ঢাবি প্রশাসন দলকানার ভূমিকায় নেমেছে : নুরুল হক নুর

ঢাবি প্রশাসন দলকানার ভূমিকায় নেমেছে : নুরুল হক নুর

“ঢাবি প্রশাসন দলকানার ভূমিকায় নেমেছে। প্রক্টর নাকি হামলার কথা জানেন না। তারা আসলে সব জানেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ভিসিও একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আন্দোলনকারীদের মধ্যে জঙ্গি আচরণ দেখছেন বলে দাবি করেছেন। এটা আসলে দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় দেয়া বক্তব্য ছাড়া কিছুই না।” এমনটিই বলছিলেন ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর।

সোমবার নুরুল হক নুর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লাইভ ভিডিও বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এ সময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ন-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর কোটা নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ২ দিনে ২ রকম বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “তিনি এখন বলছেন আদালত অবমাননা হবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সরকারের কিছু করার নেই। তাহলে একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি এমন ঘোষণা সেদিন কীভাবে দিলেন!”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, “হাইকোর্টের একটি অবজারভেশন রয়েছে, সেটা কোন রায় নয়। এই সরকার যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা চাইলে যে কোন আইনও পরিবর্তন করতে পারেন। এবং অনেক আইন পরিবর্তন করেছেনও।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুর্বার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, কোন কোটাই থাকবে না। একটা বাদ দিলে আরেকজন দাবি করবে। অতএব সরকারি চাকরিতে কোন কোটাই থাকছে না।

৩ মাসের মাথায় গত ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে উল্টো বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোটা তাতে হাইকোর্টের রায় রয়ে গেছে। যেখানে হাইকোর্টের রায়ে আছে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তাহলে ওই কোটার বিষয়ে আমরা কীভাবে কোর্টের ওই রায় ভায়োলেট করব। সেটা তো আমরা করতে পারছি না। এই রায় অবমাননা করে তখন তো আমি কনটেম্পট অব কোর্টে পড়ে যাব। এটা তো কেউ করতেই পারবে না।

এছাড়াও সরকারের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে নুরুল হক নুর বলেন, “আমাদেরকে ২৭ এপ্রিল ন্যাম ভবনে ডাকা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল লোক দেখানো নাটক। আন্দোলনকে স্থগিত করে দিতে এসব আসলে আমাদের সাথে প্রতারণার জন্য করা হয়েছিল। আন্দোলন স্থগিতের পর আমাদের ওপর নেমে এসেছে নির্যাতনের স্টিম রোলার।”

গতকাল রবিবারের কর্মসূচিতে ঢাবিতে ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে নুর বলেন, কতিপয় সন্ত্রাসী আপনাদেরকে বলল ক্যাম্পাসে থাকা যাবে না আর আপনারা দৌড়ে পালালেন, এটা কাম্য নয়। সবাই সাহস নিয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে ওরা কিছুই করতে পারত না।

কর্মসূচিতে নিজের না আসা প্রসঙ্গে বলেন, “হাসপাতালের নিচে পুলিশ থাকায় আমি এখান থেকে বের হতে পারিনি। বের হতে চাইলে আমাকে গ্রেফতার করা হত।” এ সময় স্বতস্ফূর্তভাবে কর্মসূচিতে অংশ নেয়ায় তিনি ছাত্র-শিক্ষকদেরকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি আরো বলেন, আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। সাধারণ ছাত্রসমাজের ন্যায্য দাবি নিয়ে কোন আন্দোলন হলে তা হামলা করে দমানো যায় না। আর আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যদি এই আন্দোলনে সফল হতে না পারি তাহলে আর কখনো কেউ অধিকারের কথা বলতে পারবে না, বাক স্বাধীনতার অধিকার চাইতে পারবে না।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন শুরুর সময় হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন। তাকে সবচাইতে বেশি মারধর করা হয়। ঢাবি গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. জাভেদ নুরকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। তিনি পরে ল্যাবএইডে যান। পরে পুলিশের চাপে এই বেসরকারি হাসপাতালটিও তাকে ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হয়। এখন কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা তিনি সবাইকে জানাচ্ছেন না, তবে পুলিশি পাহারার খড়গ নামেনি তার ওপর থেকে।