বাংলাদেশের জয় বা ভাল কিছুর জন্য তীর্থের কাকের মত সিনিয়র ক্রিকেটারদের দিকে চেয়ে থাকা যেন অলিখিত এক নিয়মে পরিণত হয়েছে। ব্যাট হাতে তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহরা ব্যর্থ হলেই মুখ থুবড়ে পরে বাংলাদেশের ইনিংস। নতুন বলে এখনো মাশরাফির বিকল্প কেউ নেই। স্লগ ওভারেও ভরসা করতে হচ্ছে সাকিবের স্পিনে। পাঁচজনের বয়সই পেরিয়ে গিয়েছে ত্রিশের কোঠা। নতুনদের ক্রমাগত ব্যর্থতা বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেতই বটে।
ওপেনিংয়ে আসা যাওয়ার গল্প
ওপেনিংয়েই শুধু নয় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েরই অন্যতম ভরসা তামিম। যে কোন ফরম্যাটেই ওপেনিংয়ে ভাল একটি জুটি পুরো ইনিংসের ভীত গড়ে দেয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই তামিম ভুগছেন যোগ্য পার্টনারের অভাবে। সৌম্য-লিটন হয়ে এনামুলেও ভরসা খোঁজা হলেও ফলাফল শূন্য। সৌম্য দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। লিটনের টেকনিক চমৎকার হলেও ধারাবাহিকতার অভাব প্রকট। একই সাথে ইনিংস বড় করতে পারার ব্যর্থতাও চোখে পড়ার মত। এ দুজনের ব্যর্থতা দরজা খুলে দিয়েছিল এনামুলের। কিন্তু তিনি আস্থার প্রতীক তো হতে পারছেনই না, বরং তার আউট হবার ধরনও বেশ দৃষ্টিকটু। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ান ডেতেই যেভাবে আউট হলেন সেটি এ পর্যায়ের ক্রিকেটে রীতিমত পাপ। ৯ বলে ২৩ স্লগের ক্ষেত্রে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু ইনিংসের শুরুতে মাত্র নয় বলের ইনিংস কোনো মতেই কাম্য না। একই ম্যাচে মাত্র দশ ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে হেটমায়ার যে ইনিংসটি খেলেছেন সেটি দেখে বাংলাদেশের তরুণদের শেখা উচিত।
মিডল অর্ডারেও নেই ভরসা করার মত নাম
সাব্বির দীর্ঘ দিন ধরেই জাতীয় দলের অংশ। মোসাদ্দেকও দেখতে দেখতে খেলে ফেলেছেন বেশ কটি ম্যাচ। কিন্তু দুজনের কেউই এখনো পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ঠিক মত খেলতে পারছেন না। সাব্বিরকে দিয়ে তিন নাম্বারে চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানেও বলার মত কিছু তিনি করতে পারেননি। নীচে নেমেও যে নিয়মিত ঝড় তুলছেন তাও না। ওয়ান ডে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যে জায়গায় ব্যাট করছেন মোসাদ্দেক তাতে কিছু ক্যামিও স্বাভাবিক প্রত্যাশা। মোসাদ্দেক এখন পর্যন্ত বলের চেয়ে রান বেশি করতে পেরেছেন মাত্র দুটি ওয়ান ডে তেই! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ঝড় তুলতে হয়েছে মুশফিককেই। দেখা যাচ্ছে সিনিয়রদেরই নিজেদের খেলার ধরণ বদলে বারবার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। কি টপ-অর্ডার কি মিডল-অর্ডার কোনো জায়গাতেই তরুণরা ভরসা জোগাতে পারছেন না। দ্বিতীয় ম্যাচটিতে জয় ছাড়া অন্য কোনো ভাবনা যখন মাথায়ও আসছিল না কারো তখনই নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন সাব্বির। চার বলে মাত্র তিন করে মোসাদ্দেকও হতাশ করেছেন সবাইকে। প্রায় পুরোটা কাজই সিনিয়রার করে দেয়ার পর সহজ ফিনিশিংটুকোও দিতে পারেননি দুজনের কেউই।
নতুন বলে পেসার সংকট
মোস্তাফিজ এবং রুবেল উইন্ডিজ সিরিজে খেললেও দুজনের কেউই নতুন বলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। নতুন বলে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেয়ার মত বোলার এখনো সেই মাশরাফিই। নতুন নিয়মে দুপাশ থেকেই নতুন বলে খেলা হওয়ায় পেসারদের বেশ ভাল সুযোগ রয়েছে বলের সাইন কাজে লাগিয়ে ব্যাটসম্যানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার। কিন্তু মাশরাফির পাশে কেউ না থাকায় বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে স্পিনারদের। মাশরাফির ক্যারিয়ারও প্রায় শেষের দিকে। এখনো মাশরাফির বিকল্প তো দুর নতুন বলে বোলিংয়ে অভ্যস্ত কাউকে পাওয়াটাই রীতিমত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। একই সাথে এই বিষয়টি ভাবনার এই জন্য যে, সামনের বিশ্বকাপটি হবে ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে পেসারদের বদলে যদি শুরুতেই স্পিনারদের ওপর ভরসা করা লাগে সেটি হবে চরম হতাশার।
এক সাকিবের বদলে দুজন!
নিঃসন্দেহে নিকট অতীতে বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ সাকিব আল হাসান। ব্যাট-বল দু হাতেই বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফরমার তিনি। ইনজুরি বা অন্য কোনো কারণে সাকিব যদি একটি ম্যাচও মিস করে তাহলে সেই ঘাটতি পোষাতে রীতিমত গদলঘর্ম হতে হয় বাংলাদেশ দলের। এক সাকিবের বদলি হিসাবে তিনজন স্পিনার নেয়ার ঘটনাও দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। হ্যা, হুবহু সাকিব মানের আরো একজন পাওয়া খুব সহজ কিছু না, কিন্তু অন্তত কাজ চালাতে সক্ষমও কারো না থাকাটা ভাল বার্তা নয়। এটি আরো বেশি মনোযোগের দাবি রাখে কারণ বোর্ড সভাপতির কথা সত্য হলে সাদা পোষাকে সাকিবকে খুব বেশি দিন দেখা যাবে না। টেস্টে এমনিতেই বাংলাদেশ খর্ব শক্তির একটি দল। সেখানে সাকিবের শূন্যতা হবে বিভীষিকার মত। সেটি পূরণের মত কাউকে এত দিনেও না পাওয়াটা হতাশার। অথচ, মেহেদীর বয়স ভিত্তিক দলে যে পারফরম্যান্স ছিল তাতে যত্ন নিয়ে তাকে সাকিব মানের না হোক কাজ চালানোর মত একজনে পরিণত করা সম্ভব। এখনো এ দিকটায় খুব একটা নজর দিতে দেখা যাচ্ছে না কাউকে।
গায়ানাতেই গেইল-লুইসদের ব্যর্থতার পরেও হেটমেয়ারের ইনিংসটি যেখানে সুন্দর একটি আগামীর স্বপ্ন দেখাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেখানে এ ইনিংসটি কাছ থেকে দেখার পরেও এনামুল যেভাবে আউট হয়েছেন সেটি বেশ আশঙ্কা জাগানিয়াই। একটি ম্যাচ দিয়েই বিচার করা হচ্ছে না কাউকে, নিকট অতীত মাথায় রেখেই শঙ্কা প্রকাশ করছি। বিদেশিদের কাছ থেকে যদি শিখতে অহমে লাগে হাতে কাছে তামিম-সাকিবরাই তো রয়েছেন। প্রথম ওয়ান ডেতেই দেখিয়েছেন সময়ের সাথে কতটা পরিণত হয়েছেন তারা।