• ৩০১; ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ
• প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে দুটি আলাদা সিরিজে একাধিক সেঞ্চুরি করলেন তামিম
• ২৮৭; ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে অতিথি দলের হয়ে এক সিরিজে সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন তামিম
• ২০০৯ সালের পর এই প্রথম এশিয়ার বাইরে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ
• এখনো হোল্ডারের অধিনায়কত্বে কোনো সিরিজ জেতেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ
• ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : তামিম ইকবাল
• ম্যান অফ দ্য সিরিজ : তামিম ইকবাল
• স্কোর : বাংলাদেশ ৩০১/৬, ৫০ ওভার (তামিম ১০৩, মাহমুদুল্লাহ ৬৭, মাশরাফি ৩৬) ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৮৩/৫, ৫০ ওভার (পাওয়েল ৭৪*, গেইল ৭৩; মাশরাফি ৬৩/২, রুবেল ৩৪/১)
এর আগে একাধিকবার সহজ জায়গা থেকে ডেথ ওভারে দুঃস্বপ্ন উপহার দেয়ায় রুবেলের ওভারটি নিয়ে একটি আতঙ্ক ছিল। কিন্তু ৪৯ম ওভারে মাত্র ছয় রান দিয়ে তিনিই এক প্রকার নিশ্চিত করে দিয়েছেন বাংলাদেশের জয়। শেষ ওভারে মোস্তাফিজ শুধু সেরেছেন আনুষ্ঠানিকতা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮ রানে হারিয়ে ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মত এশিয়ার বাইরে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি মুর্তজা। ব্যাটিংয়ে নেমে তামিমের ১০৩ এবং মাহমুদুল্লাহর ঝড়ো ৬৭ রানের ওপর ভর করে ৩০১ রান তোলে বাংলাদেশ।
জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের চাপে পথ হারায় উইন্ডিজ। গেইল ৬৬ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আশা দেখালেও তার বিদায়ের সাথে সাথেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ক্যারাবিয়ানরা। হোপ এবং পাওয়েলের দুটি হাফ সেঞ্চুরি শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে। ক্যারাবিয়ানরা থেমে যায় ২৮৩ রানে। ১৮ রানে জিতে ২-১ এ সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মন মতলব বোঝা ভার। গত ম্যাচে নয় বলের ক্যামিও খেলা এনামুল এ ম্যাচে খেলেছেন টেস্ট! ১০ রান করতে তার ৩১ বল খেলাটা পিচ সম্পর্কে আপনাকে ভিন্ন বার্তাই দেবে। সিরিজের চিত্রনাট্য মেনে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার কাজটি করেছেন তামিম-সাকিব। ২০৭, ৯৭ এর পর এ ম্যাচে দুজন যোগ করেছেন ৮১ রান। ব্যাক্তিগত ৩৭ রানে সাকিব ফিরে যাবার পর বেশিক্ষণ টেকেননি মুশফিকও। দ্রুত সময়ের মাঝে দুজনকে হারানোর ধাক্কাটা সামাল দিয়েছেন তামিম-মাহমুদুল্লাহ। সিরিজে নিজের দ্বিতীয় এবং ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরিটি তুলে নেন তামিম। সেঞ্চুরির পর হাত খুলে খেলতে গিয়ে আর বেশিদূর এগোতে পারেননি তামিম। ১০৩ রান করে ফিরে যান তিনি।

এরপরই সবাইকে চমকে দিয়ে ক্রিজে আসেন মাশরাফি। এটাকে মাস্টার স্ট্রোক নাকি তরুণদের ক্রমাগত ব্যর্থতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত সেটি হয়ত জানা যাবে না। তবে মজার বিষয় হচ্ছে ছয়ে নেমে মাশরাফি প্রাথমিক কাজটা করে দিয়েছেন ২৫ বলে ৩৬ রানের কার্যকর একটি ইনিংস খেলে। আর শেষটা করেছেন মাহমুদুল্লাহ। ৪৯ বলে পাঁচটি চার এবং তিনটি ছয়ের সাহায্যে ৬৭ রানের চোখ ধাঁধাঁনো একটি ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এ ম্যাচেও ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন সাব্বির। এবার ফিরেছেন ১২ রানে! সাব্বিরের বিদায়ের পর মাহমুদুল্লাহ মোসাদ্দেককে নিয়ে ছুঁয়েছেন তিনশ রানের ম্যাজিক ফিগার। যেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চেয়েছিল সলিড একটি স্টার্টের দিকে এগোতে। কিন্তু আগের দু ম্যাচের মত এ ম্যাচেও ব্যর্থ হয়ে দ্রুতই ফিরে যান লুইস। তাকে হারানো ধাক্কাটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ে সেভাবে লাগতে দেননি গেইল। সিরিজে প্রথমবারের মত গেইলসুলভ রুপে দেখা দিয়েছিলেন তিনি। গেইল ছন্দ ফিরে পেতে শুরু করলে তাকে ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মাশরাফি। কিন্তু মোসাদ্দেক, মাহমুদুল্লাহরা ব্যর্থ হলে মাশরাফি বল তুলে দেন রুবেলের হাতে। তিনিই ফিরিয়ে দেন এই ডেঞ্জারম্যানকে। ফেরার আগে ৬৬ বলে ৬টি চার এবং ৫টি ছয়ে ৭৩ করেন গেইল। গেইল এর আউট এর সাথে সাথেই যেন ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে উইন্ডিজ। হোপ এবং হেটমায়ার জুটি বাঁধলেও তাদের রানার তোলার গতি ছিল খুবই স্লথ। হোপ টেস্ট মেজাজে খেলে ৯৪ বলে ৬৪ করে ফিরে যান মাশরাফির বলে। ছয় নাম্বারে নেমে রোভমান পাওয়েল ৭৩ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেললেও সেটি শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে। বাংলাদেশের বোলারদের সমন্বিত পারফর্ম্যান্সের ফসলই এই জয়। বল হাতে প্রত্যেকেই ছিলেন দারুণ।
দুঃস্বপ্নের টেস্ট সিরিজ পেছনে ফেলে ওয়ান ডে সিরিজেই বাংলাদেশ সিরিজ জয়ীর ভূমিকায় হাজির হবে এমনটি বোধয় সবচেয়ে আশাবাদী মানুষটিও ভাবেননি। কিন্তু দলে যখন থাকে মাশরাফির মত একজন অধিনায়ক এবং সিনিয়ররা যখন নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দেন, তখন ভাল কিছু হতে বাধ্য। আর সে ভালটা ভালর সাধারণ সংজ্ঞাকে ছাড়িয়ে হয়ে উঠলনয় বছরের বিরতি ভাঙা সিরিজ জয়।