ছোট দলগুলোর কাছে আওয়ামী লীগ কী চাইছে

ছোট দলগুলোর কাছে আওয়ামী লীগ কী চাইছে

জাতীয় নির্বাচনের মৌসুম যত ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের তরফ থেকে ছোট দলগুলোর দিকে দৌড়ঝাঁপ ততো বাড়ছে। আর তাতেই জনমনে প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচন নিয়ে কি ধরণের পরিকল্পনা আঁটছে দলটি। লীগের ভেতর কি ধরনের শঙ্কা কাজ কারছে? দলটি ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে যে একপেশে নির্বাচনের আয়োজন করে প্রায় বিনাভোটে ক্ষমতায় বসে আছে। দেশে চলছে লুটপাট সন্ত্রাসের রাজত্ব। বিরোধী মত ও দলের উপর অকথ্য অত্যাচার। আইন ও বিচারের অবস্থার দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০১৪ সালের মতো কথিত বিরোধীদল তৈরি করার ছক এবারও কষতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ বক্তব্য বোধ হয় সত্যি হতে চলেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক দৌড়ঝাঁপে সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সকালে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে হাজির হন ওবায়দুল কাদের। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি হঠাৎ করেই।

মুখে যদিও বলেছেন বৈঠক শুধু কুশল বিনিময়ে আবদ্ধ ছিল। তখন এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন না উঠলেও এই ধারণা করা ভুল প্রমাণিত হল, যখন গতকাল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে সচিবালয়ে নিজ অফিসে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর সাথে বৈঠকে বসেছেন। একই দিনে বিকেলে বৈঠক করেন নতুন রাজনৈতিক জোট বিএনএন এর সভাপতি নাজমুল হুদার সাথেও। যদিও তাদের কেউই মিডিয়াকে এই বিষয়ে কিছু বলেননি কিন্তু এই বৈঠক পর্ব যে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে তা পরিস্কার।

কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে গঠন করেছে ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’। যেখানে সিপিবি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-মার্ক্সবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ যোগ দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ কি এই জোটকে ২০১৯ সালের নির্বাচনে হুমকি হিসেবে দেখছে নাকি এই জোটকে নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির ফায়দা নিবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে জনমনে। সিপিবির সাথে কাদেরের সাক্ষাতের পরে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কথার জন্ম হয়েছে। এখন দেখার বিষয় বাম জোট শেষমেষ কী করে।

সিপিবি’র সাথে সাক্ষাতের দু’দিন পেরোতেই ওবায়দুল কাদেরের সাথে বৈঠক করতে গেলেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচন এবং মহাজোট সম্প্রসারণের বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

কাদের সিদ্দিকীর পর বিএনএ’র সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও সাক্ষাৎ করেন। কিছুদিন আগে নাজমুল হুদা মহাজোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

তবে কি ছোট দলগুলোকে নিয়ে বিএনপিকে হিসেবের বাইরে রেখে জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে দলটি। বিএনপিকে বাদ দিয়ে অন্য সব দলকে নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ আন্তর্জাতিক মহলের সামনে হাজির করে আবারও কি ক্ষমতায় বসার কৌশল নিয়ে কাজ শুরু করেছে দলটি? এইসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।