যৌনতা এমনি এমনিই দেখানো হয়নি : স্যাক্রেড গেমস নিয়ে ছোটে নওয়াব

যৌনতা এমনি এমনিই দেখানো হয়নি : স্যাক্রেড গেমস নিয়ে ছোটে নওয়াব

জুলাইয়ের ৬ তারিখ মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার ওয়েব সিরিজ ‘স্যাক্রেড গেমস’। মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই অনেক হাইপ তুলে রাখা এই ওয়েব সিরিজ এতদিন পরেও দর্শকের মুখে মুখে। জনপ্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে সাইফ আলী খান ও নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি ছাড়াও ক্যামেরার পিছনে ছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ এবং ভিক্রমাদিত্য মোতওয়ানির ফ্যান্টম প্রোডাকশন হাউজ। ওয়েব সিরিজটি বানানো হয়েছে ভিক্রম চন্দ্রের ২০০৬ সালের একই নামের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে। এর মাধ্যমেই সাইফ আলী খান, নওয়াজ উদ্দিন, অনুরাগ কাশ্যপের বড় পর্দা থেকে ডিজিটাল ওয়েব সিরিজে অভিষেক হয়েছে।

বলিউডের প্রথম সুপারস্টার হিসেবে সাইফ আলী খান নেটফ্লিক্সের সাথে কাজ করলেন। ওয়েব সিরিজে প্রথম অভিনয় করলেও সব সময়ই ওয়েব সিরিজ দেখতেন তিনি। তার প্রিয় ওয়েব সিরিজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নারকোস, স্ট্র্যাঞ্জার থিংস। স্যাক্রেড গেমস-এ মুম্বাইয়ের একজন আদর্শ ছোট পুলিশ অফিসার কিভাবে গ্যাংস্টার গাইতোন্ডের মাধ্যমে হঠাৎ আলোতে চলে আসে, তা বাস্তব চিত্রায়ণ করা হয়েছে, সেই চরিত্রে অভিনয় করে ছোটে নওয়াব নজর কেড়েছেন সকলের। স্ক্রল ডট ইনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেন তার অভিজ্ঞতা এবং এই অভিযানে তার সহযোদ্ধা পুলিশ কনস্টেবল কাটেকারকে নিয়ে। সাক্ষাৎকারটি জবানের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন দেওয়ান মারুফ শুভ

‘স্যাক্রেড গেমস’ দেশে বিদেশে অনেক প্রশংসিত হচ্ছে। কেমন লাগছে?

খান : আমি খুবই আনন্দিত যে ভারত থেকে মুক্তি পাওয়া একটা ওয়েব সিরিজ পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে এবং সেটিকে অন্যান্য ওয়েব সিরিজের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। তাছাড়া ভারত থেকে মুক্তি পাওয়া সিনেমা, সিরিজ এইসব অনেক সমালোচকরাই আলোচনা করেন না। কিন্ত নেটফ্লিক্সের ‘স্যাক্রেড গেমস’ নিয়ে সবাই কথা বলছে। এমন একটা ওয়েব সিরিজের অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত।

আমাদের পরিকল্পনা ছিল এমন কিছু করা যা সচরাচর আমাদের দেশে হয়না। গতানুগতিক ধারার অভিনয়ের বাইরে গিয়ে, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।

একজন বলিউড সুপারস্টার হিসেবে ওয়েব সিরিজে কাজ করার আগে শঙ্কিত ছিলেন?

খান : না তেমন কোন আশঙ্কা ছিলনা। বর্তমান সময়ের কথা বললে, বিনোদনের জগতে নেটফ্লিক্স বড় নাম। নেটফ্লিক্স সবসময়ই তাদের কাজ নিয়ে সিরিয়াস। ফ্যান্টম প্রোডাকশন হাউজ তাদের সেরা পরিচালকদের দিয়ে কাজ করিয়েছে, কাস্টিং ছিল ভালো এবং টেকনিশিয়ানরা ছিল অভিজ্ঞ।

তো যদি কোন চিন্তার বিষয় থাকতো তাহলে সেটা হচ্ছে ভারতীয় গতানুগতিক অভিনয়। এখানে অভিনেতা, অভিনেত্রীরা আন্তর্জাতিক মানের অভিনয় দিতে পারবে কিনা এটা ছিল একটা চিন্তার বিষয়। কারণ বলিউডে কাজ করতে করতে আমরা একটা নির্দিষ্ট অভিনয়ের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাই। মাঝে মাঝে ভিক্রমাদিত্য মোতওয়ানি আমাকে ডেকে বলত, তুমি বেশি অভিনয় করে ফেলছ, একটু ধীরে। কারণ এবার তুমি অন্য দর্শকদের জন্য কাজ করছ।

সব মিলিয়ে বললে, এটা খুবই সন্তোষজনক ছিল। আমি সিনেমায় অভিনয় করে অভ্যস্ত। ওয়েব সিরিজ নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা নাই। তাই প্রায়ই ভয় পেতাম দর্শকেরা সব পর্ব দেখবে তো! নাকি কোন পর্ব না দেখেই টেনে চলে যাবে।

স্যাক্রেড গেমস’র দৃশ্যে নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকি

আপনার কি মনে হয় এই প্রজেক্টে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছেন? অনেক আলোচনা সমালোচনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে, অশ্লীলতা এবং যৌনতার চিত্রায়ণের জন্যে।

খান : কাজের পরিবেশ ছিল উদার এবং মুক্ত। আমরা গালাগাল বা যৌনতা এমনি এমনিই দেখাই নি। আমরা একটা গল্প বলতে চেয়েছিলাম। এবং গল্প বলার জন্য এই মাধ্যম খুবই কার্যকর। এমন অনেক গল্প রয়েছে যেগুলা বলা প্রয়োজন। যেমন মুঘলদের কথা অথবা রামায়ণ কিংবা মহাভারত। বিনোদনের জগতে এটা খুবই সৃষ্টিশীল ঘরাণা। কারণ আমরা যে ধরনের সিনেমা করে থাকি সেখানে অনেক বাঁধা ধরা নিয়ম থাকে।

এই ওয়েব সিরিজের জন্যে আপনি ওজন বাড়িয়েছেন। এবং যতই দৃশ্য এগিয়েছে শরীরী ভাষায় ততই কনফিডেন্ট লেগেছে আপনাকে। আমরা দ্বিতীয় সিজনে কি আশা করতে পারি?

খান : দ্বিতীয় সিজন, আমি মনে করি সারতাজকে আরো সক্রিয় দেখা যাবে। বইয়ে ক্ষেত্রে, যদি আপনি সারতাজের চরিত্রকে গ্রাফ আকারে দেখতে চান, তাহলে মনে হবে সে শুরু করেছে মাইনাস ১০ থেকে এবং বইয়ের শেষে বনে যায় হিরো। আপনাদের দ্বিতীয় সিজন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সারতাজকে আমি একজন জটিল মানুষ হিসেবে দেখি। তার জীবনে অনেক জটিলতা রয়েছে। আমি মনে করিনা তার হিরো হওয়া উচিৎ। কারণ এখানে সে তার সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করবে এবং তার কিছু দুর্বলতা থাকবে। তাছাড়া আমি মনে করি এই গল্পের গতি প্রয়োজন।

এই অভিযানে আপনার কমরেড, সহ অভিনেতা জিতেন্দ্র জোশির সাথে আপনার দারুন বোঝাপড়া ছিল। যেন আপনি শার্লক আর জিতেন্দ্র জোশি হচ্ছে ওয়াটসন।

খান : হ্যা আসলেই। আমি মনে করি, যখন আপনি একজন পুলিশের অভিনয় করছেন এবং আপনার পার্টনার রয়েছে, তখনই মনে হবে আপনারা শার্লক-ওয়াটসন, জনসন-বসওয়েল অথবা ডন কিশোটে-সানচো পাঞ্জা। একজন হবে একটু বেরসিক এবং আরেকজন রঙ্গিন। এটা অনেকটা বাইনোকুলারের মত। যেন দুইটা লেন্স মিলে একটা কিছু দেখাচ্ছে।

জিতেন্দ্র জোশি একজন দারুণ অভিনেতা, এবং মজার মানুষ। আমি খুবই মজা পেয়েছি তার সাথে কাজ করে। আমি মনে করি, তার অভিনয় দেখে আমি আরো কিছু শিখেছি। এটা খুবই আনন্দদায়ক ছিল।