দুনিয়াজোড়া উদ্ভট সব জিনিসের প্রতি মানুষের যত ঝোঁক। ক্রীড়াঙ্গনও তার ব্যতিক্রম হবে কেন? প্রচলিত ক্রিকেট, ফুটবলের বাইরেও খেলার অভাব নেই দুনিয়ায়। কেউ কেউ আবার কয়েক কাঠি সরেস। একাধিক জনপ্রিয় খেলাকে একসুতোয় বেঁধে তৈরি করেন আরেক খেলা। আমাদের চেনাজানা অনেক খেলা যেগুলোর একেবারে ভিন্ন সংস্করণও আছে। তেমন কিছু খেলা, আদতে খেলাও নয়; সেসব নিয়ে এই লেখা।
★ ওয়াইফ ক্যারিং
বিয়ের পর ত্যক্তবিরক্ত হয়ে বহু স্বামী হরহামেশাই বলেন, ‘একটা জঞ্জাল পিঠে নিয়ে চলছি’। অথচ ফিনল্যান্ডের সনকাজারভি এলাকায় আক্ষরিক অর্থে বউকে পিঠে নেওয়া মানে জঞ্জাল নয়, সাক্ষাৎ লক্ষ্মী! অভিনব এক প্রতিযোগিতা হয় সেখানে। বউকে পিঠে নিয়ে দৌঁড় প্রতিযোগিতা! অদ্ভুতুড়ে এই খেলার প্রাইজমানি দেবার পদ্ধতিও অদ্ভুত। বিজয়ীকে দেয়া হবে স্ত্রীর শারীরিক ওজনের সমান বিয়ার এবং ওজনের পাঁচগুণ নগদ অর্থ!
★ চেজ বক্সিং
ভাবছেন দাবা আর বক্সিং একত্রে কিভাবে সম্ভব? দাবা যেখানে বুদ্ধির খেলা, বক্সিং পুরোদস্তুর শরীরনির্ভর! চেজ বক্সিংটা বক্সিং রিংয়েই খেলা হয়। হল্যান্ডের শিল্পী ‘লেপে রুবিগ’ এর আবিষ্কারক। দুই প্রতিপক্ষের ১১ রাউন্ডের লড়াইয়ে দাবার খোপে ছয়, মুষ্টিযুদ্ধ হয় পাঁচ রাউন্ডে। বক্সিংয়ের প্রতি বিরতিতে চার মিনিট আর শুরু শেষের আগে পরে চলে দাবাবাজি।
★ এক্সট্রিম আয়রনিং
একে কেবল খেলা নয়, কলাও বলা যায়। চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, আপনি কাপড় ইস্ত্রি করছেন। কী ভাসছে চোখের সামনে? ঘরের মধ্যে টেবিলের উপর কাপড় রেখে তার উপর কাজ সারছেন, স্বাভাবিক দৃশ্য। তবে, এক্সট্রিম আয়রনিং পাল্টে দেবে আপনার ধারণাকে। পানির নিচে, গুহার অভ্যন্তরে, পাহাড়ের পাদদেশ, ঝর্ণাসহ নানান দুর্গম জায়গায় কেউ একজনকে দেখা যাচ্ছে লন্ড্রি করছেন। এটি একধরণের শারীরিক কলাই বটে। তবে চূড়ান্ত সাহসী না হলে এমন খেলায় অংশ নেওয়া কঠিন।
★ ডিম নিক্ষেপণ
পঁচা ডিম ছুঁড়ে মারার কেচ্ছা সবাই জানি। চাটুকার নেতার চাটুকারি ভাষণে ক্ষিপ্ত হয়ে জনগণ পঁচা ডিম ছোঁড়ে, বাকযুদ্ধে হঠাৎই হাতের কাছে থাকা ডিম বন্ধুর মুখে ছুঁড়ে মারতে দেরি হয় না আরেক বন্ধুর। ওসবে বাঁধা নিষেধ থাকে। কিন্তু ইংল্যান্ডের লিঙ্কাশায়ারের সোয়াটন গ্রামে প্রতিবছর ঘটা করে আয়োজিত হয় ডিম ছোঁড়ার উৎসব যেখানে কোন ভয় ছাড়াই বিন্দাস ডিম ফাটাতে পারবেন। মজার বিষয় হচ্ছে, স্বীকৃত খেলাগুলির মতো ‘এগ থ্রোয়িং’ গেমসেরও রয়েছে এমনকি আলাদা ফেডারেশন!
★ চিজ রোলিং
যুক্তরাজ্যের গ্লস্টারশায়ারের কুপার্স পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলাটি। একটি পনিরের রোলকে পাহাড় থেকে নিচে ফেলা হয়, তারপর একে অনুসরণ করে প্রতিযোগিদের দৌঁড়ঝাপ চলে। ঢালু পাহাড়ের উপর থেকে ১০০ মিটার ডিগবাজি খেয়ে, উল্টেপাল্টে তবেই শেষ হয় যাত্রা। বিজয়ী পায় সেই পনিরের রোলটা। আহা চিজ বারি হ্যায় মাস্ত…
★ আন্ডারওয়াটার হকি
আইস হকি, বীচ হকির কথা তো শুনেছেন। পানির নিচে হকি নিশ্চয়ই খুব একটা শোনার কথা নয়। হকির অন্য সব সংস্করণের মতোন এটিও বেশ জনপ্রিয়। এর নিজস্ব চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় আন্ডারওয়াটার হকি চ্যাম্পিয়নশিপ। পানির নিচে দুই দল লড়ছে, যেন অক্টোপাস তার আটটি পা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই হকি খেলার বল দেখতে ক্যারমের গুটির মত, আকারে কিছুটা বড় এবং পুরু। স্টিকের আকার এবং সাইজেও আছে ভিন্নতা।
★ শিন কিকিং
হাঁটুর নিচ থেকে গোঁড়ালির আগ পর্যন্ত পায়ের মধ্যবর্তী স্থান বা শিন এর লড়াইটা বহু প্রাচীন। সতেরো শতকে ইংরেজ শাসনামলো প্রথম এই লড়াইয়ের জন্ম। পায়ের এই অংশ খড় দিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়, উদ্দেশ্য পায়ের নিরাপত্তা। এরপর দুই প্রতিযোগীর যুদ্ধ শুরু হয়। স্রেফ শরীরের ওই অংশটুকুই ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে হবে।
★ আঙুল কুস্তি
‘টো রেসলিং’। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। তবে রেসলিং বললে যেভাবে চোখে রিংয়ে ধুন্ধুমার মারামারি, ঠিক সেরকম না। এটি আদতে কুস্তিই নয়, বলা ভালো আঙ্গুল দিয়ে পাঞ্জা লড়া। পাটাতনের ওপর একজনের পায়ের দুই আঙুলের মাঝে আটকে আছে আরেকজনের বুড়ো আঙুল, শরীরের শক্তিসমগ্র পায়ের আঙ্গুলে নিয়ে দুজন ব্যস্ত শত্রুবধে। সে এক অভিনব দৃশ্য!
★ সিপাক ত্যাকরাও
যেমন অদ্ভুত নাম তেমনি অদ্ভুত খেলা সিপাক ত্যাকরাও। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জনপ্রিয় এই খেলাটি অনেকটা ভলিবল খেলার মতোন। ভিন্নতা এর নিয়মে। ভলিবল যেখানে কব্জির খেলা সেখানে ত্যাকরাওয়ে আপনি পুরো শরীর দিয়েই বল স্পর্শ করতে পারবেন, কেবল হাত ছাড়া। অন্যথায় ভলিবল ঢংয়ের কোর্ট, নেট সবকিছুতেই মিল আছে। সিপাক ত্যাকরাওয়ের বল অবশ্য ভলিবলের মতোন অত বড় আর শক্ত নয়, বেশ স্মুদ এবং মোটামুটি আতাফল সাইজের।
★ মিউজিক্যাল ক্যানিন ফ্রিস্টাইল
কুকুর আর মানুষের বন্ধুত্ব বহুদিনের। কুকুরই সবচেয়ে প্রভুভক্ত প্রাণী, সবচেয়ে বিশ্বস্ত। সেই কুকুরই মানুষের সঙ্গে মিলে দর্শকদের উপহার দিচ্ছে দারুণ পারফর্মেন্স তাও আবার মেগা স্টেজে! বিশ্বজুড়ে মিউজিক ফ্রিস্টাইল দারুণ জনপ্রিয়। সুরের ঝংকারে মোহনীয় নৃত্য, এর সঙ্গে যদি যোগ করি মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকা কুকুরকে তবে মঞ্চস্থ হয় অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের। ‘মিউজিক্যাল ক্যানিন ফ্রিস্টাইল’ যার কেতাবি নাম।