রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বরিশালে একই দলের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সিলেটে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে রয়েছেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ধারণা নিতে দেশবাসী চোখ রাখছিল সিটি নির্বাচনগুলোতে। খুলনা এবং গাজীপুরের পর আজ রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালেও ব্যাপক কারচুপি, জাল ভোট, এজেন্টদের বের করে দেয়া, কেন্দ্র দখলের মধ্য দিয়ে শেষ হল তিন সিটির নির্বাচন।
বেসরকারি ফলাফলে ১৩৮ কেন্দ্রে ৮৭ হাজার ৩৯৬ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে হারিয়ে রাজশাহীর নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বুলবুল পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট।
সিলেটে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ১৩২ কেন্দ্রে ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। এ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর দেখা গেল, আরিফুল হক জয়ের দ্বারপ্রান্তে। দুটি স্থগিত কেন্দ্রের ভোট বাদ দিলে আরিফুল হক চৌধুরী তার প্রতিদ্বন্দ্বী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে আছেন। আর স্থগিত দুটি কেন্দ্র ভোটের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৭। ওই দুটি কেন্দ্রের ফলের পরই ঘোষিত হবে সিলেটের নতুন মেয়রের নাম।
বরিশালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হচ্ছেন। তার নিকটতম বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট। তিন সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৮ লাখ ৮২ হাজার।
নির্বাচনে জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাজশাহীর নবনির্বাচিত মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মানুষ ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালনে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
বরিশাল সিটির নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, এ বিজয় জনতার বিজয়, এ বিজয় আওয়ামী লীগের উন্নয়ণের গণতন্ত্রের বিজয়।
এছাড়া সিলেটে এগিয়ে থাকা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটের ইতিহাসে এতসংখ্যক ভোট কেন্দ্র দখল, জালভোট ও বোমাবাজির পরও মানুষ ভোট কেন্দ্র ছেড়ে আসেনি। আমি সিলেটবাসীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

ভোট চলাকালে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি প্রায় সব প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তাদের বড় অংশই এ নির্বাচন বর্জন করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদে বাকি পাঁচ মেয়র প্রার্থীই নির্বাচন বর্জন করে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন। এ সিটি কর্পোরেশনে বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তীকে মারধরও করা হয়।
অপরদিকে সিলেটেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদে চারজন মেয়র প্রার্থী ভোট ও ফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। এ সিটি কর্পোরেশনে সহিংসার ঘটনা ঘটে। অনিয়ম ও জাল ভোটের ঘটনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৩৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে।
অপরদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া, জাল ভোট ও কারচুপির অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। ৩০নং ওয়ার্ডের বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে মাটিতে বসে ও বৃষ্টিতে ভিজে প্রায় ৪ ঘণ্টা অবস্থান করে প্রতিবাদ জানান তিনি। নির্বাচনের অনিয়মের প্রতিবাদ হিসেবে নিজের ভোটও দেননি বুলবুল। নির্বাচনের ফল আগাম প্রত্যাখ্যানও করেন বিএনপির এই প্রার্থী।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হল। আর এ কারণেই নির্বাচনে জয় পেতে দু’দলই মরিয়া ছিল। দল দুটির প্রচারে জাতীয় ইস্যুগুলো গুরুত্ব পেয়েছিল। সিটিগুলোর মেয়র পদে কাগজে-কলমে ১৯ জন প্রার্থীর নাম থাকলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭ জন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষ প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। তিন সিটির ৮৭ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতে তিন সিটিতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে ছিলেন। এরপরও সরকারি দলের এমন ভোট জালিয়াতিতে হতাশা দেখা দিয়েছে জনমনে।