বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে ভাটা পড়েছে সে কথা আর মানা যাচ্ছে না। অন্তত আজকের সমাবেশের পরে তো কিছুতেই না। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকে। দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও দেখা যায় নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত ছিল গণজোয়ার।
শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছিল বিএনপি। কথা ছিল, শুধু কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে পারবে। কিন্তু নেতাকর্মীদের উপচে পড়া অংশগ্রহণে আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে জনজোয়ার। বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন অঙ্গসংগঠেনের নেতকর্মীরা। এতে করে প্রশ্ন ওঠে, বিএনপি কি তাহলে মহাসমাবেশের অনুমতি পাচ্ছেনা?
বিক্ষোভ সমাবেশে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসা ও বিএনপির সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি জানানো হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ২০টি আসনও পাবে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন. “নির্বাচন করতে হলে এক নম্বর শর্ত- খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে”।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা স্বর্ণ কেলেঙ্কারি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “এ সরকার বাংলাদেশে ব্যাংক শেষ করে দিয়েছে, এখন সেখাতে রাখা স্বর্ণগুলো নাকি ধাতু হয়ে গিয়েছে।” তিনি সরকারের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্তি দিতে হবে।”
রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় বামমোর্চাকে ধন্যবাদ জানান। তাদেরকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে গণতন্ত্রকামী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ের আহ্বান জনান।
কোটা আন্দোলন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “যখন আন্দোলন তুঙ্গে তখন প্রধানমন্ত্রী রেগে সংসদে বললেন, কোনো কোটা থাকবে না। আর এখন কি করছেন, যারা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের গুম-রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের ভূমিকা পাকিস্তান আমলের ইয়াহিয়া খানের ছাত্র সংগঠনের মতো। আজ দেশে কেউ নিরাপদ নয়। কেউ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে না।

বিতর্কিত মাদকবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আগে বিএনপি ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম করা হতো। এখন নতুন নাটক শুরু হয়েছে, মাদকের নামে নিরাপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সরকার আজ দেশে একটা ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেছে। এদেশে আজ প্রতিটি মানুষ অনিরাপদ। তাদের কখন কোথায় মৃত্যু হবে কেউ জানে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এয়াড়াও বক্তব্য রাখেন রুহুল কবির রিজভীসহ গুরুকত্বপূর্ণ নেতাকর্মীরা।
ট্রাক দিয়ে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে উল্লেখিত নেতাকর্মী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সেলিনা রহমান, উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, আব্দুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম আলীমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
বিএনপি’র সমাবেশে বিস্ময়কর এই গণজোয়ার নিঃসন্দেহে নির্বাচনের আগে বিএনপি’কে উৎসাহ জোগাবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ভাবাবে। দেখার বিষয়, দলটি নির্বাচনে যাবে কিনা? গেলেও ঠিক কিভাবে যাবে?