ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলে পাক-ভারত সম্পর্ক কেমন হবে?

হামজা আমির’র কলাম

ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলে পাক-ভারত সম্পর্ক কেমন হবে?

২০১৮ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের অগ্রগতি চিহ্নিত হয়েছে নেতৃত্বস্থানীয় রাজনীতিবিদদের বিতর্ক, সহিংসতা ও দোষারোপের মধ্যে। যা নির্বাচনী প্রচারণায় দলগুলোকে সমান্তরাল কোন ক্ষেত্র দেয়নি।

সেখানে অভিযোগ রয়েছে যে নির্বাচনী মধ্যস্থতায় সেনা মোতায়েন তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা ইমরান খানের পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছে।

যখন সব দলেরই তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী ইশতেহার আছে, নির্বাচনী পদযাত্রাগুলো একে অপরকে দোষারোপ ও গালাগালির দিকে আনতে হয়েছে, উদ্দেশ্য বিরোধী দলকে উপহাস করা এই জন্য যে তারা দেশের জনগণের সাথে ‘দুর্নীতি ও অসৎ’ আচরণ করেছে।

ইমরান খান যিনি দেশব্যাপি তার নির্বাচনী প্রচারণা সম্প্রসারিত করেছিলেন, তার বক্তব্যের অধিকাংশই ছিল নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লীগকে (পিএলএম-এন) এবং শরীফ পরিবারকে আক্রমণ করে।
পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট নওয়াজ শরিফের ভাই শেহবাজ শরীফ প্রতিক্রিয়া হিসেবে একই স্বাক্ষর রেখেছেন, তিনি ইমরান খানকে টার্গেট করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন কিভাবে পিটিআই খাইবার পাখতুন অঞ্চলের শাসন বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

যদিও ইমরান খানকে দেশটির নেতৃত্বস্থানীয় মনে করা হয় এবং তিনি দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রত্যাশা করেন। কিন্তু এটা অনুমান করা কঠিন যে তিনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে কি ধরণের প্রভাব ফেলবেন, বিশেষ করে যখন তিনি নওয়াজ শরীফের পরিবারকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক এজেন্ডা’র প্রতিনিধি বলে অভিযোগ করেছেন। ইমরান খান নওয়াজ শরীফকে ‘আন্তর্জাতিক এজেন্ডার এজেন্ট হওয়া’র আক্রমণ করেছেন, পাকিস্তানকে উপহাস এবং তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে।

যাইহোক, পিটিআই প্রধান তার নির্বাচনী প্রচার সমাবেশের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতীয় মিডিয়াকে উপেক্ষা করেছেন, এবং সেটা না হয় উল্লেখ নাই করলাম, কিভাবে তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নিন্দা করেছেন। আসন্ন নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সৈন্য সংরক্ষণের বিষয়ে কথা বলায়। তিনি এটিকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

যদি মতামত জরিপগুলো বিশ্বাস করা হয়, ইমরান খান পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। এছাড়াও জনপ্রিয় ধারণা এই যে, দেশটির শক্তিশালী সামরিক প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে ইমরান খানকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে। এটি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে ভারতের সাথে কৌশলগত সম্পর্কে একটা বড় প্রভাব ফেলবে।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইমরান খান পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের সাথে সম্পর্ক আরও কাঠখোট্টা হবে। প্রাথমিক ভাবে তিনি নওয়াজ শরীফকে সমর্থন এবং পাকিস্তানের প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ভারতকে অভিযুক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে, ইমরান খান নিজেই সামরিক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশানুযায়ী কথা এগোবেন যার মানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের কোন উন্নতি হবে না। তাছাড়া, পিটিআই প্রধান ইতোমধ্যে তার অভিযোগ নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনার অনেক দরজা এবং নতুন পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।

পাকিস্তান-ভারত-আফগানিস্তান

পাকিস্তান আশা করে চীনের সাথে পাকিস্তানের সু-সম্পর্ক চলমান থাকবে, সেটা ইমরান খান ক্ষমতায় আসলেও; কেননা চীনের অধিকাংশ বিনিয়োগ এবং অর্থ পাকিস্তানে আসে সামরিক প্রতিষ্ঠানের শক্ত করিডোরের মাধ্যমে। রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতিতে এর অনুপ্রবেশ ঘটায়, দেখা গেছে- কয়েক বছর ধরে সামরিক প্রতিষ্ঠান রাজ্যগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কেরও কোন পরিবর্তন হবে না বলে আশা করা যায়, সম্প্রতি ইসলামাবাদ কাবুলের সাথে শান্তি চুক্তি নবায়নের জোর দেয়ার ব্যাপারটা ছাড়া।

অতীতে অনেকেই বলেছিলেন, পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক ভারত নীতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। কাবুলের শত্রুদের মধ্যে আটকে থাকা থেকে বিরত থাকা পাকিস্তানের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়।

 


লেখাটি ২৪ জুলাই ২০১৮ ভারতীয় মতামত পোর্টাল ডেইলি ও’তে প্রকাশিত হয়েছে। লেখক হামজা আমির ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়া টুডে’র ইসলামাবাদ প্রতিনিধি। জবানের পাঠকদের জন্য লেখাটি অনুবাদ করেছেন তুহিন মোহাম্মদ।