দেশম মানেই ইতিহাস

দেশম মানেই ইতিহাস

যেই জিতুক, উঠে যাবেন ইতিহাসের পাতায়; মস্কোতে এমনই সমীকরণ সামনে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন দেশম এবং দালিচ। শিষ্যদের ওপর ভর করে শেষ হাসিটা হাসলেন দেশমই। মারিও জাগালো এবং ‘কাইজার’ ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর মাত্র তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে অধিনায়ক এবং কোচ দু’ ভূমিকাতেই বিশ্বজয়ের আনন্দে মাতলেন দেশম।

আসর শুরুর আগে থেকেই ফেভারিটদের তালিকায় ছিল ‘৯৮ এর বিশ্বজয়ী ফ্রান্সের নাম। বাকিরা না পারলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে দেশম শিষ্যরা হয়েছেন আরো ক্ষুরধার। হাজির হয়েছেন আরো ভয়ঙ্কর রুপে। নক আউটের প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্টিনা, তার পর উরুগুয়ে-বেলজিয়ামের মত দল পার হয়ে ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স। ফাইনালে আসার পথ পরিক্রমাই তাদের যোগ্যতার সাক্ষী।

পুরো আসরজুড়ে অসাধারণ নৈপুন্য দেখানো আরেক দল ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালের মত ম্যাচে যেভাবে হারালো ফ্রান্স, তাকে অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। প্রত্যেকটি ম্যাচেই দেশমকে দেখা গিয়েছে প্রতিপক্ষ অনুযায়ী কৌশল সাজাতে। এটি সত্য যে বিভিন্ন ফর্মেশনেও অনায়াসে মানিয়ে নেয়ার মত সহজাত প্রতিভাসম্পন্ন খেলোয়াড়রা দেশমের কাজটি সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু যেভাবে তিনি কৌশলগুলো কাজে লাগিয়েছেন তাতে এটাই স্পষ্ট যে দেশমের এ জয়টি নিখুঁত পরিকল্পনার ফসল।

দলের খেলোয়াড়দেরই শুধু না, অফিসিয়ালদেরও আশ্চর্য এক দক্ষতায় এক সুতোয় বাঁধতে পেরেছেন দেশম। তাই দলটিকে এক মুহুর্তের জন্য বিভ্রান্ত বা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতে দেখা যায়নি। বরং আশ্চর্য এক শান্ত সৌম্য কিন্তু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ একটি দল এটি। পগবা-গ্রিজম্যানদের মত তারকা থেকে শুরু করে এমবাপ্পে-পাভার্দ-হার্নান্দেজদের মত নতুন মুখগুলোর কাছ থেকে তাদের সেরাটাই বের করে এনেছেন ‘৯৮ এর বিশ্বকাপ জয়ী এ অধিনায়ক।

সন্দেহাতীতভাবে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সম্মানজনক একটি ক্লাবেই প্রবেশাধিকার পেয়েছেন দেশম। ইউরো জয়ের জ্বালা থেকে যে বেশ ভালো শিক্ষা তিনি নিয়েছেন তা মস্কোর নব্বই মিনিটেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাঝে অনেকেই এ আরাধ্য স্বপ্নটি পূরণের প্রচেষ্টা করেছেন; কিন্তু জাগালো এবং বেকেনবাওয়ার ছাড়া কেউই পারেননি। প্রথমবার বিশ্বজয়ের স্বাদ যেবার নিয়েছিল সেটিও ছিল ইতিহাস; ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বজয়ী দলের অধিনায়ক হবার গৌরব অর্জন করেছিলেন তিনি সেবার। আরো একবার বিশ্বকাপের মঞ্চে ফিরেই আবারো রেকর্ড বুকে!

একবার দুবার না একাধিকবার চেষ্টা করেও অনেকে যেখানে ছুঁতে পারেননি স্বপ্নের ট্রফিটি, সেখানে মাত্র দুবার অংশ নিয়ে দুবারই ইতিহাস গড়া? সুখ স্বপ্নও বোধয় এতটা বেপরোয়া হবার সাহস দেখাবে না। কিন্তু তিনি পারেন বলেই তিনি দেশম, আর দেশম এর বিশ্বকাপে দেশম মানেই নতুন ইতিহাস।