শাসকরা শহিদুল আলমের মতো লোকদের ভয় পায় কেন?

শাসকরা শহিদুল আলমের মতো লোকদের ভয় পায় কেন?

গত ৬ আগস্ট, জনপ্রিয় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে তার রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। চলমান ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন নিয়ে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারের এক ঘন্টা পরেই শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে বিতর্কিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বুধবার ব্রিটিশ মানবাধিকার কর্মী ডেভিড বার্গম্যান ভারতীয় দৈনিক ‘দ্য ওয়ার’এ লেখা ‘হোয়াই দ্যা বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ইজ স্ক্যার্ড অফ শহিদুল আলম’ শিরোনামের কলামে উল্লেখ করেছেন কেন বাংলাদেশ সরকার শহিদুল আলমকে আটক করেছে। তিনি ওই লেখায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, গত একমাসের মধ্যে একশ’রও বেশি নাগরিককে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছে দুইশ’র বেশি মানুষ। অতি সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকেরা সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠণের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন।

বার্গম্যান তার লেখায় শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে শহিদুলের মতো মুক্তচিন্তক, স্পষ্টভাষী লোকদের এই সরকার ভয় পায়। এবং এধরণের অন্যান্য ব্যক্তি যারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখেন তাদেরকে সতর্ক করতে শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বার্গম্যান পুলিশের সমালোচনা করে বলেছেন, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে ৫৭ ধারায় এই অভিযোগে যে তিনি আন্দোলনকারীদের ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হতে। কত সহজে পুলিশ ‘সত্য, স্বচ্ছতা এবং শুভবোধ’কে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও উস্কানি’ বানিয়ে ফেলেছে।

ডেভিড বার্গম্যান উস্কানির প্রসঙ্গ ধরে উল্লেখ করেছেন যে, শহিদুল সেদিন আল জাজিরাকে কি বলেছিলেন। শহিদুল আলম প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এর আগে কোটা আন্দোলনের সময় চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরে তা পূরণ করেন নি। তাই এবার ছাত্ররা তার কথায় বিশ্বাস করতে পারছে না। তিনি ‘প্রধানমন্ত্রীর কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই ’ বলেও মন্তব্য করেন।

এছাড়া ওই সাক্ষাৎকারে শহিদুল আলম নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ও পুলিশের আক্রমনের নিন্দা জানান। আর তাতেই আটক করা হয় তাকে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হওয়ায় শহিদুল আলমের গ্রেফতারের খবর বৈশ্বিক মিডিয়া ফলাও করে প্রকাশ করেছে এবং সেই সাথে তার মুক্তির দাবিও জানিয়েছে তারা।

এধরণের ব্যক্তিত্বকে যে কোন কর্তৃত্ববাদী সরকারই ভয় পায়। আর শহিদুল আলমকে দেখে অন্যরা যেন ভীত হয়ে ওঠে তাই মাত্রাতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের চেষ্টা চলছে। মূলত, বিশ্ব গণমাধ্যমকে বাংলাদেশের চলতি রাজনৈতিক সংকট জানিয়ে দেয়া এবং সরকারের সরাসরি সমালোচনার জন্যই শহিদুল আলমের মতো লোকদের শাসকরা ভয় পায়।