমদানি ও বিনিয়োগ নির্ভর অর্থনীতি থেকে বের হয়ে উৎপাদন ও রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি মনযোগ দিতে হবে।