নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলার প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগ, মিরপুর, ফার্মগেট, জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, বনানন, উত্তরাসহ বেশ কিছু ্এলাকায় রাস্তায় নেমে এসেছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় ধানমন্ডির জিগাতলায় ট্রাফিক কন্ট্রোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর একযোগে অতর্কিত হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। দফায় দফায় হামলা চালানো হয়, এ সময় পুলিশ ও সাথে হেলমেটপরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়।
এই হামলার প্রতিবাদে গতরাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। ক্ষোভ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে সরকার ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়, ২৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট।
আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে শাহবাগে জড়ো হতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা জড়ো হতে থাকে। ঢাবির বিভিন্ন বিভাগ থেকে উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই হামলার প্রতিবাদে অংশ নেয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শাহবাগ, মিরপুর, ফার্মগেট, জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, বনানন, উত্তরায় বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছে।
রোববার দুপুরে মিরপুর-২ নম্বর থেকে প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী একটি মিছিল নিয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় যান। এ সময় ৬০-৭০টি মোটরসাইকেলে করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের পেছনে পেছনে যান। পরে গোলচত্বর এলাকায় শিক্ষার্থীদের ঘেরাও করে তাদের মিরপুর-২ এর দিকে ফেরত পাঠানো হয়।
বর্তমানে শিক্ষার্থীরা মিরপুর সুইমিংপুল এলাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের প্রায় তিনশ নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছেন। এ ছাড়া রাস্তার দুই পাশে তাদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। ওই এলাকায় সাংবাদিকদের ছবি তুলতেও বাধা দেয়া হচ্ছে।
শাহবাগ মোড়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ঝিগাতলায় ছাত্রলীগের হামলার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিকে যান।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরি-এলিফ্যান্ট রোড-মৎস্য ভবন-বাংলামোটর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
ঢাকা সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহম্মদ কলেজসহ বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও ফার্মগেট বনানীতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন সেখানকার কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে।
ফার্মগেট এলাকায় স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে সেখানকার ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের বিপুল পরিমাণ ছাত্রছাত্রী এতে অংশ নেওয়ার জন্য মিছিল নিয়ে রওনা দিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তারা নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ, ছাত্রলীগের হামলার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে লাগাতার ছাত্র আন্দোলনের সপ্তম দিনে শনিবার দুপুরে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন বেশ কয়েকজন।
নিহতরা হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় বাস চলাচল একেবারেই কমে যায়। এমনকি আন্তঃজেলা বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।