অসাধারণ টাইগার্স, অসাধারণ

অসাধারণ টাইগার্স, অসাধারণ

৩.৪ ওভার। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি
টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন লিটন, আউট হয়েছেন ৬১ করে
ডি/এল মেথডে বাংলাদেশ ১৯ রানে জয়ী
টি-টোয়েন্টিতে উইন্ডিজের বিপক্ষে এটাই প্রথম সিরিজ জয়
 ম্যাচসেরা : লিটন দাশ
 সিরিজসেরা : সাকিব আল হাসান

দ্বিতীয় ম্যাচের পরেও বাংলাদেশ সিরিজ জিতবে এমনটা কেউ বললে তাকে পাগল ঠাওরানো ভুল হতো না। টেস্টের বিভীষিকা শেষে ওয়ান ডে সিরিজ জিতলেও সেটি অস্বাভাবিক ঠেকেনি, কারণ ওয়ান ডে তে বাংলাদেশ ভালো দল। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে? না, এটা ভাবনারও অতীত। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টির একাধিকবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এবং এটিই তাদের প্রিয় ফরম্যাট। অপর দিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে হতশ্রী হালত এই ফরম্যাটেই। এটাকে ডেভিড বনাম গোয়ালিয়াথের লড়াই বললেও ভুল হতো না। সেখানে ফেভারিটকে পরাজিত করে অসাধারণ এক জয় দিয়েই সিরিজ এবং সফর সমাপ্ত করল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ইনিংসটাকে সহজেই দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে তামিম-লিটন জুটি পর্যন্ত এবং পরের অংশটি হচ্ছে তাদের বিদায়ের পর থেকে ইনিংস শেষ হবার আগ পর্যন্ত। ম্যাচের প্রথম বলেই বদ্রিকে বাউন্ডারি ছাড়া করে লিটন যেন ঝড়ের একটি পুর্বাভাস দিয়েছিলেন। সেই পূর্বাভাসকে পূর্ণতায় রুপ দেয়ার কাজটি তিনি যেভাবে করেছেন তা অনেকদিন মনে থাকবে ক্রিকেট রোমান্টিকদের মনে। ব্যাকরণ মেনে, ব্যাকরণকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খেলেছেন চোখ ধাঁধাঁনো সব শট। অপর প্রান্তে তামিম স্বপ্রতিভ থাকলেও লিটনের আলোয় ম্লান দেখাচ্ছিল তাকে। তামিমের বিদায়ে ভাঙে ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি। ফিরে যাওয়ার আগে ১৩ বলে ২১ করেন তিনি। তামিমের পর মাঠে নামেন ‘সম্প্রীতি কোটা’য় সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার। বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর নির্দয় হন, তখন সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে তাদের মারা তো দুর, নিজের উইকেটটি অবলীলায় উপহার দিয়ে আসেন তিনি। আফসোস, অন্যান্য দেশেও এমন উদারমনা আদমি দ্বিতীয়টি নেই। থাকলে আমাদের বোলারদেরও মুখে একটু হাঁসি ফুটত। সৌম্যের পর মুশফিক-লিটনও দ্রুত ফিরে গেলে ইনিংস টেনে নেয়ার ভার পরে সাকিব-মাহমুদুল্লাহর ওপর। ব্যাথানাশক ইঞ্জেকশন নিয়ে মাঠে নামা সাকিব সাধ্যের সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করেছেন। নিজের দিক না ভেবে দলের রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ফিরে যাওয়ার আগে করেছেন ২২ বলে ২৪ রান। ইনিংসের বাকি কাজটা করেছেন যথারীতি মাহমুদুল্লাহ। মূলত তার ২০ বলে ৩২ এর ওপর ভর করেই ১৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর করে বাংলাদেশ। স্কোর হিসাবে ১৮৪ খারাপ না, তবে লিটন-তামিম যে শুরুটা এনে দিয়েছিলেন তাতে ২০০+ স্কোর ছিল সময়ের দাবি। একজন পাওয়ার হিটারের জন্যে যে হাপিত্যেশ সেটিই যেন আরো একবার দেখা গেল এ ম্যাচে। নতুবা যেমন শুরু ছিল তারপর ১৮৪ কে কম বলেই মনে হচ্ছে। সুখের বিষয় এই যে, সিরিজে প্রথমবারের মত কোনো তরুণ পুরো আলোটা নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন।

১৮৪ তাড়া করতে নেমে যেমন শুরু দরকার ঠিক সে শুরুটা করতে পারেনি উইন্ডিজ ওপেনাররা। বলা ভাল করতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। তাই, রানের গতি বাড়াতে গিয়ে দ্রুতই ফিরে যান ফ্লেচার। মোস্তাফিজের সাজানো প্লটে নাজমুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৬ রানেই ফিরে যান তিনি। এরপরের উইকেটটি যিনি নিয়েছেন সেটি অবশ্য কেউই প্রত্যাশা করেননি। আঘাত পেয়ে নাজমুল মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় ওভারটি শেষ করতে আসেন সৌম্য। এসেই নিজের তৃতীয় বলে তুলে নেন ওয়ালটনকে। এরপরের গল্পটা শুধু উইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার। যেই  একটু সেট হয়েছেন, তিনিই ফিরে গিয়েছেন দ্রুততার সাথে। তবু, বাংলাদেশ ঠিক স্বস্তিতে ছিল না। কারন, গলার কাটা হয়ে তখনো ক্রিজে আন্দ্রে রাসেল। এবং সেটি সম্পুর্ণ নিজস্ব ভঙ্গিমাতেই। একটি চারের বিপরীতে ছয়টি ছয় মেরে যখন বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নটিকে ক্রমশ পরিণত করছেন প্রহসনে তখনই মোস্তাফিজের লো ফুলটসে টাইমিংয়ে গড়বড়। আরিফুলের হাতে ধরা পরে থামে ২১ বলে ৪৭ রানের টর্নেডোটি। রাসেলের বিদায়ের বেদনা বোধ হয় প্রকৃতিরও সহ্য হয়নি। তাই তার বিদায়ের সাথে সাথেই নামে ঝুম বৃষ্টি। এ ম্যাচে অধিনায়ক সাকিবও মুগ্ধ করেছেল। বোলিং চেঞ্জ থেকে শুরু করে ফিল্ড প্লেসিং ছিল চমৎকার। বিশেষ করে রাসেলের দানবীয় রুপের সামনেও কুঁকড়ে না গিয়ে যেভাবে লড়াই চালালেন সেটি ছিল দেখার মতো।

আকাশ মুখ ভার করে রাখলেও তাতে সামান্য ভাটা পড়েনি বাংলাদেশের উৎসবে। দুঃস্বপ্নের টেস্ট সিরিজের পর যখন আর কি কি লজ্জা অপেক্ষা করে রয়েছে সে গবেষণায় ব্যস্ত ছিল বিশ্লেষকরা সেখানে মাশরাফি-সাকিব ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি জিতে পুরোই বদলে দিলেন দৃশ্যপট।